Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খো12227734_1073179569368540_832829111958961364_nলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫: রাত পোহালেই ভোট, আতঙ্কে ভোটার মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা রাত পোহালেই ভোট, এখনও ভোটাররা আতঙ্কিত। তারা কি ভোট সত্যিই দিতে পারবে? বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জে বিভিন্ন পৌরসভা ঘুরে সরেজমিনে দেখলাম, ভোটারদের মুখে হাসি নেই। বিরোধী দলের প্রার্থীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ, কি হতে যাচ্ছে আর কিবা হবে এখনও কেউ বুঝতে পারছে না। কারাগারে বসেই অনেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা ভোটারদের কাছে ভোট চাইতেও সাহস পাচ্ছে না। বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনাতো ঘটছেই। আগেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ঘোষণা দিয়েছিলেন- সকাল ৯টার মধ্যেই ভোট শেষ হয়ে যাবে। কার্যতঃ সেদিকেই নির্বাচনের মোড় ঘুরে যাচ্ছে। সর্বশেষ সাংবাদিক সম্মেলনে ২০ দলীয় জোটের সকল শীর্ষ নেতাদের সাথে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আবারও সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বললেন। কিন্তু তার বক্তব্যে ২৪ ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পরও এ বিষয়ে সিইসির অবস্থান আগের জায়গাই রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বিরোধী জোটের পোস্টারটি পর্যন্ত নেই। এজেন্ট, পুলিং এজেন্টদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। তারমধ্যে দিয়েও বিজয়ের ৪৪‘র শেষ লগ্নে ৩০ ডিসেম্বর সারা বাংলাদেশে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ সংস্থাসহ দেশবাসী। এবারই প্রথম স্থানীয় পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে মুখোমুখি হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ দু’টি রাজনৈতিক দল। ভোটের ময়দানে ধানের শীষ-নৌকার লড়াই জমে উঠার আগেই নানা আশংকার মধ্যদিয়ে প্রতিটি দিন কেটে যাচ্ছে। চায়ের টেবিলে টেবিলে ভোটের ঝড় উঠলেও মানুষ আতঙ্কিত রয়েছে তারা কি সত্যি ভোটাধিকার নিশ্চিন্তে প্রয়োগ করতে পারবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনে বিব্রত ইসি। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে- ‘নির্বাচনী উত্তেজনা তুঙ্গে’, ‘সরকারী দলকে ইসির সতর্কতা’, ‘আওয়ামী লীগে ভাইরাস’, ‘পৌর নির্বাচনে জঙ্গী হামলার আশংকা’, ‘পৌর নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে প্রভাব খাটাচ্ছে পুলিশ’, ‘পৌর নির্বাচন সরকারের বড় পরীক্ষা’, ‘চাপে অসহায় ইসি’, ‘ভোটের মাঠ গরম’, ‘নির্বাচনী প্রচারে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ-৫ জেলায় হামলা, গুলি, সংঘর্ষ, ভাংচুর’ সহ নানা শিরোনাম করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যম। নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে বিভিন্নভাবে শাসকদলের হামলার শিকার হচ্ছেন ২০ দলীয় জোটের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। যশোরে ২০ দলীয় জোটের পৌর মেয়র প্রার্থী মারুফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে ভোটের দিন সকালে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স পাঠানোর দাবী করেছেন। এছাড়াও তিনি তার কর্মীদের উপর একের পর এক হামলারও অভিযোগ করেছেন। বাঘা ও হাতিয়ায় বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় প্রতিপক্ষ আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়েছে। এতে ৬ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। বারইয়ারহাটে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থীর স্ত্রী ও ভাইয়ের উপর প্রকাশ্যে শাসকদলের হামলার এবং মাইক ভাংচুরসহ আহত হয়েছে ৬। মিরসরাইয়ে হামলায় মাইক ভাংচুরসহ ৩ জন আহত হয়েছে। রূপগঞ্জ বিএনপি’র মেয়র প্রার্থীর গাড়ীর বহরে হামলা-ভাংচুর সেখানে ৭০ জন আহত হয়েছে। খুলনা, বরিশাল, রংপুরসহ বিভিন্ন বিভাগের পৌর নির্বাচনে শাসকদলের একই চিত্র। সবকিছু মিলে ভোটাররা আবারও কি ভোটবঞ্চিত হবে এমন আশংকা দেখা দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সারাদেশ ব্যাপী প্রহসনের একটি নির্বাচন জাতি দেখতে পেয়েছিল। এবারও নির্বাচন শুরু হওযার আগেই অনেক জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় কি ইঙ্গিত বহন করে? ৬ বিভাগের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথম চার বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়া গাজীপুরেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্টিত হয়েছিল। সেখানে ব্যাপকভাবে সরকারদলীয় প্রতিপক্ষ বিরোধীপক্ষের কাছে পরাজিত হয়েছিল। এরপর ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতি ভোট ডাকাতি ও প্রহসনের নির্বাচন দেখেছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তরে সিভিল এভিয়েশন কেন্দ্রে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভোট দিতে গিয়ে আ’লীগের ক্যাডার বাহিনীদের রোশানলের শিকার হই। তারা আমাকে ভোট প্রদান থেকে শুধু বঞ্চিত করেনি, বরং আমার উপর নগ্ন হামলাও চালিয়েছিল। আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিজয়ের ৪৪‘র শেষ মুহুর্তে দেশব্যাপী যে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই নির্বাচন আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন নয়তো? জাতি আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের অপেক্ষায় কি? আমি আশা করছি, আমার আশংকা ভুল প্রমাণ করে বর্তমান সরকার দেশবাসীকে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে। যে নির্বাচনে ভোটাররা নিশ্চিন্তে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়া থাকবে না। যেহেতু ইতিমধ্যে পুলিশের উপরও অভিযোগ এসেছে তারা শাসকদলের প্রার্থীদের পক্ষে নগ্নভাবে কাজ করছে। অনেক জায়গায় ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা এখনও কারাগারে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। আবার অনেক জায়গায় বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা থাকায় তারা নির্বাচনী এলাকায় পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারছে না। তারপরেও ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ভোটাররা যদি তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে তাহলে অনেক জায়গায় সরকারদলের প্রার্থীদের জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার শুধু বিব্রতবোধ আর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করলেই চলবে না। তাকে তার অবস্থান থেকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে সিদ্ধান্তের মধ্যদিয়ে নির্বাচন কমিশনারের প্রতিও মানুষের আস্থা ও শ্রদ্ধা ফিরে আসবে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনের পূর্বেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করার বিকল্প কোন পথ নেই বলেও ইতিমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের পৌর ভোটাররা তাদের আশংকার কথা জানিয়েছেন। সাধারণ ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটি সাহসী সিদ্ধান্ত জাতি গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার সুযোগ পাবে। আমরা প্রহসনের নির্বাচন চাই না, চাই ভোটারদের ভোটাধিকারের নির্বাচন। উত্তেজনার ভোট কাল। চিন্তা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নিয়ে। গোলযোগের সংখ্যা ৭০ পৌরসভার ৮০০ কেন্দ্রে। শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার অঙ্গীকার খালেদা জিয়ার। সরকারের পক্ষ থেকে শঙ্কা প্রকাশ। প্রচারের শেষ দিনেও প্রার্থীদের প্রচারণাকালে হামলা। গাড়ীতে আগুন। এরপরেও সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস নির্বাচন কমিশনের। তাহলে কি নতুন সূর্যোদয়ের সাথে জাতি আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সাথে পরিচিত হবে। সারাদেশ-বিদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে পৌর নির্বাচনের দিকে। ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার নিশ্চয়তা প্রদান করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।