খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি ২০১৬: জন্ম থেকেই দুই হাত ছিলো না তার । তারপরও পা দিয়ে লিখে ২০১৫ সালের জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের প্রতিবন্ধী ছেলে মো. বেল্লাল হোসেন। মা হোসনেয়ারা বেগম শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই পায়ের আঙুলের ফাঁকে চক আবার কখনও পেন্সিল দিয়ে লেখা শিখিয়েছেন বেল্লালকে।
পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় উপজেলার উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বেল্লাল। পরীক্ষার খাতায় ডান পায়ের আঙ্গুলী দিয়ে লিখেছে সে। অসাধ্যকে সাধন করে বেল্লাল আজ মেধাবীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে খুব গর্বের সাথে।
উমেদপুর মাদ্রাসা থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া মো. জাবের মোল্লা বলেন, আমরা সুস্থ্য অবস্থায় হাত দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেয়েছি। আর বেল্লালের একটি হাতও নেই, ও শুধু পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেয়ে আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তবে বেল্লাল প্রতিবন্ধী হলেও অনেক মেধাবী।
উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. হাবিবুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, শারীরিক সক্ষমতা না থাকলেও বেল্লালের মেধা আছে। পা দিয়ে লিখে এবছর জেডিসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই মাদ্রাসা থেকে ৬১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সবাই পাশ করেছে। তবে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১০ শিক্ষার্থী। তারমধ্যে বেল্লাল অন্যতম।
প্রতিবন্ধী এই শিশুটি যাতে পা দিয়ে ভালভাবে লিখতে পারে সে জন্য ক্লাশে একটি কাঠের আসন বানিয়ে দেয়া হয়েছে। সেটিতে বসে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বেল্লাল লিখতে ও পড়তে পারে। বেল্লালের লেখাপড়ায় আগ্রহ খুব ভালো। বেল্লাল প্রতিবন্ধী হলেও সে আমাদের গর্ব।
বেল্লাল সাংবাদিকদের জানান, লেখাপড়া যখন শুরু করে তখন থেকেই একাএকা স্কুলে যেত সে। স্কুলে যাওয়া আসার সময় রাস্তায় পরে গিয়ে অনেকবার মাথাও ফাটিয়েছে। তারপরও সে লেখাপড়া ছাড়েনি। আজ তার পুরুস্কার হিসাবে জেডিসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বড় হয়ে সে একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষাদান করাতে চায়।
বেল্লালের পিতা মো. খলিলুর রহমান জানান, চার ছেলে মেয়ের মধ্যে বেল্লাল সবার ছোট। গরিব হলেও সে বেল্লালকে লেখাপড়া করাতে চায়। বেল্লালের জন্য সে স্থায়ীভাবে কিছু সম্পত্তি করতে চায় যা দিয়ে ভবিষ্যতে সে চলতে পারবে। এজন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন বেল্লালের বাবা।