খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬: নারায়ণগঞ্জে দুই শিশুসহ পাঁচজনকে হত্যার রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ। দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর এ থেকে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য।
যে দুজনকে আটক করা হয়েছে, জানা গেছে, তারা হলেন- তাসলিমার স্বামী শফিকুল ও শফিকুলের ভাই শরিফ।
নিহতদের মধ্যে একজন হলেন তাসলিমা। তাসলিমার মা মোরশেদা বেগম ধানমন্ডিতে থাকেন। তার কাছ থেকে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছেন, যা এই হত্যাকাণ্ডের গোড়ায় যেতে সহায়তা করতে পারে।
মোরশেদা বেগম যে তথ্য দিয়েছেন, তা হলো- তাসলিমার সঙ্গে তার স্বামী শফিকুল ইসলামের বিয়ে হয় ১৩ বছর আগে। রাজধানীর কলাবাগান উত্তর ধানমন্ডির পোড়াবাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন শফিকুল। ঋণের বোঝা ছিল তাসলিমার ওপর। ধার-দেনায় ডুবে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়ির মালিকের কাছ থেকেও ১ লাখ ধার নিয়েছিলেন তাসলিমা।
মোরশেদা বেগম জানান, তাসলিমার ঋণের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না তারা। কত টাকা ঋণ ছিল, টাকা দিয়ে সে কী করতো, তার কিছুই জানতেন তিনি। তবে যখন পাওনাদারদের সঙ্গে বিবাদ জোরালো হতে থাকে, তখন তিনি এ বিষয়ে জানতে পারেন।
মেয়েকে সমস্যা থেকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেন মোরশেদা। কলাবাগানের ওই বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাদের টাকা শোধ করে দেওয়ার শর্তে তাসলিমাকে গোপনে নারায়ণগঞ্জে তার বোন ইয়াছমিনের বাসায় রেখে দেন। তারপর তাসলিমার জন্য মোরশেদা বেগম একটি বাড়ি ভাড়া করেন। গত মাসে ভাড়া নেওয়া এই বাড়িতে তাসলিমার সঙ্গে তার ভাই ও তাসলিমার দেবর স্ত্রীকে নিয়ে থাকা শুরু করে।
তাসলিমার মা মোরশেদার ধারণা, তাসলিমার ধার-দেনার সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র থাকতে পারে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে এখনো পরিষ্কার কোনো তথ্য পায়নি।
এদিকে নিহত ৫ জনের লাশ ময়নাতদন্তের পর এখন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
সিআইডির ফরেনসিক টিমের তদন্তের পর শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ৪টার দিকে লাশগুলো হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। সিআইডির এএসপি এহসান উদ্দিন চৌধুরী জানান, হত্যাকাণ্ডের মিশনে একাধিক লোক ছিল বলে এটা ধারণা করা হচ্ছে। ভোতা অস্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। তবে ফরেনসিক রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, বাসায় তৈরি করা রুটি-হালুয়া এখনো নষ্ট হয়নি। এতেই ধারণা করা হচ্ছে কয়েক ঘণ্টা আগে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
তিনি জানান, এক রুমে খাটে একজন পুরুষ ও নিচে নারী ছিলেন। আর অন্যরুমে একজন নারী ও দু’জন শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাবুরাইল এলাকার একটি বাসার নিচ তলা থেকে পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন, তাসলিমা (৩৫), তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (০৫), তাসলিমার ভাই মোরশেদুল (২২) ও জা লামিয়া (২৫)। ওই বাসার ঠিকানা- ২নং বাবুরাইল, বাসা নং ১৩১/১১; যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইসমাইল হোসেনের বাড়ি। বাড়িটি স্থানীয় খানকাহ শরীফের পাশে। গতবছর (২০১৫ সাল) নভেম্বরে এ বাড়িতে ভাড়া আসেন তারা।