খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ : চমকে দেওয়ার মতো কিছু নয়। ১৩ ম্যাচে দুটি ফিফটিসহ ২৭.৯০ গড়ে ২৭৯ রান সাদামাটা ব্যাটিংয়ের কথাই বলে। কিন্তু ব্যাটসম্যানের নামটা জানলে টি-টোয়েন্টির এই পারফরম্যান্সকেই মনে হবে উজ্জ্বল। মাহমুদউল্লাহ—বিপিএল শুরুর আগে জাতীয় দলের এই ব্যাটসম্যানও কি ভেবেছিলেন, টি-টোয়েন্টির কোনো টুর্নামেন্টে তাঁর পক্ষেও সম্ভব সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে থাকা?
সবার ওপরে কুমার সাঙ্গাকারা, পাঁচে তাঁর দেশেরই তিলকরতেœ দিলশান। মাঝে ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবালের পর মাহমুদউল্লাহ। শুধু চতুর্থ সেরা ব্যাটসম্যানই নন, এবারের বিপিএলে মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বগুণও যেন বেরিয়ে এল খোলস ছেড়ে। মাশরাফি বিন মুর্তজার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চ্যাম্পিয়ন হওয়া যেমন টুর্নামেন্টের বড় বিস্ময়, কম বিস্ময়কর নয় মাহমুদউল্লাহর বরিশাল বুলসের ফাইনালে খেলাও।
সব দিক দিয়েই বসন্ত বাতাসের প্রবাহ। ২০১৫ বিপিএল তাই মাহমুদউল্লাহকে দিচ্ছে নতুন বার্তা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ভরা মৌসুমের আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যও সেটা সুখবর বটে। বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি ‘স্পেশালিস্ট’দের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহও যে তাতে গা ভাসাবেন উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাসে! ‘এবারের বিপিএলে আমার চিন্তা ছিল শুরুটা ভালো করতে হবে। সেটাই তাহলে আমাকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। টি-টোয়েন্টিতে আগের তুলনায় এখন আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি’—কাল বলছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৩৭ ম্যাচ খেলে ১৫.২২ গড়ে মাত্র ৪১১ রান, ফিফটি একটি। বিদেশি তারকারা খেললেও বিপিএল শেষ পর্যন্ত ঘরোয়া টুর্নামেন্টই এবং আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির এই পারফরম্যান্সের সঙ্গে বিপিএলের পারম্যান্স কোনোভাবেই তুলনীয় নয়। কিন্তু বিপিএলের ব্যাটিংয়ে নিজের ভেতরের পরিবর্তনটা টের পেতে শুরু করেছেন মাহমুদউল্লাহ, ‘টি-টোয়েন্টিতে পরিস্থিতি, পিচের কন্ডিশন বোঝা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি সেভাবেই খেলার চেষ্টা করেছি। এখন যদি মনে করি প্রথম বল থেকেই মারতে হবে, আমি সেটা করতে প্রস্তুত। আবার যদি দলের প্রয়োজনে ধরে খেলতে হয় তাও পারব।’
টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ের মূল দর্শনই হলো পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করা। এটা মাহমুদউল্লাহ আগেও জানতেন। কিন্তু মাঠে গিয়ে সূত্রটা কাজে লাগাতে পারছিলেন না। বিপিএলে সেটা হাতে-কলমে করতে পারাতেই তাঁর আত্মবিশ্বাস পেয়েছে নতুন মাত্রা। মাহমুদউল্লাহর ভাষায়, ‘প্রথম কয়েকটি ম্যাচ ছাড়া বিপিএলে এবার খুব বেশি রান হয়নি। আমাকে তখন উইকেটে থাকার চেষ্টা করতে হয়েছে। বাজে বলে যেমন মারতে হয়েছে, ভালো বলেও রান বাড়ানোর চেষ্টা করতে হয়েছে। আবার ফাইনালে প্রথম বল থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলাম।’
সাকিব-তামিম ছাড়া টি-টোয়েন্টিতে খুব বড় কোনো ভরসার জায়গা বাংলাদেশ এখনো পায়নি। তারপরও যাঁদের কাছে কিছুটা হলেও প্রত্যাশা থাকে, মাহমুদউল্লাহ ছিলেন না সেই তালিকায়ও। তবে এখন থাকতে পারেন ভালোভাবেই, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫-৬-এর ব্যাটিং এক রকম, আবার ৬-৭-এ আরেক রকম। আমি এখন যেকোনো পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করার জন্য প্রস্তুত।’
তামিম ভালো একটা শুরু এনে দেবেন। মাঝে তো সাকিব-মুশফিক আছেনই। শেষ দিকে ভরসা নাসির-সাব্বির। টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং নিয়ে এত দিন বাংলাদেশ আশার মালা গেঁথেছে এভাবেই। এখন মাহমুদউল্লাহও প্রস্তুত সেই মালার ফুল হতে