খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬: গত বছরের ধারাবাহিকতার সাফল্য এবছরও ধরে রেখেছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড। সর্বোচ্চ মুনাফা এক হাজার ১৫১ কোটি টাকা অর্জন করে। ২০১৫ সালের শুরুতে কিছুটা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকা সত্ত্বেও ২০১৪ সালের তুলনায় এ বছরে জনতা ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ৮৩ কোটি টাকা। এ সাফল্যের পেছনে ব্যাংকটি ১৩ টি সূচকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণপূর্বক তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।
এ সাফল্যের কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মূখ্যসচিব শেখ মোঃ ওয়াহিদ-উজ-জামান বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন এবং সে লক্ষ্যে কার্যকর পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছেন। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরাও ২০১৫ সালের জন্য ১৩টি সূচকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণপূর্বক তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম। আর এ জন্য প্রতিটি সূচক অর্জনের লক্ষ্যে পৃথকভাবে ব্যাংকের নির্বাহীদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ি তা বাস্তবায়নে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ কর্ম পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়। সার্বিকভাবে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে জনতা ব্যাংকের অগ্রযাত্রার এ সাফল্য এসেছে।
ব্যাংকটির সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুস সালাম বলেন, বোর্ড অব ডিরেক্টরসের বলিষ্ঠ দিক নির্দেশনা অনুসরণ, ঋণ আদায়ে মাঠ পর্যায়ে তদারকির মাত্রা বৃদ্ধি ও ভাল গ্রাহকদের দেখে ঋণ বিতরনের ফলে এ সাফল্য এসেছে। নিষ্ঠার সাথে কর্মসম্পাদন, পরিকল্পনা তৈরি এবং তা বাস্তবায়নে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ বছরও জনতা ব্যাংক সর্বোচ্চ মুনাফার সাফল্য ধরে রাখতে পেরেছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি জানান, ২০১৪ সাল নাগাদ ব্যাংকটির অনলাইন শাখার সংখ্যা ছিল ১৭৪টি। ২০১৫ সালে আরো ৩২৯টি শাখায় অনলাইন সুবিধা চালুর মাধ্যমে বর্তমানে ব্যাংকের ৯০৮টি শাখার মধ্যে ৫০৩ টি শাখা অনলাইন সুবিধা চালু করা সম্ভব হয়েছে। এ বছরের জুনের মধ্যে ব্যাংকটির সবগুলো শাখায় অনলাইন সুবিধা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। আর এ সুবিধা চালু হলে ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বল্প সুদের আমানত এবং উন্নত গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধিসহ লোকসানী শাখার সংখ্যা আরও কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ব্যাংকিং খাতের কয়েকজন বিশ্লেষক বলেন, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাবিক যদি সুযোগ্য হয় তাহলে সেখানে কমবেশি সাফল্য ধরা দেবেই। তারা মনে করেন, জনতা ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ উর্ধ্বতন নির্বাহীদের যোগ্য নেতৃত্বই ব্যাংকটিকে এভাবে উর্ধ্বমূখী সূচকের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জনতা ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ, লোকসানী শাখার সংখ্যা, উচ্চ সুদবাহী আমানতের হারসহ কস্ট অব ফান্ড পূর্বের চেয়ে কমেছে এবং পরিচালন মুনাফাসহ নিট মুনাফা, মূলধন পর্যাপ্ততার হার, শ্রেণীকৃত ও অবলোপিত ঋণের বিপরীতে নগদ
আদায়ের হার, ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে দায়েরকৃত মামলা নিষ্পত্তি, অটোমেশনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সূচকসমূহ ও উর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা যোগ্য নেতৃত্বের সুস্পষ্ট উদাহরন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে জনতা ব্যাংক মুনাফার লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জনের লক্ষ্যে বছরের শুরুতেই ১৩ টি সূচককে সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে। আর এ কর্ম-পরিকল্পনা শতভাগ অর্জনের জন্য ব্যাংকের সিইও এন্ড এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদও বছরব্যাপি ছিল কর্মতৎপর। ফলশ্রুতিতে বছর শেষে ১২টি সূচকেই শতভাগের বেশী অর্জন করে জনতা ব্যাংক। এর মধ্যে কর পরবর্তী মুনাফায় ১১৩%, অবলোপিত ঋণের বিপরীতে নগদ আদায় ১১৫%, মামলা নিষ্পত্তির হারে ১৪৭% এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১০৫% সফলতা অর্জন করে ব্যাংকটি। বর্তমানে ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের হার ৮.৫০% এর কম। অথচ গত বছর এ হার ছিল ১১.৬৯%। ২০১৫ সালে ব্যাংকের লোকসানী শাখার সংখ্যা ৬০টি হতে ৩৪টিতে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা কিছুটা ঘাটতি থাকলেও বছর শেষে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় জনতা ব্যাংক। এখন ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হার প্রায় ১০.৫০%।
জনতা ব্যাংকের উর্ধ্বতন কয়েকজন নির্বাহী জানান, এসএমই ঋণ বাড়ানোর জন্য সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ি এলাকা ভিত্তিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনপূর্বক একটি রূপরেখা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করা হয়। সময় ভিত্তিক কর্মপন্থার মধ্যে রয়েছে, স্বল্প সুদবাহী আমানতের পরিমান বৃদ্ধি, পুনঃতফলিকৃত ঋণসহ শ্রেণীকৃত ঋণের সর্বাত্মক আদায় তৎপরতা জোরদারকরন, নতুন ভাবে কোন ঋণ যাতে শ্রেণীকৃত না হয় সে লক্ষ্যে প্রধান কার্যালয়সহ এরিয়া অফিস ও বিভাগীয় কার্যালয়সমূহের তদারকি জোরদার করা। পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগীয় প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট শাখা প্রধানকে অডিট কমিটি এবং ক্ষেত্র বিশেষে পর্ষদে তলবের ব্যবস্থা করার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া শ্রেণীকৃত ঋণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিজেও শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।
প্রসঙ্গত, সূত্রমতে ২০১৫ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক ৮৭১ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১০৫৬ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংক ২৭০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে।