Fri. Mar 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

35খোলা বাজার২৪,বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫: ভাষা কত প্রকার এমন প্রশ্ন করলেই হয়তো বলবেন বোকার মত প্রশ্ন করেছি তাই না? আধুনিক ভাষান্তর আপনার চোখ কপালে তুলে দিবে যখন আপনার বন্ধুর কোনো মেয়ে অথবা আপনার আপনজন বলবে ‘গধধ ধংশ শড়ৎষড় ঔ, শধধষ ২সর সধধ শ ঢ়য শড়ৎষবহধ শবহড়’? ভাষাটা বাংলা বর্ণমালার হলেও হরফটা ইংরাজি। কয়েক দশকে বাঙালির কাছে এই এক নব্য পণ্য। সম্প্রতি মোবাইল ফোনের দৌরাত্মে ই-মেলে, এসএমএসে, ফেসবুকে সর্বত্র নানা কিসিমের বিচিত্র বাকবিন্যাস। পড়তে গিয়ে পদে পদে বিপদে পড়ি। ‘যধঃব’ লেখা দেখে ভাবি আমি কি এতই ঘৃণ্য? বুঝতে পারি না ওটা হল ‘হাতে’। এভাবেই ক্রমাগত শিখতে থাকি ই-ভাষা।
ফেসবুকে বিচিত্র সংক্ষিপ্তকরণের ছড়াছড়ি। শুরুতে ড়.স.ম. দেখলে ভাবতাম বোধহয় লিখতে চাইছে ‘ও মাগো’, এখন বুঝেছি ওটা বিস্ময়যুক্ত ‘ও মাই গড’! সংক্ষেপে লেখার ইঁদুর মারা কল যে কী ভয়াবহ আবহ তৈরি করে, ভাবলে রোমাঞ্চ হয়। হাঁটুর বয়সী একটি মেয়ে সেদিন লিখেছে ‘আঙ্কেল, এই নিয়ে চারটে মেসেজ করলাম, বাট এখনও তুমি আমাকে রেপ করলে না’? যখন বুঝলাম ইংরাজি হরফে ‘ৎবঢ়’ হল ‘ৎবঢ়ষু’-এর সংক্ষিপ্তকরণ, তখন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। মনে মনে বললাম – মা, আমাকে বরং ‘ধহং’ করতে বোল।
কত সংক্ষেপে লেখা যায়, তার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে ই-ভাষায়। শুধু ‘ঁ’ অক্ষরটি দিলেই বুঝে নিতে হয় যে, ওটা আসলে ‘ুড়ঁ’। বাংলার কয়েকটি শব্দ ইংরাজির একটি হরফের উচ্চারণেই মিলে যায়। যেমন ঔ হল যে, ক হল কে। এই রীতিতে লিখতে থাকলে কেসটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে ভেবেছেন? একটি নমুনা পেশ করি বরং। ‘ঙ-চ-ঈ-অ-উ-ক-ঝ-ঙ’। কিছু বুঝলেন? এবার ওই ইংরাজি হরফগুলো উচ্চারণ করুন বাংলা বলছেন ভেবে, দেখুন আপনার শ্রবণে মধু বর্ষণ করে ই-ভাষা বলবে – ‘ও পিসি, এদিকে এস’।
ই-ভাষার মক্কা অধুনা ফেসবুক। রীতিমত গবেষণার অজস্র রসদ মজুত রয়েছে ফেসবুকিয়ানদের ওয়ালে। খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্মদিন বা মৃত্যুদিন এলেই হল। ছবি পোস্ট করার ধুম লেগে যাবে হৃদকমলে। পোস্টটা যদি মৃত্যুদিনের হয়, তাহলেই গেড়ো। খালি কমেন্ট আসবে ‘জওচ’। বিপ-বিপ ধ্বনির মতো এই রিপ-রিপ কী বস্তু, না বুঝলে আপনি যে ই-দুনিয়ায় আনাড়ি তা প্রমাণ হয়ে যাবে। এই রিপ হল ‘রেস্ট ইন পিস’। শান্তিতে থাকার কী অশান্তিকর প্রার্থনা প্রয়াস।
