খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬: ক্রিকেট জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা। এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। ফিক্সিং ছাড়াও ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত কলঙ্কজনক দিন আজ। তাই এই দিনটি আসলেই ফাস্ট বোলারদের মাথার ওপর চলে আসে একটি বোঝা তা হলো ‘বডিলাইন’।
ক্রিকেটে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান তেমনি একজন ব্যক্তি। নিজেই একের পর এক তৈরি করে গেছেন ইতিহাস। তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে ইতিহাস। এই ব্র্যাডম্যানকে আটকাতে গিয়েই সৃষ্টি হয়েছে ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত এক ইতিহাস—বডিলাইন।
১৯৩০-এর অ্যাশেজে ১৩৯.১৪ গড়ে ৯৭৪ রান করে ব্র্যাডম্যান একাই ইংরেজদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সিরিজ জেতান ২-১ এ। ১৯৩২-৩৩-এর পরের অ্যাশেজে ইংলিশরা ভালোভাবেই বুঝতে পারে, ব্র্যাডম্যানকে থামানো আর অ্যাশেজ জয় একই সুতোয় গাঁথা। ব্র্যাডম্যানকে থামানোর উপায় খুঁজতে গিয়েই জন্ম নিল ক্রিকেটের এক বিতর্কিত ইতিহাসের।
আগের অ্যাশেজেই ব্র্যাডম্যানের লেগ স্ট্যাম্পের লাফিয়ে ওঠা বল খেলতে একটু অসুবিধে হচ্ছিল। সেই সূত্র ধরেই ইংরেজ দলনেতা ডগলাস জার্ডিনের মাথায় এল বডিলাইন বা ফার্স্ট লেগ থিওরি। জার্ডিনের সেই তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটান তাঁর দুই ফাস্ট বোলার হ্যারল্ড লারউড ও বিল ভোস। বডিলাইনের ধারণাটি নতুন কিছু না হলেও ১৯৩২-৩৩-এর অ্যাশেজের সাফল্যের নেপথ্যে ছিল ইংরেজ ফাস্ট বোলারদের দ্রুতগতির নিখুঁত ও আগ্রাসী বোলিং।
ফার্স্ট লেগ থিওরি বা বডিলাইনের মূল কথা জটিল কিছু নয়। মোদ্দা কথা হলো, ব্যাটসম্যানের শরীর লক্ষ্য করে একের পর এক গোলার মতো বল ছুড়ে দেওয়া। তৎকালীন প্রেক্ষাপটে লেগ সাইডে ফিল্ডারের সর্বোচ্চ সংখ্যা নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না, ছিল না এখনকার মতো নিরাপত্তা সরঞ্জামের এত ব্যবহার। অতিপ্রয়োজনীয় হেলমেটের প্রচলনই এই ১৯৭০-এর দশকে, এলবো গার্ড, থাই বা চেস্ট গার্ডের প্রচলনও সমসাময়িক সময়ে। সেই অরক্ষণীয় সময়ে লারউড-ভোসরা চার-পাঁচজন ফিল্ডার দিয়ে লেগ সাইডে ব্যাটসম্যানকে ঘিরে ধরে তাঁর শরীর লক্ষ্য করে নিখুঁত লাইন লেনথে ক্রমাগত ছুড়ে গেছেন একেকটি গোলা। শরীরের দিকে গোলার মতো ধেয়ে আসা বলের আঘাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে যেয়েই ব্যাটসম্যান ক্যাচ দিয়ে আসেন কাছেই ওত পেতে থাকা ফিল্ডারকে।
ইংল্যান্ড হাতেনাতেই এর ফল পায়। বিল উডফুল-বার্ট ওল্ডফিল্ডরা আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। ব্র্যাডম্যান দুই দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করলেও তা হয় আগের অ্যাশেজের তাঁর ব্যক্তিগত রানের অর্ধেকের চেয়েও অনেক কম। ইংল্যান্ড সিরিজ জিতে নেয় ৪-১ এ।
এই নিয়ে তখন থেকেই চলে তর্ক-বিতর্ক। যদিও বডিলাইন বোলিং জার্ডিনের আগেও ছিল, ক্ষীণধারায় বইছে আজও, তবে তা কখনোই ১৯৩২-৩৩-এর মতোন এতটা সাফল্য এবং কুখ্যাতি অর্জন করেনি। পরে বডিলাইন বিভিন্ন আইন দ্বারা নিষিদ্ধও করা হয়। তবে জীবদ্দশায় ভোস তাঁর কৃতকর্মের জন্য কখনোই অনুশোচনা করেননি। তিনি যখন এই বোলিং করেছেন তখন তা আইনবহির্ভূত কিছু ছিল না।
বডিলাইন শব্দটির প্রথম ব্যবহারকারী হিসেবে জ্যাক ওরাল নিজেকে দাবি করলেও খুব সম্ভবত সিডনির সাংবাদিক হাগ বাগিই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ব্যবহার করেন বডিলাইন শব্দবন্ধটি। তিনি তাঁর সংবাদপত্রে টেলিগ্রামে বার্তা পাঠানোর সময় খরচ কমানোর জন্য ‘ইন দ্য লাইন অব বডি’র পরিবর্তে ‘বডিলাইন’ শব্দটি ব্যবহার করেন, পরবর্তী সময়ে যা দ্রুত পায় অমরতা।