খোলা বাজার২৪,শনিবার, ২ জানুয়ারি ২০১৬: ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রথম দিনেই ক্রেতা দর্শনার্থীদের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে আশাবাদী স্টল মালিকরা; ধুলোবালিমুক্ত পরিবেশ পেয়ে দর্শনার্থীরাও প্রকাশ করলেন উচ্ছ্বাস।
সরকারি ছুটির দিনে শুক্রবার বিকালেই মাসব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথম দিনে কিছু স্টল নির্মাণ ও অভ্যন্তরীণ সাজ-সজ্জার কাজ বাকি থাকলেও সন্ধ্যার পর মেলা প্রাঙ্গণ ভরে উঠে দর্শনার্থীতে।
৩১ দশমিক ৫৩ একর আয়তনের মাঠে এবারের মেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৫৫৩টি স্টল রয়েছে, যার মধ্যে ৫৬টি ছোট-বড় স্টল ও প্যাভিলিয়নেই রয়েছে বিদেশি পণ্যের সমারোহ।
শুষ্ক মৌসুমে রাজধানী জুড়ে ধুলোর ভোগান্তি চোখে পড়লেও মেলার পরিবেশ ছিল বেশ নির্মল। মোড়ে মোড়ে ফুল গাছ, পানির ঝর্ণা আর হাঁটাচলার পথে পানি ছিটানোর ফলে অনেকটা স্বস্তিতেই ঘুরে-ফিরে মেলা দেখতে পেরেছেন দর্শনার্থীরা।
যমুনা ইলেট্রনিক্সের প্যাভিলিয়ন ব্যবস্থাপক ফয়সাল আহমেদ বলেন, “গত দুই বছরের তুলনায় এবার অপেক্ষাকৃত অনকূল পরিবেশ পেয়েছি। প্রথম দিনেই যে পরিমাণ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে তা অভূতপূর্ব।”
রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে এবার সন্তোষজনক বেচাকেনার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “গতবার তো শনি থেকে বৃহস্পতিবার জুড়ে হরতাল-অবরোধ ছিল। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ক্ষতির শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অনুরোধে কিছুদিন সময় বাড়ানো হলেও অতিরিক্ত এক-দেড় লাখ টাকা নেওয়া হয়েছিল।”
প্রথম দিনে মেলায় এসেই একটি ব্লেজার কিনে নিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন।
তিনি জানান, মেলায় সব জিনিসপত্র কিছুটা কম মূল্যে পাওয়া যায়। তাই এখানে কেনাকাটার জন্য সারা বছর জুড়ে মানুষ অপেক্ষায় থাকে।
গ্রামের বাড়ি থেকে আসা একজন অতিথির জন্য ব্লেজারটি কিনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মেলার মধ্যভাগে এর দাম কমে এক হাজারেও নেমে আসতে পারে।
জেএম ক্লাসিক ফ্যাশন লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধির মতে, প্রথম দিনেই মেলায় যে পরিমাণ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে তা আশাবাদী হওয়ার মতো।
প্রথম দিনেই কিছুটা বেচাবিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরও কয়েকদিন গেলে কর্তৃপক্ষ মূল্যছাড়ের সুযোগ দিতে পারেন।
মেলায় দেশে উৎপাদিত বাই সাইকেল দূরত্ব বাইসাইকেলের স্টলে দর্শক সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যা নাগাদ দুটি ছোট আকারের বাইসাইকেল বিক্রি হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তা কামাল হোসেন।
তিনি জানান, মেলা উপলক্ষে তাদের কোম্পানি ১০ শতাংশ ছাড়ে সাইকেলগুলো বিক্রি করছে। এছাড়া নতুন তিনটি উন্নতমানের সাইকেলের মডেল হাজির করা হয়েছে। অচিরেই এসব সাইকেল বাজারে আসবে।
মেয়ের জন্য ৪ হাজার ৭০০ টাকায় একটি ছোট সাইকেল কিনতে দেখা যায় ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদকে।
তিনি বলেন, “অনেক দিন ধরেই সাইকেল কিনব ভাবছিলাম। আজকে কিনে নিলাম, ছাড়ের কথা বিবেচনা করিনি।”
রাজধানীর শ্যামলী থেকে দুই শিশু সন্তানসহ মেলায় এসেছেন গৃহবধূ সাদিয়া হোসেন ও সুলতানা ইয়াসমিন।
তারা জানান, কেনাকাটার জন্য নয়, ঘুরে ফিরে দেখার জন্যই তাদের মেলায় আসা।
প্রথম দিনে সার্বিক পরিস্থিতি বেশ সুন্দর লেগেছে জানিয়ে সাদিয়া বলেন, তবে কয়েকদিন পর এই মেলা লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে। ভিড়ের কারণে পা ফেলার জায়গা থাকবে না।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর আয়োজনে এবারের ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রতিদিন লক্ষাধিক দর্শকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন, মা ও শিশু কেন্দ্র, শিশুপার্ক, ইকোপার্ক, ই-শপ, ই-পার্ক, ৫২টি টয়লেট, মসজিদ, তিনটি স্থানে ৭৭০টি গাড়ির পার্কিং, মাদার কেয়ার সেন্টার ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে এবারের মেলায়।