Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

65খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬: মঙ্গলবার খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছিল বাংলাদেশ দল। মাঠের এক পাশের নেটে বেশ কিছুক্ষণ ব্যাটিং করলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, যে ব্যাটিংয়ের সার কথা, বলকে পিটিয়ে ছাতু বানানো! টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে অধিনায়ককে ‘ফ্লোটার’ হিসেবে তৈরি করে তোলার চেষ্টা করছেন কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে।
নেটে ব্যাটিং শেষে মাশরাফি সোজা হাঁটা দিলেন সেন্টার উইকেটের দিকে, যেখানে অপেক্ষায় হাথুরুসিংহে। আরেক দফা ব্যাটিংয়ের পালা মাশরাফির। পেছনে খুব কাছ থেকে প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে কোচ। ব্যাটিংয়ের ধরন এখানেও একই। মাঠের নানা প্রান্তে আছড়ে পড়ত থাকল বল। আর একেকটি শটে কোচের কণ্ঠের উচ্ছ্বসিত উচ্চারণ, ‘গ্রেট শট’, ‘ব্রিলিয়ান্ট’, ‘সুপার্ব’!
মঙ্গলবারের অনুশীলনের এই ঘটনা একটি উদাহরণ মাত্র। নইলে এখন কম-বেশি বাংলাদেশের প্রতিটি অনুশীলনেরই দৃশ্য নিয়মিত এটি। নেট ব্যাটিংয়ে আগের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সময় কাটাচ্ছেন মাশরাফি, কোচেরও সেদিকে একটু বাড়তি মনোযোগ।
এমনিতে দলের ট্যাকটিকস, ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং পজিশন বা এই ধরনের টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো একদমই খোলাসা করতে চান না হাথুরুসিংহে। তবে মাশরাফির ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনোযোগের প্রসঙ্গ তুলতেই কোচের মুখে হাসি। বললেন, “সে আমাকে বলতে বলতে অতিষ্ঠ করে তুলছিল যে সে ব্যাটিং করতে পারে। আমি ওকে বললাম, ‘প্রমাণ করে দেখাও!’ দেখছি, সে নেটে ভালো ব্যাটিং করছে।”
হালকা সুরে কোচ মজা করে বললেও টিম ম্যানেজমেন্টের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, মাশরাফির ব্যাটিংয়ে এই বাড়তি মনোযোগ পরিকল্পিতই এবং সেটি বাংলাদেশ কোচেরই পরিকল্পনা!
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে মাশরাফিকে ‘ফ্লোটার’ হিসেবে ব্যবহারের ভাবনাটি এসেছে কোচেরই মাথায়। কোচ মোটামুটি গবেষণা করে দেখেছেন, টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লের পর পরই ১০-১২ ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাটিং হুট করে একটু থমকে যায়। শুরুটা ভালো হলেও এই সময়ে দ্রুত ২-৩ উইকেট হারিয়ে কমে যায় রানের গতি। শুরু ভালো না হলে তো আরও বেশি, এই সময় রানের চাকা সচল থাকে না। এই সময়ই ব্যাটসম্যান মাশরাফিকে কাজে লাগানোর ভাবনা হাথুরুসিংহের।
শুরু ভালো হোক বা বাজে, এই সময়ে রানের চাকা সচল রাখার দায়িত্ব হবে মাশরাফির। মূল ভাবনা এটিই। তবে সেটি নিয়মিত ব্যাপার হবে না মোটেও। ‘ফ্লোটার’ মানে সত্যিকার অর্থেই ‘ভাসমান’ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাশরাফিকে ব্যবহার করতে চান কোচ। সেটা হতে পারে যখন-তখন, যে কোনো সময়, যে কোনো পজিশনে, যে কোনো ম্যাচে। প্রতিপক্ষ যাতে নিশ্চিত হতে না পারে কোনো কিছুতেই।
বিপিএলের আগেই ভাবনাটির কথা মাশরাফি ও টিম ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছিলেন কোচ। বিপিএলে পাঁচে উঠে এসে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা, আরও দু-একটি ম্যাচে উপরে ব্যাটিং করা – এসবের পেছনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রয়োজনটা তো ছিলই, পাশাপাশি ছিল জাতীয় দলের কোচের ভাবনার একটা পরীক্ষাও। বাংলাদেশ কোচের সঙ্গে ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও একমত হওয়ায় সহজ হয়েছিল কাজ। বিপিএলের পর বাংলাদেশের অনুশীলনেও নিজের ভাবনায় বাস্তবায়ন ‘প্রকল্প’ এগিয়ে নিচ্ছেন হাথুরুসিংহে। এমনকি মাঠে, মাঠের বাইরে মাশরাফিকে ‘ফ্লোটার’ নামে ডাকতে শুরু করেছেন কোচ!
