Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

37খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি ২০১৬: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশকে আগামী ১৫ বছরে অন্তত ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
এই অর্থ চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি। এই পরিমাণ টাকা দিয়ে ১১টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এক নথিতে প্রয়োজনীয় অর্থের এই তথ্য পাওয়া যায়। প্যারিসে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
এতে বলা হয়, ২০৩০ সাল পর্যন্ত কৃষি, স্বাস্থ্যসহ ১০টি খাতে প্রতিবছর প্রায় ২১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করতে হবে বাংলাদেশকে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) কমিউনিটি ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্পের (সিসিসিপি) সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশ হিসেবে ক্ষতিপূরণ বাবদ এই পরিমাণ টাকা উন্নত দেশগুলোর কাছে পেতে হলে বাংলাদেশকে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।
প্যারিস সম্মেলনে অংশ নেওয়া ফজলে রাব্বি এডিবির এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ প্রতি বছর ২ শতাংশ করে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) হারাচ্ছে।
“২০৫০ সাল নাগাদ এ ক্ষতি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত লগবে ৪০ বিলিয়ন ডলার বা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।”
কোপেনহেগেন সম্মেলনে জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনে সব দেশ একমত হয়েছিল। কিন্তু কে কত দেবে, কারা কীভাবে পাবে- সেই সিদ্ধান্ত ঝুলে ছিল তখন।
প্যারিস সম্মেলনে মতৈক্য হয়েছে, ২০২০ সালের পর ধনী দেশগুলো বছরে ১০ কোটি ডলার দেবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য। সহায়তার পরিমাণ পরে বাড়ানো হবে।
স্বল্প আয়ের দেশ এবং দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো দুর্যোগ প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সহায়তা পাবে। এর মধ্যে অভিযোজনের সাহায্য দেওয়া হবে অনুদান হিসেবে।
ফজলে রাব্বি বলেন, ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ থেকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়গুলোর প্রকল্প বানানোর সামর্থ্য আরও বাড়াতে হবে।
“আমাদের ক্যাপাসিটি আরও বাড়াতে হবে। সব দেশই কিন্তু এখান থেকে টাকা নিতে চাইবে। প্রোজেক্ট ভালো না হলে কিংবা সময়মতো না দিতে পারলে টাকা পাওয়া যাবে না।”
‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ থেকে শুধু তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকেই অর্থ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন পিকেএসএফ কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি।
“এখনই দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টিপাতের ঠিক নাই। তিন দিনের বৃষ্টি এক দিনে হয়ে যাচ্ছে, অসময়ে বৃষ্টি হয়, সাইক্লোন অনেক বেড়ে গেছে, খরাও আগের চেয়ে বেড়েছে।”
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে কৃষিতে, যে খাত বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের ১৮ শতাংশের যোগান দেয়। বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের ৪৭ ভাগ এখনও কৃষিখাতকেন্দ্রীক।
ফজলে রাব্বি বলেন, “আগে আমন ছিল প্রধান ফসল। এখন বৃষ্টিপাত অনিয়মিত হওয়ায়, ভূগর্ভের পানি তোলা সহজ হওয়ায় বোরো হয়ে গেছে প্রধান ফসল। তাছাড়া আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় পুরোটাই লবণাক্ত হয়ে গেছে।”
লবণাক্ততার কারণে ওই অঞ্চলে নানা শারীরিক জটিলতা বেড়ে যাওয়া এবং বন্যার কারণে বিভিন্ন এলাকায় অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির কথাও বলেন তিনি।
প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতার বৃদ্ধি ২ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখার অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে। গ্রিন হাউজ গ্যাসের অন্তত ৫৫ শতাংশ নির্গমন করে, এমন ৫৫টি দেশের অনুসমর্থনের পরই কেবল এ চুক্তি কার্যকর হবে বলে ফজলে রাব্বি জানান।
“গ্লোবাল এমিশনের ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী চীন আর আমেরিকা যদি চুক্তি বাস্তবায়নে রাজি হয়, তাহলেও চুক্তিটি কার্যকর হবে না, ৫৫টি দেশ লাগবে। আবার খালি ৫৫টি দেশ হলেই হবে না, সেসব দেশের এমিশনের পরিমাণ বৈশ্বিক দূষণের ৫৫ শতাংশ হতে হবে।”
আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর দায়িত্ব নেবে উন্নত ৪০ দেশ। কিন্তু এবারের সম্মেলনে সব দেশকে ‘সামর্থ্য অনুযায়ী’ কমাতে বলা হয়েছে।
ফজলে রাব্বি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকেও জ্বালানি, পরিবহন ও শিল্প খাতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার ৫ শতাংশ কমাতে হবে। আর বিদেশি সাহায্য পেলে গ্রিন হাউজ গ্যাস কমানোর এই হার হবে ১৫ শতাংশ।
“প্যারিস এগ্রিমেন্টে নিকারাগুয়া ছাড়া বাকি সবাই রাজি। আশা করা যায়, এটা দ্রতই আইনি বাধ্যবাধকতার জায়গায় যাবে। তবে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক আইনগুলো এমনই হয়। জোর তো আর কিছু করা যাবে না।