শুধু কি ভাষার জটিলতা? ফেসবুকিয়ানরা এক-একজন একেক বস্তু। কেউ লাইক বিশেষজ্ঞ। এঁরা বেশি কথা না বলে পাইকারি হারে লাইক করে যান। কারও হয়ত বাবা মরেছে, সে বেচারি কাঁদোকাঁদো ভাষায় জানিয়েছে মৃত্যুসংবাদ। ব্যস, লাইক মাস্টার সেটিও দিলেন লাইক করে। কেউ খালি গান শুনিয়ে বেড়ান। দিবস রজনী তাঁরা যেন ব্রত নিয়েছেন ‘তোমায় গান শোনাব’। শতকরা কত ভাগ যে সেগুলি শোনেন বলা শক্ত, কেননা গান দিতে না দিতেই পটাপট আসতে থাকে মতামত। এত জলদি গান শোনা অসম্ভব ব্যাপার। আসলে গান শোনার মতো অত সময় কোথায়, কিন্তু তাই বলে অমুক দাদা গান দিয়েছেন আর আমি সামান্য কান দেব না? সে তো অভদ্রতা। সুতরাং ফেসবুকের দেওয়ালে ঘুঁটে দেওয়ার মতো গান দেওয়া চলতে থাকে এবং তা শুকনোর আগেই মতামতের উনুনে গুঁজে দেওয়া হয়। ফলত যা নির্গত হয়, তা যে ধোঁয়া- এটা জেনেও গান দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য।
আর এক কিসিমের ফেসবুকিয়ান আছেন, যাঁদের বলা হয় স্ট্যাটাসটিয়ান। এঁরা পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর হেঁচকি তোলার মত স্ট্যাটাস দিতে থাকেন। এঁরা কারও উত্তর বা মতামতের ধার ধারেন না। এঁদের স্ট্যাটাসে থাকে‘বড্ড মাথা ধরেছে’, পরমুহূর্তেই ‘উফ্ কী দিল!’ কে দিলেন, কাকে দিলেন, কী দিলেন- তা কেউ জানতেও চায় না; তবু তিনি শুধু স্ট্যাটাস দিয়ে যান। সূত্র:অনলাইন
ই-রাজ্যের আর এক বাসিন্দার নাম বলা যেতে পারে ট্যাগনেশিয়ান। এঁরা সারাদিন ব্যক্তিগত ফটো পোস্ট করেন আর সেগুলো যাঁকে খুশি ট্যাগ করতে থাকেন। তিনি বুঝতেও চান না যে, তাঁর বাথরুমের জন্য কেনা নতুন মগের ছবি নিয়ে অন্যেরা কী করবে!
আর আছেন কমেন্ট মাস্টার। তিনি যেখানে পারেন, কমেন্ট দিয়ে বেড়ান। চেনা-অচেনার ধার ধারেন না। হয়তো একটি বিমূর্ত ছবি নিয়ে কথা বলছেন দুজন শিল্পী বন্ধু। কমেন্ট মাস্টার এদের ভেতরে ঢুকে বলে আসেন – ‘থ্যাঙ্ক ইউ’! কাকে থ্যাঙ্ক ইউ, কেন থ্যাঙ্ক ইউ- ওসব প্রশ্নই ই-দেশে অপ্রাসঙ্গিক।
ই-দুনিয়ায় এখনও যাঁরা পা রাখেননি, তাঁরা জানেন না কী বিচিত্র এই পৃথিবী। এখানে কারও ঘর ভাঙে, কেউ ঘর বাঁধে। এখানে তৈরি হয় নানা ধরনের গ্রুপ। সেই গ্রুপের সদস্যরা গেট টুগেদার করে, পিকনিকে যায়। দল বেঁধে যারা গেট টুগেদারে যায়, তাদেরই কেউ কেউ দলছুট হয়ে মিট করে কোনও মলে। বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়, জোড়া জোড়া নারী-পুরুষ ‘মলে মলে যোগ দিন’ স্লোগান তুলে দেখা করে। সেই ‘দেখা’ কারও কারও চোখে সর্ষেফুল দেখায়, প্রাণ এবং মান বাঁচাতে তথাকথিত ফ্রেন্ডশিপকে তারা কয়েক মাস এড়িয়ে চলে! তারপর যথারীতি গেয়ে ওঠে – ‘আনন্দ আকাশে বাতাসেৃ’।