Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

51খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে তাঁর সরকার পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার পর সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর পর আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আর কেউ আমাদের খাটো করে দেখার অবকাশ পাবে না। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা যদি বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পারি, তাহলে আমরা কেনো পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবো না? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে কাজী মাহবুব উল্লাহ স্মৃডু পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেক মানুষ বাংলাদেশকে খাটো করে কথা বলতো। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আর সেই অবস্থানে নেই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি বলেই তা সম্ভব হয়েছে।’ পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেদের টাকাতেই যে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি, তা এখন বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণিত। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনকারী দল এখন দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বলেই আজ আমরা এই অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের দুর্নাম দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকেই অনেক সমালোচনা করেছেন। যে প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি, যার অর্থই বরাদ্দ হয়নি, তা নিয়ে আমার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের দুর্নাম দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কারা করেছেন, কাদের প্ররোচনায় সেটা হয়েছিল আপনারা তা ভালোভাবেই জানেন। সে কথা আমরা আর বলতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনভাবে ধোঁয়াসা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে, যেনো আমরা দুর্নীতি করে সব টাকা লোপাট করে দিয়েছি। একটি পয়সা তারা দেয়নি, তার আগেই এই ধোঁয়া তোলা হলো। দুইটা বছর আমার ওপর একটা আজাব সৃষ্টি করা হয়েছিল।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ার ফলেই দেশে এই মহানির্মাণযজ্ঞ শুরু করা গেছে।
বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আমরা মানুষকে দেবার মানসিকতা নিয়েই রাজনীতিতে এসেছি, নীতি এবং আদর্শের ভিত্তিতেই রাজনীতি করি। ব্যক্তি স্বার্থে রাজনীতি করি না। নিজস্ব বিত্তবৈভব গড়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চিন্তা আমরা করি না। সুতরাং পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে আমাদের যে দুর্নাম দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছিল, তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে কারণেই পদ্মা সেতু নির্মাণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। তারা টাকা দিক বা না দিক, নিজস্ব টাকায় হলেও এই সেতু আমরা নির্মাণ করবোই। আমরা তা পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি ব্যাংকের এমডি পদে ‘এক বিশেষ ব্যক্তিকে’ রাখা না রাখার বিষয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ার জন্য তাঁকে হুমকিও দেয়া হয়। তিনি বলেন, আমাকে সরাসরি টেলিফোন করে একটি বিশেষ দেশের পক্ষ থেকে হুমকি দেয়া হয়, ব্যাংকের এমডি পদে ওই বিশেষ ব্যক্তিকে পুনর্বহাল করা না হলে, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই এমডির পদ তো আমার দেয়ার কোনো সামর্থ ছিলো না। কারণ, যার এই পদ, তিনি তো কোর্টে মামলা করেছিলেন সরকারে বিরুদ্ধে। কেউ মামলা করে আদালতে আইনী লড়াইয়ে পরাজিত হলে এর দায়দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর জন্য জনগণের স্বার্থে ব্যাঘাত বা সেতু নির্মাণ কোনভাবে বন্ধ হতে পারে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মুখের ওপর বলে দিয়েছিলাম, পদ্মা সেতু আমরা নিজেরা করতে পারবো। আমি তখুনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেই এবং আমরা দেখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি যে, আমরাও পারি। তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের শক্তিই বড়ো শক্তি। কিছু রাজাকার-টাজাকার আর স্বাধীনতা বিরোধী ছাড়া আমরা ১৬ কোটি মানুষ আমাদের দেশটাকে সম্মানজনক জায়গায় নিতে পারি।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘অনেকে মন্তব্য-টন্তব্য করেছিলেন। অনেকে অনেক কিছু লিখে টিখে আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করতে চেয়েছিলেন।’
বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুবউল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জোবায়দা এম লতিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, ড. আবুল কালাম আজাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন এবং সংসদ সদস্য বেগম নিলুফার জাফরউল্লাহ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য আনিসুল হক, বিজ্ঞানে অবদানের জন্য ড. হাসিনা খান, খেলাধুলায় ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে এ বছরের কাজী মাহবুবউল্লাহ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। মাশরাফি জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেলার জন্য সিলেটে থাকায় তার পিতা গোলাম মর্তুজা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ ছাড়া, বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত সকলেই একটি ক্রেস্ট, সনদপত্র, এক লাখ টাকার চেক এবং উত্তরীয় গ্রহণ করেন।