খোলা বাজার২৪,শনিবার,৯ জানুয়ারি ২০১৬: পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও শেয়ার থেকেও বিনিয়োগকারীদের আয় কমে গেছে ক্ষেত্রবিশেষে আইপিও শেয়ারেও লোকসান গুনতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিনকার লেনদেনের ‘সেকেন্ডারি বাজারে’ মন্দাভাব চলছে। এখন সেই ধাক্কা গিয়ে লেগেছে আইপিওর বাজারেও।সদ্য বিদায়ী ২০১৫ সালে ১৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। আইপিওর মাধ্যমেই এসব শেয়ার বাজারে এসেছে। বছর শেষে দেখা যাচ্ছে, তালিকাভুক্তির প্রথম দিনের আইপিও শেয়ার থেকে বিনিয়োগকারীদের যে আয়, সেটি আগের বছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইট ও লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের গবেষণা বিভাগের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
লংকাবাংলার গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে তালিকাভুক্তির প্রথম দিনে আইপিও শেয়ার থেকে বিনিয়োগকারীদের গড় আয় ছিল ১১৪ শতাংশ। ২০১৫ সালে সেটি কমে নেমে এসেছে ৭৮ শতাংশে। অর্থাৎ আইপিওর শেয়ারের মুনাফা ৪০ শতাংশ কমে গেছে এক বছরের ব্যবধানে।
পরিসংখ্যানগত বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, ২০১৪ সালে যে বিনিয়োগকারী কোনো এক কোম্পানির আইপিও শেয়ারে ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, লেনদেনের প্রথম দিনে ওই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে তাঁর মুনাফা হয়েছিল ৫ হাজার ৯০০ টাকা। আরও সহজ করে বললে, ২০১৪ সালে তালিকাভুক্তির প্রথম দিনে ৫ হাজার টাকার সমমূল্যের আইপিও শেয়ার বিক্রি করে একজন বিনিয়োগকারী গড়ে পেয়েছিলেন ১০ হাজার ৯০০ টাকা। ২০১৫ সালে সেই মুনাফার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে গড়ে ৩ হাজার ৯০০ টাকায়। অর্থাৎ ২০১৫ সালে তালিকাভুক্তির প্রথম দিনে ৫ হাজার টাকার আইপিও শেয়ার বিক্রি করে একজন বিনিয়োগকারী পেয়েছেন গড়ে ৮ হাজার ৯০০ টাকা।
এত গেল বাজারে নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া আইপিও শেয়ারের প্রথম দিনের লেনদেনসংক্রান্ত মুনাফার চিত্র। তালিকাভুক্তির পর দিন যত গেছে, হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া বেশির ভাগেরই দাম ক্রমাগত কমেছে। ফলে যেসব বিনিয়োগকারী তালিকাভুক্তির প্রথম দিনে আইপিও শেয়ার বিক্রি না করে বেশি লাভের আশা করেছিলেন, তাঁদের আরও বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে।
২০১৫ সালে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ ও রিজেন্ট টেক্সটাইলের কথাই ধরা যাক। ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর সঙ্গে ১৬ টাকা অধিমূল্য বা প্রিমিয়াম যোগ করে আইপিওতে তশরিফার প্রতিটি শেয়ারের বিক্রয়মূল্য ছিল ২৬ টাকা। লেনদেন শুরুর প্রথম দিনে এটির সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৩৬ টাকায়। এরপর দাম কমতে কমতে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বাজারে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হয় ১৭ টাকা ৭০ পয়সায়।
রিজেন্ট টেক্সটাইলের আইপিও শেয়ার নিয়ে আরও বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় বিনিয়োগকারীদের। লেনদেন শুরুর দ্বিতীয় দিনেই এটির শেয়ারের বাজারমূল্য আইপিও দামের নিচে নেমে যায়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ১৫ টাকা অধিমূল্য যোগ করে রিজেন্ট টেক্সটাইলের প্রতিটি শেয়ারের আইপিও মূল্য ছিল ২৫ টাকা। লেনদেনের প্রথম দিনে এটির সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ২৫ টাকা ৫০ পয়সায়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ১৯ টাকা।
আইপিও বাজারে এমন পরিস্থিতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘প্রথমত বাজারে আসা কোম্পানিগুলোর মান নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন ছিল। দ্বিতীয়ত, ২০১৪ সালের চেয়ে ২০১৫ সালে বেশ কিছু কোম্পানি বেশি প্রিমিয়াম নিয়ে বাজারে এসেছে। তৃতীয়ত, নতুন তালিকাভুক্তির শুরুতে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়, কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই দাম আর থাকে না। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে নতুন শেয়ারের বিপরীতে ঋণসুবিধা বন্ধ হওয়ায় নতুন শেয়ারের কারসাজি কিছুটা কমেছে।’
২০১৫ সালে যে ১৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড মিলে আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে প্রায় ১ হাজার ৩৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা তুলে নেয়। সদ্য বিদায়ী বছরে বাজারে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলো হলো: কেডিএস এক্সেসরিজ, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম), ইফাদ অটোস, আমান ফিড, ন্যাশনাল ফিড মিল, এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড, ইউনাইটেড পাওয়ার, সিমটেক্স, তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, জাহীন স্পিনিং, শাশা ডেনিমস, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও রিজেন্ট টেক্সটাইল।
এগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ফিড, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, রিজেন্ট টেক্সটাইল, তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, এশিয়ান টাইগার গ্রোথ ফান্ড, সিমটেক্স, শাশা ডেনিমসের শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য হয়তো আইপিও মূল্যের কাছাকাছি অথবা নিচে রয়েছে।