Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

53খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫: ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে সবাইকেই ‘আইন হাতে তুলে নেওয়ার বিপদ’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন একজন বিচারক; হতাশা প্রকাশ করেছেন সমাজের সুবিবেচনাবোধের অভাব নিয়ে।
এ মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তার গাফিলতিতেও উষ্মা প্রকাশ করেছেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি যে রায় দিয়েছেন, তাতে দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে; একজনকে যাবজ্জীন এবং আরও পাঁচজনের হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা।
বিচারক বলেন, “আমরা যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেই, তাহলে তো দেশ চলবে না।”
২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্র“য়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।
পেশায় স্থপতি রাজীব ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে ব্লগে লিখতেন। এ কারণেই উগ্রপন্থি উসকানিতে ওই তরুণকে হত্যা করা হয় বলে মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “সামান্য অপরাধেই যদি আমরা এক এক জনের চোখ তুলে ফেলি তাহলে দেখা যাবে ১৬ কোটি মানুষেরই চোখ নেই, অন্ধ হয়ে গেছি।”
সাম্প্রতিক একটি ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন জজ নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সদস্য ছিলেন। পরে বিষয়টি জানা যায়, সেই জজও ধরা পড়েন।
“এগুলো আসলে হচ্ছে। সবাই আদালতের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। ব্লগ লিখেছে তো কি হয়েছে? আইন কারও নিজের হাতে তুলে নেয়া উচিত নয়। পুলিশ, আইনজীবী- সবার এগিয়ে আসতে হবে এ বিষয়ে। শুধু আদালতের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। কি বলবৃআইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ক্রসফায়ার দিচ্ছে!”
রায়ে আট আসামির মধ্যে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মাকসুদুল হাসান অনিককে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
বিচারক বলেন, দীপের চাপাতির আঘাতে রাজীবের মৃত্যু হয়। এ কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনিক সেই চাপাতি কিনে এনেছিলেন, তাকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন।
আসামিদের মধ্যে এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
রায়ে বলা হয়, মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে হত্যাকাণ্ডে তার নিজের বা অন্য আসামিদের কারও সম্পৃক্ততার কথা আসেনি।
“তবে তার খুৎবায় অনুপ্রাণিত হয়েছে এ সব আসামিরা। যে করাণে তার বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ আসে। তার শাস্তি পাঁচ বছরের।”
আর সাদমান ইয়াসির মাহমুদ অনেক পরে ধরা পড়ে আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, ‘তার ভিত্তিতে’ তাকে তিন বছর করাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিচারক।
তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ ওই আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। আর এবছরের ১৮ মার্চ তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল, জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতেন। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়।
জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে বাকি আসামিরা ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন।
রাহমানীকে হত্যাকাণ্ডের উৎসাহদাতা হিসেবে তুলে ধরা হয় অভিযোগপত্রে।
তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারক বলেন, “তদন্ত ঠিকমতো হলে রাজিব যে তার বাসা থেকে তার বান্ধবী তানজিলার সাথে বেরিয়ে গেল- তার জবানবন্দি নিতে পারতেন আইও। আমাদের আসলে সবাইকে বিবেক নিয়ে চলতে হবে, ধৈর্য্য নিয়ে চলতে হবে।”
ওই হত্যার আলামত মিললেও তদন্ত কর্মকর্তা চাক্ষুষ কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি জানিয়ে বিচারক বলেন, “তদন্তের গতি অনেক লম্বা হয়েছে; আসামিপক্ষ থেকে কেউ সাজা কমানোর দাবি করেনি। সবাই খালাস চেয়েছেন – কিন্তু খালাস দেওয়ার মতো কাউকে পাইনি। হত্যায় অংশগ্রহণের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
অবশ্য তদন্ত নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের দাবি, পুলিশ সফলভাবে সেই দায়িত্ব শেষ করেছিল বলেই আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগত্র হয়েছিল।
“প্রত্যেক আসামি বিভিন্ন পর্যায়ে সাজা পেয়েছে। এটাই আমাদের তদন্তের সফলতা।ৃএই রায় পুলিশকে অন্য মামলার তদন্তেও অনুপ্রাণিত করবে।