খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আসুন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠা করি।
‘ প্রধানমন্ত্রী আজ ইংরেজি নববর্ষ ২০১৬ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান। বাণীতে তিনি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতারক্ষা এবং জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে ২০১৫ সালকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল বছর হিসাবে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গতবছর ছিল বাংলাদেশের জন্য সাফল্যময় বছর। প্রাকৃতিক পরিবেশরক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ তাঁকে পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারের জন্য আইটিইউ প্রদান করেছে। তিনি বলেন, ‘পরনির্ভরশীল অর্থনীতির চক্র ভেঙে আজ আমরা আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির দ্বারপ্রান্তে।
নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকার পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। গত ডিসেম্বরে মূলসেতুর কাজ শুরু হয়েছে।’ পাঁচ দশকের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ ৩২তম পরমাণু ক্লাবে প্রবেশ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়ার সহায়তায় এক লাখ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প ‘রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বৈশ্বিক শান্তিসূচক, ক্ষুধাসূচক, খাদ্যসূচক, লিঙ্গ-বৈষম্যসূচক, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার, বৈশ্বিক সমৃদ্ধিসূচক, বিশ্বগণমাধ্যম সূচকসহ সকলক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং অনেকক্ষেত্রে ভারতের চাইতে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। বিশ্বমন্দাসত্ত্বেও গতবছর সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচক ইতিবাচক ছিল এবং এতে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাসত্ত্বেও রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক আমাদের দেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা একশো এবং উৎপাদন সক্ষমতা ১৪ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেন, ২০১৫ সালে আমরা প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করতে সক্ষম হয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সাথে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। ভারতের পার্লামেন্টে স্থলসীমানাচুক্তি অনুমোদিত হয়। ফলে ৫২ হাজার ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের মানবেতর জীবনের অবসান হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে ছিটমহলবিনিময়ে ১০ হাজার ১০ একর জমি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যোগ হয়েছে। জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী সকল যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা হবে এবং শাস্তি কার্যকর করার নিশ্চয়তা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামাতের সকল বাধা ও ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে ইতোমধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী সকল যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের আওতায় আনবো এবং শাস্তি কার্যকর করবো।’ এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি অভিশাপমুক্ত হবে। জাতীয় চারনেতা হত্যাকা-, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্রমামলাসহ মানবতাবিরোধী প্রতিটি অপরাধের বিচারকাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে বলে বাণীতে তিনি উল্লেখ করেন। নতুনের আহ্বানে পুরাতন বছরের সব জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে যাক এই প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি নতুনবছর সবার জীবনে অনাবিল সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি বয়ে আনার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করেন।