খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫: পৌর ভোটে ধানের শীষের ভরাডুবি হলেও একে ‘রাজনৈতিক বিজয়’ মনে করছে বিএনপি। আগামী নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে তারা।
“এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিকভাবে জয়ী হয়েছি,” বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দুটি কারণ তুলে ধরেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
“আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, সে অবস্থা থেকে তারা বেরিয়ে এসে জনগণের সঙ্গে মিলিত হতে পেরেছিল, তারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পেরেছিল। সেটা একটা বড় বিজয়। আরেকটা বিজয় হচ্ছে- সরকারের যে গণবিচ্ছিন্নতা, সেটা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। তার যে ফ্যাসিবাদী প্রকৃত চেহারা, তা উন্মোচিত হয়েছে।”
এই ভোটের ফল দলের ভেতরে হতাশা সৃষ্টি করবে কি না- জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “বরং তাদের উদ্দীপ্ত করবে, উজ্জীবিত করবে যে তারা আবার সংগঠিত হতে পেরেছে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারছে।”
আগামী নির্বাচনগুলোতে বিএনপি যাবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।
“নির্বাচন হচ্ছে আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের একমাত্র ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে আমরা ক্ষমতার পরিবর্তন করতে চাই। সেটা জাতীয় নির্বাচন হোক অথবা স্থানীয় নির্বাচন হোক। সুতরাং নির্বাচনে আমাদের সবসময় যেতে হবে। আমরা সব নির্বাচনেই যাব।”
যদিও এই সংবাদ সম্মেলনেই ফখরুল বলেন, এই সরকার এবং তাদের ‘অনুগত’ এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না বলে প্রমাণিত হয়েছে।
দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটের পর সরকার হটাতে আন্দোলন চালিয়ে ব্যর্থ বিএনপি এই পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সাত বছর পর কোনো ব্যালটে ধানের শীষ প্রতীকটি স্থান করে নিয়েছিল।
ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে ঘোষিত ২২৭টির মধ্যে ২২টিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছে ১৭৭টি মেয়র পদ।
ভোট গণনায় ভরাডুবির আভাসের মধ্যে দল ও জোট নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর ভোট নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ফখরুল।
ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, “সরকার জনগণের রায়কে ছিনতাই করে এক নজিরবিহীন ত্রুটিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রহসন করেছে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছে।”
ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করায় যারা দলের পক্ষে মেয়র হয়েছেন, তারা বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী -প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়টি পরে জানা যাবে। তবে আমরা পুরো ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি।”
পৌর নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। সেক্ষেত্রে কোনো কর্মসূচি দেবে কি না, ফখরুলের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
“আমরা আজকে আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি। কর্মসূচি সম্পর্কে পরে জানতে পারবেন,” উত্তর আসে তার কাছ থেকে।
এই ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, সরকার তাদের ‘অনুগত’ নির্বাচন কমিশন, ‘দলীয়করণকৃত’ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘ব্যবহার’ করে জনগণের রায় ছিনতাই করেছে।
“স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে তাদের অংশীদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।”
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পদত্যাগও দাবি করছে বিএনপি।
দল ও জোটের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, “শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে এই নির্বাচনে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহতের পরিবার এবং আহতের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।”
একই সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিরিন সুলতানা, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামীমুর রহমান শামীম, রিয়াজউদ্দিন নসু, শায়রুল কবীর খান।