খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০১৬: যিনি প্রায় তিরিশ বছর কোমায়, তাঁর জন্য এ বার কী উপহার কেনা যায়? প্রাক্তন ফরাসি ফুটবলার জাঁ-পিয়ের আদামসের স্ত্রী প্রতি অনুষ্ঠানের আগে এ প্রশ্নটিই নিজেকে করে থাকেন। ১৯৮২ সালে হঠাৎ যে দম্পতির জীবনে ছন্দপতন।
সদা হাস্যময় ফুটবলার সামান্য অস্ত্রোপচারের ভুলে গত তিরিশ বছর কোমায়। একটা সময় ফ্রান্স এবং প্যারিস সাঁ জার হয়ে চুটিয়ে খেলেছেন তিনি। এখনও ফ্রান্সের অনেক মাঠে তাঁর জন্য প্রার্থনা হয়। মিশেল প্লাতিনি তাঁর চেনা ফুটবলারের জন্য অনেক কিছু করেছেন।
৬৭ বছরের প্রাক্তন ফুটবলার চোখের পাতা ফেলতে পারেন, খেয়ে হজম করতে পারেন, যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে পারেন-বেঁচে থাকা বলতে এ টুকুই। এই তিরিশ বছর ধরে কৃষ্ণাঙ্গ স্বামীর নিরলস সেবা করে চলেছেন তাঁর শ্বেতাঙ্গ স্ত্রী বার্নাদেতি। প্রেমের শহরের যে কাহিনি হারিয়ে দিতে পারে বিশ্বের সেরা প্রেমের উপন্যাসকে।
সময়ে ওষুধ দেওয়া, প্রতিদিন নিয়ম করে দাড়ি কামিয়ে দেওয়া, চান করানো, নতুন জামা পরিয়ে দেওয়া, একভাবে শুয়ে থেকে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকে নজর দেওয়া-এ সবই গত তিন দশক ধরে করে চলেছেন বার্নাদেতি। বলছেন, জাঁ-পিয়েরকে কেউই তাঁর জন্মদিন, বড় দিন বা ফাদার্স ডেতে উপহার দিতে ভোলেন না। আমি ওর জন্য টি শার্ট বা জাম্পার কিনে আনি। ও যে ব্র্যান্ডের জামা পরাতে ভালো বাসত, চেষ্টা করি সেই সব জামা কিনতেৃ।
তাঁর ফুটবলার স্বামী কোমায় থাকলেও অনেক কিছু বুঝতে পারেন।
জাঁ-পিয়েরের জন্ম সেনেগলে। পাঁচের দশকে জাঁ-পিয়েরের ঠাকুমা তাঁকে ফ্রান্সে নিয়ে আসেন। এর পর স্থানীয় একটি ফরাসি দম্পতি তাঁকে দত্তক নেন। তখন জাঁ-পিয়ের দ্বিতীয় ডিভিশনের ফুটবলার। বার্নাদেতি মনে করছেন, সে সময় কৃষ্ণাঙ্গ কারও সঙ্গে প্রেম খুবই অভিনব। এ জন্য আমার পরিবারে শুরুতে সমস্যা হয়েছিল।
ফ্রান্সের জাতীয় টিমের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলারদের মধ্যে এক জন জাঁ-পিয়ের। অল্প কিছু দিনের মধ্যে দেশের সেরা ক্লাব প্যারিস সাঁ জাতেও ডাক পান তিনি।
একটা সময় খেলা ছেড়ে কোচিং শুরু করেন। সে সময় পায়ের একটি টেন্ডনে চোট পান। নিজে গাড়ি চালিয়ে যান হাসপাতালে।
সেখানে দ্রুত তাঁকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়। সে সময় সেই হাসপাতালে হরতাল চলছিল। পরে জানা যায়, একাধিক ভুল হয় অস্ত্রোপচারের সময়। সে সময়ই হূদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে কোমায় চলে যান। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে মামলা চালিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করেছেন স্ত্রী।
বলছেন, ওর পুরোনো ক্লাব এবং দেশের ফুটবল সংস্থা পাশে না থাকলে এত দিন মামলা টানা সম্ভব ছিল না।
আর তাঁর আত্মত্যাগ? মৌনই থাকেন বার্নাদেতি।
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস