Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

67খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি ২০১৬: অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর পাকস্থলি থেকে দুই কেজি ওজনের ‘চুলের বল’ বের করা হয়েছে, সে শৈশব থেকে চুল খেয়ে আসছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
শাহনূর নামে ওই কিশোরী গত ‘সাত থেকে আট বছর’ ধরে নিজের মাথা থেকে চুল ছিঁড়ে খেয়ে এলেও চিকিৎসকদের কাছে এই ‘মানসিক সমস্যাটি’ ধরা পড়ার আগে এ নিয়ে কিছুই জানতে পারেননি তার বাবা-মা।
এক পর্যায়ে ওই কিশোরী প্রচণ্ড পেট ব্যথা অনুভব করছিল। খেতেও পারছিল না, জোর করে কিছু খাওয়াতে গেলেও বমি হচ্ছিল। তখন মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে যান ওই দম্পতি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক তপন কুমার সাহার নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল বুধবার অস্ত্রোপচার করে এই চুলের বল বের করে আনে।
চুলের বলটির ওজন ‘প্রায় দুই কেজি’ বলে জানান চিকিৎসক দলে থাকা ঢাকা মেডিকেলের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হাকিম শাহিন।
তিনি বলেন, “ওই কিশোরী যেসব চুল গিলে খেত, হজম না হওয়ায় সেগুলো পাকস্থলিতে আটকা পড়ে দিনে দিনে কুণ্ডলী পাকিয়ে বড় হয়ে ওঠে। এটি এতই বড় হয়ে উঠছিল যে তা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।”
কিশোরীর নানি সালেহা বেগম বলেন, “আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি যখন ডাক্তাররা আমাকে এটা (অস্ত্রোপচারের পর বের করা চুলের কুণ্ডলী) দেখাল।”
চা বিক্রেতা বাবা বাইরে এবং গৃহকর্মী মা অন্যের বাড়িতে কাজে ব্যস্ত থাকায় ছোটবেলা থেকে ঘরে নানি সালেহার কাছেই থাকত শাহনূর।
“আমার কাছে থাকলেও আমি কখনও তাকে চুল খেতে দেখিনি। মাঝে মাঝে কোনোকিছু নিয়ে বকাঝকা করলে মাথার একটা-দুইটা চুল ছিঁড়ত। কিন্তু এগুলো তো অনেক, এতগুলো চুল কিভাবে খেল,” বিম্ময় প্রকাশ করে বলেন সালেহা।
অস্ত্রোপচারের ধকল কাটিয়ে ওঠলে তাকে মনোচিকিৎসকের কাছে পাঠানো হবে বলে জানান চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেলের মনো চিকিৎসক মো. রাশিদুল হক বলেন, “কোনো ছেলেমেয়েকে নিজের চুল ছিঁড়তে দেখলে বাবা-মায়ের সতর্ক হওয়া এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।”
শাহনূরের মতো অবস্থা সচরাচর দেখা না গেলেও কাউন্সেলিং ও ওষুধের মাধ্যমে তাকে সারিয়ে তোলা সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের মানসিক অবস্থাকে বলে ট্রিকোটিলোমেনিয়া, মানে মেয়েটি নিজের চুল টেনে ছেঁড়ায় আক্রান্ত। নিজের চুল ছিঁড়তে সে আনন্দ পায়।”
তবে নিজের চুল ছেঁড়ার এ ধরনের ম্যানিয়ায় অনেকে আক্রান্ত হলেও সবাই সেই চুল খায় না বলে জানান এই মনো চিকিৎসক।
“এ সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৩৩ থেকে ৪০ জনের চুল খাওয়ার অভ্যাস থাকে এবং এদের মধ্যেও মাত্র ৩৭ শতাংশের পেটে শাহনূরের মতো চুল কুণ্ডলী পাকায়।”
শাহনূর আর কখনও চুল খাবে না বলে চিকিৎসকদের কাছে অঙ্গীকার করেছে জানিয়ে অস্ত্রোপচারকারী দলের আরেক চিকিৎসক তুহিন তালুকদার।