খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি ২০১৬: ডা. কাজল কান্তি চৌধুরী। ময়মনসিংহের খুব আলোচিত ও পরিচিত নাম। এর কারণও আছে। ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তিনি। তিনি ডাক্তার আবার তিনি নর্দমা পরিস্কার করেন। তাঁর ছবিগুলোই ছড়াচ্ছে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফেসবুকে প্রকাশিত কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, নীল-কালো মিশ্রণের চেক শার্ট, প্যান্ট আর পায়ে হাল্কা জুতা পড়ে লাঠি হাতে নিবিষ্ট মনে ড্রেনের পলিথিন, ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করছেন এই চিকিৎসক। কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজের (সিবিএমসি) এ.কে.আকিব নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট করেন। মানুষের চোখ বিস্ময়ে কপালে উঠে যায়।
ডা. কাজল কান্তি চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ি। প্রচার নয়, নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেকেরই সমাজ উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত এ কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে নগরীর মাসকান্দা এলাকার তিন তলা বাড়ি কিনেন ডা. কাজল কান্তি চৌধুরী। নিজের বাসার সামনের নর্দমা নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় ময়লা-আবর্জনা আর পলিথিন জমে যাওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াতো। এতে করে পরিবেশও ছিল হুমকির মুখে। সেই থেকেই নিজের বাড়ির সামনের ড্রেন নিয়মিত পরিস্কার করার কাজ শুরু করেন তিনি।
পরবর্তীতে নিজের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে প্রায় প্রতি রাতে অনেকটা নিয়ম করে নগরীর পলিটেকনিক মোড় থেকে বিসিকের মোড় পর্যন্ত নর্দমা নিজ হাতে পরিস্কারের কাজে লেগে পড়েন তিনি। এক সময় তিনি ধরে নেন এটাও তার একটি কাজ। একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক হয়েও আপনি এ কাজ করেন, সহকর্মীরা কিছু বলে না এমন প্রশ্নের উত্তরে হেসে উঠেন তিনি। আমার অনেক সহকর্মী বলেন আপনি এ কাজ করেন কেন? আমি বলি, এ কাজ করলে সমস্যা কোথায়?
কাজল কান্তি রায় বলেন, শীতের জন্য এখন রাতে কাজ করতে পারি না। এ কারণেই বুধবার বিকেলে ড্রেন পরিস্কারের সময় স্থানীয় এক তরুণ হঠাৎ এগিয়ে এসে ছবি তুলে। আমি তুলতে নিষেধ করলেও ওই তরুণ ছবি তুলে। পরে আমার বড় ছেলের স্ত্রী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমাকে নিয়ে ফেসবুকে ছবি দেওয়ার বিষয়টি জানায়।
মানবকল্যাণের ব্রত নিয়ে শৈশবেই সামাজিক কাজকর্মের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ডা. কাজল কান্তি চৌধুরী। ওই সময় তিনি নেত্রকোণার একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বন্যার পানিতে ওই সময় নিজের গ্রামের নাওটানার বাঁধ ভেঙে যাবার উপক্রম হয়। গ্রামবাসীরা প্রতি বাড়ি থেকে একজন করে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করার ডাক দেয়। সেইদিন চিকিৎসক বাবা জগেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী ওই কাজে পাঠিয়েছিলেন তার বড় ছেলে এই কাজল কান্তি চৌধুরীকে। আরও আছে ১৯৭৬ সালের ঘটনা। কাজল কান্তি তখন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম ব্যাচের ছাত্র। বাঘমারা পানির ট্যাঙ্কির নিচে ইট বিছিয়ে সব শিক্ষার্থীরা মিলে সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ‘অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত’ নামে সেই খবর ছাপাও হয়েছিলো বলে জানালেন কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের এ বিভাগীয় প্রধান। তবে নিজের বাড়ির সামনে এলাকার নর্দমা পরিস্কারের ঘটনাটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে এটি কখনও ভাবেননি তিনি।
ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে পড়ায় বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি জানান, কাউকে এ কাজে উদ্ধুদ্ধ করতে নয়, নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই এ কর্মযজ্ঞ করে যাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষের উচিত পরিবেশের জন্য কাজ করা। সেটা নিজের বাড়ি থেকেই শুরু করা উচিত।