খোলা বাজার২৪,শনিবার, ২ জানুয়ারি ২০১৬: স্থানীয় সরকারে প্রথমবারের মতো আয়োজিত দলীয় নির্বাচনে ১৯৯ পৌরসভায় বাক্সে পড়া মোট ভোটের ৫২ শতাংশ পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই হার নবম সংসদ নির্বাচনে দলটির অর্জনের চেয়ে ৪ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
সাত বছর পর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়াইয়ে বিএনপি পেয়েছে বাক্সে পড়া মোট ভোটের ২৮ শতাংশ। নবম সংসদের তুলনায় এই হার ৪ শতাংশ পয়েন্ট কম।
শুক্রবার পর্যন্ত ইসিতে আসা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চূড়ান্ত ফল বিবরণী বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে এই তথ্য।
গত ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় যে নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা হয়েছে ২২৭টির। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ১৭৭ জন ও বিএনপি’র ২২ জন বিজয়ী হয়েছেন। ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
এসব পৌরসভার ভোটার সংখ্যা সারাদেশের মোট ভোটারের মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ হলেও বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় এবারের স্থানীয় সরকারের নির্বাচনটি বিশ্লেষকদের কাছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা পরিমাপের ব্যারোমিটারে পরিণত হয়েছিল।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক নিয়ে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল নবম সংসদ নির্বাচনে। ২০০৮ সালের ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাক্সে পড়া মোট ভোটের ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং বিএনপি ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ পায়।
ওই নির্বাচনের আগেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল, প্রধান এই দুই দলের মূল ভোট ব্যাংক ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের পর বলা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্র“তিই দলটির ওই সাফল্যের মূল কারণ।
বিএনপির বর্জনের মুখে দশম সংসদে আওয়ামী লীগ ৭২ দশমিক ১৪ শতাংশ ভোট পায়। অবশ্য ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
গত সাত বছরে দুই দলের পক্ষ থেকে জনসমর্থন নিয়ে বহুবার পাল্টা-পাল্টি দাবি জানানো হলেও ভোটের হিসাবে তা মেপে দেখার সুযোগ এ পৌর নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সামনে আসেনি।
জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে এবারের পৌর নির্বাচনে মোট ভোটসংখ্যা অনেক কম হলেও ভোটের হারের বিবেচনায় দুই দলের ক্ষেত্রেই ৪ শতাংশ পয়েন্টের ব্যবধান হওয়াকে আওয়ামী লীগের ‘ভোট ভিত্তি’ বাড়ার নির্দেশক বলে মনে করছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংগঠন জানিপপ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
অবশ্য ‘নৈরাজ্যবাদ ছেড়ে’ ভোটে আসায় বিএনপি পৌর নির্বাচনে ‘পরাজিত হয়েও জিতেছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“প্রতীক থাকায় এ ফলাফলের গুরুত্ব অনেক। তথাকথিত ভোট ব্যাংকের বিষয়টি এখন আর বিবেচনায় নেই। কে ক’টি পৌরসভায় জিতেছে তাও জনপ্রিয়তার একটা নিয়ামক ধরতে হবে। ক্ষমতাসীনরা তা ধরে রেখেছে, বিএনপি পরাজিত হলেও নিয়মতান্ত্রিক ধারায় ফেরার চেষ্টা করছে,” বলেন তিনি।
কলিমুল্লাহর বিচারে, এবারের ভোট ৯৮ শতাংশ ‘সুষ্ঠু’ হয়েছে।
অবশ্য সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেছেন, পৌরভোট খুব সুষ্ঠু হয়েছে তা ‘বলা যাবে না’। এ নির্বাচনের ফলকে ‘জনপ্রিয়তার মাপকাঠি’ ধরাও ঠিক হবে না।
“নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়াটাই মুখ্য। সুষ্ঠু ভোট হলে তারপর সংখ্যাভিত্তিক তারতম্য নিয়ে বিবেচনা করা ভালো হবে। কারচুপির অভিযোগ বাদ দেওয়া গেলে জাতীয় নির্বাচনের দু’বছরের মাথায় পৌর নির্বাচনের এ ভোটের ফলও জনপ্রিয়তার মূল্যায়ন করা যেত,” বলেন তিনি।
বুধবার দেশের যে ২৩৪ পৌরসভায় ভোট হয়েছে তার মধ্যে অনিয়ম-গোলযোগের ঘটনায় একটি পৌরসভা এবং ১৯ পৌরসভায় ৩৯টি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে।
ইসির হাতে আসা ১৯৯টি পৌরসভার ফল বিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসব পৌরসভায় মোট ভোট দিয়েছেন ৪২ লাখ ৭৩ হাজারের মতো ভোটার।
এর মধ্যে ১৯৯ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পেয়েছেন ২২ লাখ ৪ হাজার ৯ ভোট। আর বিএনপির প্রার্থীরা ১২ লাখ ৩ হাজার ২৫৯ ভোট পেয়েছেন।