কাজটি অবশ্য কঠিন; সেটা মানছেন মাশরাফিও। তবে বরাবরের মতোই দলের জন্য চ্যালেঞ্জ নিতে ভাবেননি এক মুহূর্তও। অধিনায়ক জানালেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী।
“ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে নতুন কিছু চেষ্টা করা কঠিন। ব্যাটিংয়ে আমার যখন সেরা সময় ছিল, তখন হলে অন্য কথা ছিল। এখন মানিয়ে নেওয়া কঠিন। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী। চেষ্টা করছি, দেখা যাক কতটা পারি। দলের প্রয়োজনের কথা ভেবেই চেষ্টা করছি।”
দারুণ একজন অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার সব উপকরণই ছিল মাশরাফির। কিন্তু চোট-জর্জর ক্যারিয়ারে মাঠে ফেরার লড়াইয়েই এতটা সময় দিতে হয়েছে যে ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনোযোগ দিতে পারেননি। ২০০৭ সালে দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মাশরাফির দুর্দান্ত ব্যাটিং দেখে সেই সময়ের ভারত অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় আক্ষেপ করেছিলেন, ‘মাশরাফির মতো একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার যদি আমার থাকত!’ কিন্তু দুর্ভাগ্যের চক্রে পড়ে মাশরাফির অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা হয়নি। তবে ব্যাটিংয়ের হাত তার সবসময়ই ছিল। মাঝে কিছু দিন একদমই ম্লান ছিলেন ব্যাট হাতে। গত কিছু ম্যাচে আবার পুরোনো চেহারার কিছুটা ফিরে পাচ্ছেন।
সেটিই মনে ধরেছে হাথুরুসিংহের। এই জিম্বাবুয়ে সিরিজেই দেখা যেতে পারে ‘ফ্লোটার’ মাশরাফিকে। হয়ত একটি-দুটি ম্যাচে। আবার একেবারেই নাও দেখা যেতে পারে। এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই লক্ষ্য। সব ম্যাচে নয়, হুটহাট ব্যবহার করা হবে মাশরাফিকে। প্রতিপক্ষকে অনুমান করতে দিতে চান না হাথুরুসিংহে, রাখতে চান ধাঁধায়।
তবে তার আগে, নিজেকে আরও শাণিত করতে হবে মাশরাফিকে। এখনও ঠিক সন্তুষ্ট নন বাংলাদেশ কোচ।
“মাশরাফি চেষ্টা করছে, ভালোও করছে নেটে। তবে ওকে আরও উন্নতি করতে হবে। ওই জায়গাটায় নিয়ে যেতে হবে নিজের ব্যাটিং। পারলে তখন অবশ্যই ব্যাটিংয়ে ভালো একটা বিকল্প হবে আমাদের।”
এটিই আপাতত মাশরাফির নতুন লড়াই। অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টি দলটি গুছিয়ে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। আর সেটির জন্যই, নিজেকে ‘ফ্লোটার’ হিসেবে গড়ে তোলা