Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16খোলা বাজার২৪,মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬: বিবাহ সূত্রে বা স্পাউস ভিসায় যুক্তরাজ্যে বসবাসকারীরা দেশটিতে গমনের আড়াই বছরের মধ্যে ইংরেজি ভাষা শিখতে না পারলে তাদের সেখান থেকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
এছাড়া স্কুল-কলেজ বা আদালতের মতো যেসব জায়গায় নিয়ম রয়েছে সেখানে মুসলমান নারীদের তাদের মুখের পর্দা সরিয়ে কথা বলার নিয়মও চালু করা হতে পারে।
আগামী অক্টোবর থেকে যারা যুক্তরাজ্যে বসবাসের জন্যে আসবেন তাদের জন্য এমন নিয়ম চালু করা হবে বলে বিবিসি রেডিও ফোর’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান ক্যামেরন।
সম্প্রতি ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে তা প্রতিরোধে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন জাতি ও ভাষাভাষীর বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীকে মূলধারায় নিয়ে আসতে এক কৌশলের অংশ হিসেবে ইংরেজি শেখানোর এই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্যামেরনের ভাষ্য, যুক্তরাজ্যের কোনো কমিউনিটিতে বিভাজন দেখতে চান না তিনি। অভিবাসীরা যাতে মূলধারার সঙ্গে মিশে যেতে পারে এমনটি দেখতে চান তিনি।
ইংরেজি বলার দক্ষতা ও উগ্রবাদের মধ্যে কোনো ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক’ রয়েছে এমনটা জোর দিয়ে বলছেন না দাবি করে ক্যামেরন বলেন, “কিন্তু আপনি যদি ইংরেজি বলতে না পারেন, তাহলে আমাদের দেশের মূলধারায় মিশতে অসুবিধায় পড়বেন।
ডেভিড ক্যামেরন ডেভিড ক্যামেরন
“এতে হঠাৎ করে আপনি নিজের কাছে নিজের পরিচয় সংকটে পড়তে পারেন। তারপর দায়েশ (আইএস) কোনো উগ্র বার্তায় আপনি সহজেই প্রভাবিত হতে পারেন।”
ইংরেজি শেখানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ২ কোটি পাউন্ডের একটি তহবিলও ঘোষণা করেছেন।
এ প্রক্রিয়ায় নতুন ইংরেজি টেস্ট প্রবর্তন করা হবে। ভাষা শেখায় কোনো অগ্রগতি না হলে বিবাহ সূত্র ­বা স্পাউস ভিসায় দেশটিতে কারও থাকার নিশ্চয়তা নেই; এমন কি তাদের ছেলেমেয়ে থাকলেও।
মূলত দেশটিতে বসবাসরত মুসলমান জনগোষ্ঠীর নারীরা জীবনযাপনে ‘বৈষম্যের স্বীকার’ হয় এবং ভাষা শেখায় পিছিয়ে থাকে বলে টাইমস পত্রিকায় এক নিবন্ধে দাবি করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারীদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের এক লাখ ৯০ হাজার মুসলিম নারী ইংরেজি ভাষা জানেন না, যার মধ্যে ৪০ হাজার ইংরেজি একদমই বলতে পারেন না।
“এটা বিস্ময়ের কিছু নয় যে, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারীদের ৬০ শতাংশ অর্থনৈতিকভাবে ইন্যাক্টিভ বা অচল,” বলেন ক্যামেরন।
রেডিও সাক্ষাৎকারে ক্যামেরন বলেন, স্কুল-আদালত ইত্যাদি যেখানে নিয়ম রয়েছে সেখানে মুসলিম নারীদের তাদের মুখের পর্দা সরিয়ে কথা বলতে হবে।
স্পাউস ভিসায় বসবাসরত মুসলিম নারীদের ইংরেজি বলতে না পারার কারণ হিসেবে তাদের ‘ঘরে বন্দি করে’ বিচ্ছিন্ন রাখা হয় বলে পরিবারগুলোর পুরুষদের দায়ী করেন যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল দলের এই নেতা।
ওইসব মুসলিম পুরুষদের উদ্দেশে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নারীদের পুরুষ ছাড়া ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন ঘটনা আমাদের দেশে ঘটছে; মূল্যবোধ উদারতা এবং সহনশীলতার জন্য গর্বিত আমাদের দেশে এমনটা ঘটছে।
. .
“বিশ্বের বহুজাতিক, বহু ধর্মের সফল গণতন্ত্রের মধ্যে আমরা অন্যতম; তবে এখানে বিচ্ছিন্নতা মানুষকে এগোতে দিচ্ছে না। এটি ব্রিটিশ মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এটি শেষ হতে হবে।”
জনগণের পোশাক পরিচ্ছদসহ ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্ব রয়েছে বললেও শুধু ধর্মীয় কারণে স্কুল-কলেজের পোশাক সম্পর্কিত নীতি লঙ্ঘনের বিরোধী প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন।
“আমাদের দেশে মানুষ কী পরতে চায়, কীভাবে বাস করতে চায়, এই স্বাধীনতা তাদের থাকতে হবে। তবে স্কুল কলেজের পোশাক সম্পর্কিত নীতি শুধু ধর্মীয় কারণে লঙ্ঘন নয়। এ বিষয়ে স্কুলের নীতির প্রতি নমনীয়তা দেখাতে হবে।”
অতীতে স্কুলে মুসলিম মেয়েদের হিজাব ও জিলবাব পরা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এবং অনেক ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসও হিজাব বিতর্ক থেকে দূরে থাকেনি।
লেবার দলীয় সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র তার স্থানীয় সার্জারিতে আসা মুসলিম নারীদের সঙ্গে নেকাব (মুখের পর্দা) পরা অবস্থায় কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন বলায় তোপের মুখে পড়েছিলেন।
এই প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নারীদের মুখের পর্দা সরানো সম্পর্কিত ধর্মীয় নাজুক বিষয় নিয়ে কথা বললেন। ফ্রান্সসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে মুখ ঢাকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এদিকে এ ধরনের বক্তব্যে মাধ্যমে ডেভিড ক্যামেরন মুসলিম কমিউনিটিকে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা এন্ডি বার্নহাম।
বার্নহাম বলেন, “এতে সমস্যাকে আরও জটিল করছেন তিনি।