Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

5খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৬ জানুয়ারি ২০১৬: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। স্বাধীনতাযুদ্ধে পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, শত শত নিরস্ত্র মানুষ, অসংখ্য বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী হত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত আসামির চার অপরাধ ছিলো একাত্তরের বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। বুদ্ধিজীবী হত্যা ও নিরস্ত্র মানুষকে গণহত্যা ছিল ‘ভয়ানক’।
এই চার অভিযোগ ছাড়াও অপহরণ, হত্যার চার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন আদালত। প্রসিকিউশনের আনা ১৬ অভিযোগের মধ্যে আটটিতে খালাস পান তিনি।
নিজামীর বিপক্ষে যতো অভিযোগ:
১. একাত্তরের ৩ আগস্ট নিজামী চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে শহর ছাত্রসংঘের এক সুধী সমাবেশে পাকিস্তান রক্ষার পক্ষে বক্তব্য দেন। ওই সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি আবু তাহের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার আদেশ দেন। নিজামী ওই সভায় উপস্থিত থেকেও আবু তাহেরের বক্তব্যের বিরোধিতা না করে মৌন সম্মতি দেন।
২. একই বছরের ২২ আগস্ট নিজামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল-মাদানি স্মরণসভায় দলীয় নেতাকর্মীদের স্বাধীনতাকামীদের নিশ্চিহ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর তারা সারাদেশে সংগঠিত হয়ে অপরাধে লিপ্ত থাকেন। যার দায় নিজামীর।
৩. একই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে এক ছাত্রসমাবেশে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন নিজামী।
৪. একই বছরের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর যশোর বিডি হলে ছাত্রসংঘের সভায় তিনি জিহাদের সমর্থনে বক্তব্য দেন। নিজামী ওই সভায় বক্তব্য দিয়ে নিরীহ স্বাধীনতাকামী বাঙালি হত্যার নির্দেশ দেন।
৫. একই বছরের ১৪ মে নিজামীর নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার, আলবদররা পাবনার ডেমরা ও বাউসগাতি গ্রাম ঘেরাও করের সাড়ে চার শতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে এক জায়গায় জড়ো করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। সেখানে নারীদের ধর্ষণও করা হয়।
৬. নিজামীর নির্দেশে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতায় একই বছরের ৮ মে পাবনার সাঁথিয়া থানার করমজা গ্রামে লোক জড়ো করে নির্বিচারে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অসংখ্য লোককে হত্যা করে। নারীদের ধর্ষণ করা হয়।
৭. একই বছরের ২৭ ও ২৮ নভেম্বর পাবনার সাঁথিয়া থানার ধোলাউড়ি গ্রামে ডা. আবদুল আওয়ালের বাড়ি ও আশপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেখান থেকে চারজনকে ধরে নিয়ে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানে শাহজাহান আলী নামে একজনকে গলা কেটে ফেলে রাখা হয়। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
৮. ১৬ এপ্রিল ঈশ্বরদি থানার আটপাড়া ও বুথেরগাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা।
৯. ১০ জুন আতাইকুলা থানার মাধপপুর গ্রামের মাওলানা কছিমউদ্দিনকে ধরে নিয়ে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়।
১০. ৯ আগস্ট পাবনা শহরের নূরপুর ওয়াপদা মোড় থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাজেদসহ দু’জনকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পাবনা সুগার মিলের পাশে নিয়ে লাশ ফেলে রাখে।
১১. ৩ ডিসেম্বর বেড়া থানার বিছাখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে ৭০ জনকে হত্যা করা হয়।
১২. আগস্টের কোনো এক সময় সাঁথিয়ার সোনাতলা গ্রামে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
১৩. ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মে মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুরে শারীরিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা ক্যাম্প স্থাপনের পর সেখানে গোলাম আযম ও নিজামী নিয়মিত যাতায়াত করতেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে শলাপরামর্শ করতেন। তারই ফসল হিসেবে সারাদেশে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ১৪. ৩০ আগস্ট রাতে পুরনো এমপি হোস্টেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্পে বন্দি জালাল, রুমী, বদিসহ বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন মতিউর রহমান নিজামী। এরপর তাদের হত্যা করা হয়।
১৫. একই বছরের ৫ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পাবনার সাঁথিয়া পাইলট উ”চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিজামী যেতেন। সেখানে তিনি রাজাকার কমান্ডার সামাদ মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করেন।
১৬. আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিজামী একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঊষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়।-চ্যানেল আই।