Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

56খোলা বাজার২৪,শনিবার, ২ জানুয়ারি ২০১৬: বিএনপি দাবি করেছে, তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘আসল বিএনপি’র ব্যানারে হামলার অপচেষ্টা হয়েছে। এ ঘটনায় দলের অঙ্গসংগঠনের ১৪/১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।
পুলিশ বলছে, সেখানে বিএনপির দুই পক্ষে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
শনিবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “বিকাল ৪টার দিকে প্রকৃত বিএনপি নামে ফকিরেরপুল মোড় থেকে কোথাকার অপকৃষ্ট, উচ্ছিষ্ট, পরজীবী সংগঠন, কী নাম, আমরা কোনোদিন শুনিনি- প্রকৃত বিএনপির নামে কিছু টোকাই-মোকাইয়ের একটা মিছিল আমাদের কার্যালয়ে সামনে এসে হামলা চালায়। মিছিলের পেছনে পুলিশের প্রটেকশন ছিল।”
“হামলায় য্বুদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ১৪/১৫জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। অফিসের সামনে থাকা সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। আহত কয়েকজনকে ইসলামী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
‘পুলিশ প্রটেকশনের’ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফায়েল আহমেদ তা অস্বীকার করেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপির দুই পক্ষে একটু ঝামেলা হয়েছে; পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
কামরুল হাসান নাসিম নামে একজন ‘আসল বিএনপি’ নামের এই সংগঠনের নেতা। তিনি বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে দাবি করে আসছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘জিয়া জিয়া, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘আসল বিএনপি আসল বিএনপি, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগানে বিকাল ৪টার দিকে কামরুল হাসান নাসিমের নেতৃত্বাধীন ‘আসল বিএনপি’র শতাধিক মানুষের একটি মিছিল ফকিরেরপুল থেকে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয় অভিমুখে রওনা করে। এসময় তাদের হাতে জাতীয় পতাকা, গাজারি গাছের লাঠি ও ক্রিকেটের স্ট্যাম্প ছিল।
মিছিলটি কিছু দূর এগুনোর পর তাদের নেতা হাসান সরে পড়েন। এরপর মিছিলটি এগিয়ে যেতে থাকলে নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ছাত্রদলের কয়েকশ’ নেতা-কর্মী অবস্থান নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে।
উভয়পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে মিছিল থেকে ইট-পাটকেল ও গাজারির লাঠি বিএনপি কার্যালয়ের দিকে ছুড়ে মারা হলে পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময়ে কার্যালয়ে সামনে পুলিশ সদস্যরা তৎপর হয়ে ওঠে। তারা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় মিছিলকারীরা এদিক-ওদিন পালিয়ে যেতে থাকে।
এক পর্যায়ে কার্যালয় থেকে নীচে নেমে নেতা-কর্মীদের শান্ত করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।
পরে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করে রিজভী বলেন, “পৌর নির্বাচনের ভোট কারচুপি ও ৫ জানুয়ারি সোহরওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভা নিয়ে জনদৃষ্টি সরিয়ে নিতে সরকার কোথাকার প্রকৃত বিএনপি নামে নাম না-জানা কিছু টোকাই-মোকাই ভাড়া করে তাদের দিয়ে মিছিল নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে হামলার অপচেষ্টা চালায়।
“এর সঙ্গে শাসক দল থাকতে পারে। কারণ মিছিলটির পেছনে পুলিশ প্রটেকশনে ছিল। এটা কি বুঝতে বাকি আছে, কারণটা কী?”
এ ঘটনাকে বিএনপির বিরুদ্ধে একটি ‘ভয়ংকর অশুভ চক্রান্তের’ অংশ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, “আমরা দেখলাম মিছিলটি কার্যালয়ের সামনে আসার পর হঠাৎ বিএনপির কার্যালয়ে আক্রমণ চালায়। আমরা সরকারের মদদের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”
রিজভী বলেন, “এ ঘটনার জন্য দায়ী সম্পূর্ণরূপে সরকার ও শাসক দল। তারা মনে করেছে, দেশের মানুষ বোধহয় উটপাখির মতো মাথা নুইয়ে রেখেছে।
“কিন্ত জনগণ সব কিছু দেখছে, জানছে। আপনারা (সরকার) চক্রান্ত করে ষড়যন্ত্র করে পার্টি অফিস দখল করাবেন টোকাই-মোকাইয়ে দিয়ে।”
বিএনপিকে ‘লক্ষ-কোটির দল’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, “যে দল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে, ভোটারবিহীন সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার উচ্চারণ করতে পারে, তাদেরকে হুমকি দিয়ে ভাড়াটিয়া বাহিনী দিয়ে পর্যদুস্ত করা যাবে না। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তদন্ত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি আমরা করছি।”
হামলা হতে পারে জানার পর দুপুরেই বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয় দাবি করে রিজভী বলেন, “তারপরও এটি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় হবে- এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এটা কখনো মেনে নেওয়া যায় না।”
তিনি জানান, এ ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বাদী হয়ে পল্টন থানায় ডায়েরি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।