খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৬: প্রযুক্তির উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এখন বাস্তবে দেখা মিলছে এমন সব রোবটের, যেগুলোকে মানুষের থেকে আলাদা করাই কঠিন। এসব রোবটের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজিত হওয়ায় এরা এখন মানুষের ডাকে সাড়া দিতে পারে। মানুষের অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে নিজেও হাসতে পারে। কাঁদতেও পারে। রোবটিক্সের এমন উন্নতির ধারাবাহিকতায় কয়েক বছর ধরেই তৈরি হচ্ছে ‘সেক্স রোবট’। বিশেষ ধরনের এসব রোবটের সঙ্গে রক্ত-মাংসের মানুষও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
ডেইলি মেইলের একটি প্রতিবেদন বলছে, এ বছর এসব রোবট পরিণত হতে পারে প্রযুক্তিবিশ্বের অন্যতম চাহিদায়। অর্থাৎ মানুষের প্রযুক্তি পণ্যের তালিকায় ঠাঁই করে নিতে পারে এসব রোবট। এর সঙ্গে মানুষের কেবল ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই গড়ে উঠবে না, মানুষ হয়তো রোবটের প্রেমেও পড়বে।
ইউনিভার্সিটি অব সান্ডারল্যান্ডের যৌনতা ও সম্পর্কের মনোবিজ্ঞান বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ড. হেলেন ড্রিসকোল বলছেন, ‘সেক্স টেক’ বা যৌনতাবিষয়ক প্রযুক্তি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে উন্নত হচ্ছে। সেইসঙ্গে বদলে যাচ্ছে রোবটের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও। একটা সময় হয়তো নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য মানুষ যান্ত্রিক সঙ্গীই খুঁজে নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।
তিনি বলেন, ‘আজ থেকে একশ’ বছর আগেও যৌনতাবিষয়ক যেসব সামাজিক রীতিনীতি ছিল সেগুলো সময়ের সঙ্গে খুব দ্রুত বদলে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষিতেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা রোবটের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। রোবট এখন মানুষকে অনুকরণ করতে পারছে। এমনকি মানুষের সঙ্গে তার যৌন অভিজ্ঞতাকেও উন্নততর করার মতো সক্ষমতা অর্জন করছে। ফলে মানুষের মধ্যেও হয়তো অনেকেই যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মানুষের বদলে সেক্স রোবটকেই বেছে নেবেন।’ সেক্স রোবটের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে এমন রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিয়েলডলের সিইও ম্যাট ম্যাকমুলেনের কথায়। তিনি জানিয়েছেন, তার কোম্পানি এমন একটি রোবট তৈরি করছে যেটি চোখের পলক ফেলতে পারে, মুখ নাড়াতে পারে এবং কথাও বলতে পারে। তাদের লক্ষ্য এমন একটি রোবট তৈরি করা যে কি-না মানুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক উপভোগ করবে এবং তার অনুভূতি জানাতে পারবে।
রেড্ডিটে এক প্রশ্নের উত্তরে ম্যাকমুলেন জানিয়েছেন, সেক্স রোবটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজনের জন্য তারা পৃথক একটি কোম্পানিই গড়ে তুলবেন। সেক্স রোবট নিয়ে এমন সব অনুমান বা ধারণা হয়তো নতুন নয়। কিন্তু এসব অনুমান বা ধারণা এখন অনেকটাই বাস্তবের কাছাকাছি চলে এসেছে। এর আগে ২০০৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব মাসট্রিক্টের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক ডেভিড লেভি জানিয়েছিলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের সঙ্গে রোবটের বিয়েও সম্পন্ন হবে। আর রোবটের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে কথা একবার চাউর হয়ে গেলেই অন্যরাও এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তার পিএইচডির গবেষণা সন্দর্ভে তিনি লিখেছিলেন, ‘রোবটের সঙ্গে মানুষের রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়টিকে খাপছাড়া মনে হলেও আদতে বিষয়টি তেমন নয়। রোবটের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসা ও যৌন সম্পর্ককে কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না।’ আরেক গবেষক ইয়ান পিয়ারসনও একই ধরনের মন্তব্যই করেছেন।
তিনি মনে করেন, পতিতাপল্লী বা স্ট্রিপ ক্লাবগুলোতেও খুব দ্রুতই পৌঁছে যাবে সেক্স রোবট। এসব স্থানে জ্যান্ত মানুষের তুলনায় সেক্স রোবটকে সস্তায় পাওয়া যাবে বলে অনেকেই মানুষের তুলনায় সেক্স রোবটকেই পার্টনার হিসেবে পছন্দ করতে শুরু করবেন। শুধু তাই নয়, আরও এক ধাপ এগিয়ে পিয়ারসন মন্তব্য করেন, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষে-মানুষে শারীরিক সম্পর্কের পরিমাণকে ছাপিয়ে যাবে মানুষ-রোবট যৌন সম্পর্কের পরিমাণ। সেক্স রোবট যখন দ্রুত বাস্তবতায় পরিণত হতে যাচ্ছে, তখন সেক্স রোবটের বিরুদ্ধেও অনেকেই প্রচারণা ও আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাদের একজন লিচেস্টারের ডি মন্টফোর্ড ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফেলো ড. ক্যাথলিন রিচার্ডসন। এসব রোবট মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর পরিণতি বয়ে নিয়ে আসবে জানিয়ে সেক্স রোবটের উৎপাদন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন তিনি।