Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

36খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬: জয় দিয়েই বছর শুরু করলো টাইগাররা। খুলনায় প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে তারা। সেই সাথে ৪ ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে গেলো ১-০তে। শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। ব্যাটসম্যানদের সমন্বিত লড়াইয়ে ৮ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটে ১৬৬ রান করে ফেলে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এটা টাইগারদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও বটে।
জিততে হলে ১৮ বলে করতে হবে ২৭ রান। ৬ উইকেট আছে টাইগারদের। ম্যাচে উত্তেজনা। ১৮তম ওভারটি ছিল ব্রায়ান ভিটোরির। ওয়াইড থেকে ৫ এলো। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা নুরুল হাসান মারলেন একটি বাউন্ডারি। ওই ওভারে উঠলো ১৪ রান। শেষ ২ ওভারে দরকার ১২ রান। সহজ তো!
স্নায়ুর ওপর তবু চাপ থাকে। নতুন একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে এই পরিস্থিতি সামলানো সাকিব আল হাসানের জন্য তো সহজ না! ১৯তম ওভারের প্রথম বলে লেগবাই। এক রান সাকিবের। পরের বলে ১ নিয়ে নুরুল স্ট্রাইক দিলেন সাকিবকে। এর পরের দুই বলে দুটি বাউন্ডারি মারলেন সাকিব। আর যখন ৩ রান দরকার তখন লুক জংয়ি ৫টি ওয়াইড রানে খেলা শেষ করে দিলেন! জ্বলে উঠলো আতশ বাজি। ১৩ বলে ২০ রান করে অপরাজিত সাকিব। ৫ বলে ৭ রান করে অপরাজিত নুরুল।
এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুতে মনে হয়েছিল সৌম্য সরকারের সাথে তামিম ইকবালের উদ্বোধনী জুটিটা ভালো হবে। কিন্তু চতুর্থ ওভারে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে সৌম্য বিদায় নেন ৭ রান করেই। তামিম লেগ সাইডে খেলে সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন। তার প্রান্তে চলে আসেন সৌম্য। তারপর যা হবার হয়েছে। ৩১ রানে ভাঙ্গে প্রথম জুটি।
গ্রায়েম ক্রেমার নিজের প্রথম ওভারেই সাফল্য পেয়েছেন। তাকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তামিম। ২৪ বলে ২৯ রান করেছেন এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান। অভিষেক ম্যাচে চার নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পেলেন শুভাগত হোম। কিন্তু ৬ রান করেই বোল্ড তিনি। ৭৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন চাপে বাংলাদেশ।
এরপর মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান মিলে ৪৪ রানের জুটি গড়লেন। সিবান্দার জন্য প্রাণ পেয়েছিলেন চমৎকার খেলা সাব্বির। কিন্তু ক্রেমারকে একটি ছক্কার মারার পরের বলে আবার মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন। সাব্বির ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেছেন ৩৬ বলে। ৪টি চার ও ১টি ছক্কা মেরেছেন।
সাব্বিরের বিদায়ের সময় ৩৩ বলে ৪৬ রান দরকার বাংলাদেশের। সম্ভব। কিন্তু তার পর দুই ওভারে ফিরে যান ২৬ রান করা মুশফিক ও ৭ রান করা মাহমুদুল্লা। বাকি দায়িত্বটা তখন বিশ্বের সেরা অল রাউন্ডার সাকিব ও নবীন নুরুলের। তারা জয় নিয়েই ফিরেছেন।
এর আগে ১৬৩ না, জিম্বাবুয়ের সংগ্রহটা হতে পারতো আরো বেশি। কিন্তু ২০ ওভারের ম্যাচের শেষ ৩ ওভারে ফেরার গল্প লিখলো বাংলাদেশ। আরো নির্দিষ্ট করে বললে সেই গল্পটা লিখলেন দুই তরুণ পেসার আল আমিন হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমান। শেষটায় ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন তারা। নইলে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহটা আরো বেশি হতে পারতো।
আগের সফরে ছিলেন না হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। কিন্তু তিনি তো জিম্বাবুয়ের সম্পদ! সেটাই প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলে। তার বীরত্বে ১৭ ওভারে ২ উইকেটে ১৪৭ রান জিম্বাবুয়ের। এর পরের গল্পটা আল আমিন ও মুস্তাফিজের।
১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে সিকান্দার রাজা ঠিক মতো খেলতে পারেননি। তবু রানের জন্য ছুটেছিলেন। উইকেটের পেছনে অভিষিক্ত নুরুল হাসান রান আউট করে দিয়েছেন মাসাকাদজাকে। ৫৩ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৭৯ রান স্পর্শ করে ফিরেছেন মাসাকাদজা। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন তিনি।
পরের ওভারটি মুস্তাফিজের। প্রথম দুই বলে এল্টন চিগুম্বুরা (৩) ও লুক জংয়িকে (০) আউট করে দিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেন। চিগুম্বুরা সামনে এগিয়ে এসে লেগ স্টাম্প হারিয়েছেন। লুকের গেছে মিডল স্টাম্প। শন উইলিয়ামস হ্যাটট্রিক হতে দেননি। ওই ওভারে ২ রান দিলেন মুস্তাফিজ।
শেষ ওভারটি আল আমিনের। প্রথম বলটি ফুল টস। সিকান্দার (২) তুলে মারলেন। ডিপ কভারে মাহমুদুল্লা সহজ ক্যাচই নিয়েছেন। শেষ বলে বোল্ড উইলিয়ামস (২)। এইভাবেই শেষ তিন ওভারে দুটি করে উইকেট তুলে নিয়ে আল আমিন ও মুস্তাফিজ সামলেছেন জিম্বাবুয়েকে।
তার আগে ঠেকানো যাচ্ছিল না জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার মাসাকাদজা ও ভুসি সিবান্দাকে। ১০১ রানের জুটি গড়েছেন তারা। মাশরাফি বিন মুর্তজা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এক ওভারে তাকে তিনটি বাউন্ডারি মেরেছেন মাসাকাদজা। সাকিব আল হাসানকে এক ওভারে দিতে হয়েছে ১৫ রান। তবে ৪৬ রান করা সিবান্দাকে সাকিব আউট করার পর একটু একটু করে মুঠো শক্ত করেছে বাংলাদেশ। ৪ ওভারে মুস্তাফিজ দিয়েছেন ১৮ রান। নিয়েছেন ২ উইকেট। আল আমিন ৪ ওভারে ২৪ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট। এই দুজন বাদে বোলারদের পারফরম্যান্স খুব উজ্জ্বল না হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যাটসম্যানরা জিতিয়েছে বাংলাদেশকে।