খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৬ জানুয়ারি ২০১৬: চট্টগ্রাম নগরে রিখটার স্কেলে ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানলে ৫ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক লাখ ৪২ হাজার ভবন। এর ফলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় পরিচালিত গবেষণায় এই ভয়াবহ আশঙ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে সোমবার ভোরে বাংলাদেশ জুড়ে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে আতঙ্কের বিষয়টি আরও সামনে চলে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় চট্টগ্রাম শহরের ৪১টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ছোট বড় মিলে ১ লাখ ৮২ হাজার বিল্ডিং রয়েছে। এর মধ্যে অতিমাত্রায় ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ৫ হাজার ভবন।
আর ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবন। ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ বলতে ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরো ভবন ভেঙ্গে পড়বেÑএমনসব ভবনকে বোঝানো হয়েছে। আর ‘ঝুঁকিপূর্ণ’র ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ভবন মাটিতে দেবে যাবে, হেলে পড়বে। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিংয়ের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। চট্টগ্রামসহ দেশের ৩টি বড় শহরে (ঢাকা ও সিলেট) গবেষণার কাজ চলে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ‘কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম’ (সিডিএমপি) এবং এশিয়ান ডিজাস্টার প্রিপ্রেয়ার্ডনেস সেন্টার (এডিপিসি) যৌথভাবে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
চট্টগ্রাম নগরীতে তৃণমূল পর্যায়ে এই গবেষণাকার্য পরিচালনা করে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্র। গবেষণা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান সমন্নয়কারী বর্তমানে চুয়েট উপাচার্য প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাসসকে বলেন, সম্প্রতি নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্প, এর আগে জাপানে স্মরণকালের বড় ভূমিকম্পে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা এবং প্রতিবেশী মায়ানমারে ভূমিকম্প আমাদেরকে সচেতন হওয়ার আরো একটি বড় বার্তা দিয়ে গেল। কারণ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসের সুযোগ থাকলেও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই। তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য দেশের যাবতীয় অবকাঠামো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে।’
প্রফেসর জাহাঙ্গীর বলেন ‘যেসব ভবন ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে ওইসব ভবন সংস্কার করে ভূমিকম্প ঝুঁকি থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি উদ্যোগে এসব ভবন সংস্কারে সুদ বিহীন ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।’ জাপানি প্রতিষ্ঠান ওয়াইও করপোরেশন পরিচালিত পৃথক এক গবেষণায় বান্দরবান ও টেকনাফের মায়নমার সীমান্তবর্তী এলাকাকে দেশের সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প প্রবণ এবং ভূমিকম্পের ফল্ট লাইন হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে ৭ থেকে ৮ মাত্রার একটি বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। আর ওই স্থানে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার (রিখটার স্কেল এর তীব্রতা অনুযায়ী মহা বিপর্যয়কর) ভূমিকম্প হলে তা চট্টগ্রাম শহরে রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রা (রিখটার স্কেল এর তীব্রতা অনুযায়ী শক্তিশালী) হিসেবে আঘাত হানবে। চুয়েটের পুরকৌশল অনুষদের প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিত বাসসকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় স্থাপনা চট্টগ্রাম বন্দর লিকিউফাইবল (নড়বড়ে) মাটির উপরে অবস্থান করছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এতে করে বড় ভূমিকম্প হলে আমাদের এই অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দর জাপানের কোবে পোর্টের মত অচল হয়ে পড়তে পারে।’ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুছ ছালাম বাসসকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে এ বিশাল সংখ্যক ভবন ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে, গবেষণার এমন তথ্যটি নি:সন্দেহে আতঙ্কজনক।
বিশেষজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের মতামত নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এদিকে সোমবার ভোরে ভূমিকম্পের পর সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন ‘অনেক সময় অনেক গবেষক যে গবেষণা করেন, বাংলাদেশের এরিয়ায় তা সঠিকভাবে ফলেনি। গবেষকরা বলেছেন ৬ দশমিক ৫ হলেই (ভূমিকম্পের মাত্রা) ম্যাসাকার হয়ে যাবে। ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে গেছে। আল্লাহর রহমতে একটা বিল্ডিংয়েও ফাটল ধরেনি।