খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬: বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা উপজেলাতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মারাত্মক সংকট রয়েছে। ঢাকায় এবং এর আশপাশের জেলায় এ সমস্যা না থাকলেও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ শূন্য। প্রত্যন্ত এলাকায় ডাক্তারদের এই শূন্যতা কেন আর এর ফলে কী প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবায়? জরুরী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সারা বাংলাদেশে সরকারিভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের অভাব না থাকলেও দেশের প্রত্যন্ত জেলা উপজেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট রয়েছে।
ডাক্তারদের নিয়োগ দেয়া হলেও প্রত্যন্ত জেলা উপজেলায় তাদের অনেকই থাকছে না। ঢাকা থেকে দূরের জেলা উপজেলাতেই ডাক্তারদের এই সংকট সবচে বেশি। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় মোট ২৪ জন চিকিৎসক পদে দশজনই নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১টি পদের মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, মেডিসিন এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদ শূন্য রয়েছে। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা গৃহিণী ডালিয়া বলছিলেন, ‘আমরা তো মনে করেন যে জায়গায় ভালো সেবা পাব সেই জায়গায় যাব। এইখানে আসলে ডাক্তারও থাহেনা সেইভাবে, ভালো কোনো ডাক্তারও নাই’।
স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য আসা হাবিবুর রহমান বলেন, সব পরীক্ষাই বাইরে থেকে করতে হয়। বলছিলেন, ‘ডাক্তার তো দেহালাম দিছে টেস্ট, তাতো ভিতরে কিছু নাই। ভিতরে গেলাম তা কলো যে মাল মেডিসিন কিচ্ছু নাই।’ কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ কামরুল ইসলাম জানান, ডাক্তাররা এসেই আবার কয়েক মাসের মধ্যে চলে যান। তিনি বলেন, ‘কনসালটেন্ট ডাক্তার উনরা সাধারণত দেখা যায় জয়েন করার পরও ঢাকা বা উন্নত লেভেলের হাসপাতালে চলে যায়। কঠিন ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ ‘কোটি কোটি টাকার ইনস্ট্রুমেন্ট দিছে সরকার যেগুলো ঐভাবে পড়ে আছে’। শুধু উপজেলা নয় জেলা সদরেও চিকিৎসক সংকট প্রভাব ফেলছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায়।
দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এক মাস জেলা হাসপাতালে ছিলেন বড়াশি গ্রামের রশিদা বেগম। তিনি বলছিলেন, ‘দুইদিনও হতি পারলোনা কয় যে বের হয়ে যাও তোমরা বের হয়ে যাও। ক্লিনিকে দেখাও ৫শ টাকা ভিজিট দিয়ে। কোন ডাক্তার? সেই ডাক্তার, যে হাসপাতালের বড় ডাক্তার’। চিকিৎসকদের উপস্থিতি আর সেবার মান নিয়েও অসন্তোষ আছে গ্রামের সাধারণ মানুষের। একই গ্রামের কয়েকজন বলছিলেন, রাত আটটার পরে রোগী নিলে বলে কি হয়তো খুলনা নিয়ে যান, নয় ঢাকা নিয়ে যান, নয় ক্লিনিকে নিয়ে যান। এজাগা ডাক্তার এহন আর আসবে না’। কোলের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় বলে জানালেন আরেকজন গৃহিণী। ‘সকাল নয়টার তে একটা পর্যন্ত, দুইটে পর্যন্তকও বইসে থাকি, কিন্তু ডাক্তাররে আর দেখাতি পারি না।
পরে ঐভাবে চলে আসি’। সর্বশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিনের হিসেবে সারাদেশে চিকিৎসক সংকটে থাকা শীর্ষ ৫ জেলার মধ্যে গোপালগঞ্জ অন্যতম। ৬০ ভাগের বেশি শূণ্যপদ নিয়ে পুরো ঢাকা বিভাগের মধ্যে গোপালগঞ্জে চিকিৎসকের অভাব সবচে বেশি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংকটের কথা শিকার করলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মোহাম্মদ নূরুল হক। তিনি বলেন, কনসালটেন্ট সারাদেশে সাড়ে তিন হাজার লাগে, আমাদের আছে হইলো পনেরশ। রিসেন্টলি ৫শ ৮৮ জনকে মন্ত্রণালয় দিয়েছে, আমরা এদেরকে পোস্টিং দিয়েছি’। সিনিয়র চিকিৎসকদের গ্রামে যেতে অনীহার কথা উল্লেখ করে মিস্টার হক বলেন, ‘সিনিয়র ডাক্তার যারা কনসালটেন্ট এবং মোটামুটি সিনিয়র তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে তারা একটা জায়গায় সেটেল করছে হটাৎ করে তাকে আমি একটা ডিস্ট্রিকে পাঠিয়ে দিলে অনেক সময় তারা যেতে চায় না’।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, তারা চিকিৎসকদের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘এই ঘাটতির কারণেই অনেকে এই সুযোগটা নিতে পারছেন, আমরা চেষ্টা করছি এই ঘাটতিটাকে যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করা যায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে কিংবা যেখানে একটু অবকাঠামোগুলো এখন পর্যন্ত সেরকম শক্ত হয়ে ওঠেনি, সেখানে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে চিকিৎসকদের রিটেনশন ওখানে রাখা একটু সমস্যা আছে’। ২০১৫ সালের স্বাস্থ্য বুলেটিনের হিসেবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ১৪টি জেলায় ৪০-৬০ভাগ পর্যন্ত চিকিৎসক পদে শূন্যতা রয়েছে। এর সবগুলোই দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলা।