Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

43খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি ২০১৬: কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফের ডলার কিনতে শুরুর করায় যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার বিনিময় হার আবার কমছে। গত এক মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে ৪৫ পয়সা।
সোমবার বাজার থেকে ৭৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে আড়াই কোটি (২৫ মিলিয়ন) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক মাস আগে এক দর ছিল ৭৮ টাকা ৯৫ পয়সা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নিয়ে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ২১৬ কোটি ডলার কিনেছে। ডলারের সরবরাহ বাড়ায় বাজার ‘স্থিতিশীল’ রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান।
তিনি বলেন, “রপ্তানি আয় এবং রেমিটেন্সে প্রবাহের ইতিবাচক ধারায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এছাড়া জ্বালানি তেল এবং খাদ্যপণ্য আমদানিতে খরচ কমাও ডলার সরবরাহ বাড়ার একটি কারণ।”
এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকা খানিকটা শক্তিশালী হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ৩০ নভেম্বর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলার কিনতে ৭৮ টাকা ৯৫ পয়সা লাগত; সোমবার লেগেছে ৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থ্যাৎ, এই এক মাসে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার দর ৪৫ পয়সা বেড়েছে।
তার আগে প্রায় এক বছর ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের বিনিময় হার। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডলারের মান বাড়তে শুরু করে, দুর্বল হতে শুরু করে টাকা। নভেম্বরে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার পৌঁছায় ৭৮ টাকা ৯৫ পয়সায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর- তিন মাসে টাকার বিপরীতে ডলারের দর এক টাকা ১৫ পয়সা বেড়েছিল। এর পর থেকে আবার শক্তিশালী হতে শুরু করে টাকা।
ছাইদুর রহমান বলেন, রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহে ‘ভাটা’ পড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। এ কারণে সেপ্টেম্বর থেকে ডলার শক্তিশালী হতে শুরু করে।
“এখন জ্বালানি তেলের পেমেন্ট একেবারেই কমে গেছে। খাদ্যপণ্য আমদানিতেও ব্যয় কম হচ্ছে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) বড় উদ্বৃত্ত রয়েছে। ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট উদ্বৃত্ত হলে টাকা শক্তিশালী হবে- এটাই স্বাভাবিক।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে ডলারের দর বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ৮৫ টাকায় উঠেছিল। অর্থ্যাৎ, তখন এক ডলার কিনতে ৮৫ টাকা লাগতো।
গত তিন বছরে সেই ডলারের দর পড়তে পড়তে ২০১৪ সালের অগাস্টে ৭৭ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে আসে।
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সবমিলিয়ে ৩৪০ কোটি (৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগের বছর (২০১৩-১৪) কেনা হয়েছে ৫১৫ কোটি ডলার।
২০০৩ সালে বাংলাদেশে ভাসমান মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা (ফ্লোটিং) চালু হয়। অর্থ্যাৎ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে টাকা-ডলারের বিনিময় হারে হস্তক্ষেপ করেছে।
ছয় মাসে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্স সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থ্যাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে প্রবাসীরা ৭৪৮ কোটি ৩০ লাখ (৭ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন।
অর্থের এই পরিমাণ ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে দশমিক ০৬ শতাংশ কম। গতবার ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।
সবশেষ ডিসেম্বর মাসে ১৩০ কোটি ৭৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।
রিজার্ভ ২৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন (দুই হাজার ৭৪৭ কোটি) ডলার। এই অংক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রপ্তানি আয় বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ।