Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

27খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৬: তামিলনাড়ুর ভি ভেঙ্কটরমনকে মনে পড়ছে? হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের রোজ ১ টাকায় পেট ভরে খাওয়ান। এবার আসুন পরিচয় করা যাক আর একজন সত্যিকারের ‘ত্যাগী’-র সঙ্গে। গরিবদের বিনা পয়সায় খাওয়াতে খাওয়াতে এক সময়ের বিলিয়নিয়র বর্তমানে প্রায় কপর্দকশূন্য। নিঃস্ব। একের পর এক সম্পত্তি বিক্রি করে চলেছেন। তবু গরিবদের বিনা পয়সায় খাওয়ানো তিনি বন্ধ করতে নারাজ।
৮০ বছরের বৃদ্ধ জগদীশলাল আহুজাকে চেনেন না, এমন মানুষ খুব কমই রয়েছেন চণ্ডীগড়ে। বিশেষ করে গরিব মানুষের কাছে তিনি মসিহা। ভগবান জ্ঞানে তাঁকে শ্রদ্ধা করেন বহু ফুটপাতবাসী। হবে না-ই বা কেন? এই হিংসা, হানাহানি, প্রবঞ্চনার বিশ্বে এই মানুষগুলোই তো সমাজে শুদ্ধ বাতাস। প্রতি সন্ধ্যায় চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (চএওগঊজ) ও রোজ দুপুরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে তাঁকে দেখা যাবেই। একদিনও কামাই নেই। অক্লান্তে সেবা করে যাচ্ছে গরিব-দুঃখীদের।
বিনা পয়সা বিলি করছেন চাপাটি, আলু-চানা, হালুয়া, একটি কলা ও এক প্যাকেট মিষ্টি আর বিস্কুট। কয়েকশ ফুটপাতবাসী লাইন দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই খাবার। সাদা চুলের বৃদ্ধ হাসিমুখে সকলকে পরিবেশন করছেন। এটাই তাঁর নেশা। ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসাই তাঁকে ধীরে ধীরে করে তুলছে নিঃস্ব। সম্পত্তি বিক্রি করেই চলেছেন। তবু গরিব মানুষগুলোক খাওয়ানো বন্ধ করবেন না। জগদীশলাল আহুজার কথায়, ‘টাকা পয়সা তো আর সঙ্গে নিয়ে যাব না। এই মানুষগুলোর আশীর্বাদেই আমি ধনী। আর আমার কিছু চাই না। যতদিন বাঁচব, শেষ রক্ত দিয়ে এদের পেট ভরানোর চেষ্টা করে যাব।’
সাদা রঙের এসইউভি-টা দেখলেই দলে দলে মানুষ চলে আসেন। ওই এসে গিয়েছে ‘বাবার লঙ্গর’। হ্যাঁ, গরিব মানুষগুলি তাঁকে এই নামেই ডাকেন। তাঁদের কাছে জগদীশলাল আহুজা বাবার মতোই। জগদীশলাল বলছেন, ‘সালটা বোধ হয় ২০০০। আমি হাসপাতালের পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম, এক ব্যক্তি ফ্রি-তে সবাইকে ভাত খাওয়াচ্ছে। আমারও মনে হল, আমার এত টাকা, আমিও তো কিছু মানুষের পেট ভরাতে পারি। পরের দিন থেকেই শুরু করে দিলাম।’
দেশভাগেরসময় ১৯৪৭ সালে পেশোয়ার থেকে পাটিয়ালা এসেছিলেন মা-বাবার সঙ্গে। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১২। চণ্ডীগড়ে গিয়ে ওই বয়সেই ফল বিক্রি করতে শুরু করেন জগদীশলাল। ধীরে ধীরে অল্প দিনেই হয়ে যান ধন কুবের। শহরের পয়লা নম্বর ফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন।
গত ১৫ বছর ধরে বিনা পয়সা কয়েকশো মানুষকে খাওয়াতে গিয়ে ইতোমধ্যেই প্রায় সব সম্পত্তিই বেচে দিয়েছেন। জগদীশলালের কথায়, ‘আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এই কাজ করে যাব।’ একসময়ের রাজা গরিবদের সেবা করতে করতে আপাতত ফকির। বা হয়তো এখনই তিনি সত্যিকারের রাজা।