খোলা বাজার২৪,মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬: নরসিংদীথেকে তোফাজ্জল হোসেন: বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ( বিএডিসি) আশুগঞ্জ – পলাশ সেচ প্রকল্পে বরাদ্ধ পাওয়ার আগেই কোটি টাকা হরিলুটের ব্যবস্থা করেছে বিএডিসি কর্মকর্তা ও অসাধু কিছু ঠিকাদার। বিএডিসি কার্যালয় সূত্রে জানায় নতুন অর্থবছরে আশুগঞ্জ – পলাশ সেচ প্রকল্পে ২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর বরাদ্ধ পাওয়ার আগেই কিছু অসাধু ঠিকাদারকে দিয়ে প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে ফেলেছেন বিএডিসি কর্মকর্তারা। প্রকল্প বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্যে গড়মিল পাওয়া যায়।
গত সপ্তাহে নরসিংদীর পলাশ অঞ্চলে সেচ নালা আংশিক পরিস্কার করে প্রথম ধাপের কাজ সমাপ্তি করে সেচের জন্য পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নরসিংদী বিএডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার মোল্লা জানান, প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু সেচ মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ার কারনে, বরাদ্ধ না পেয়েও আমরা আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে স্থানীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে দৈনিক হাজিরার শ্রমিক দিয়ে সেচ নালা পরিস্কার করে সেচের জন্য পানি ছেড়ে দিয়েছি।
সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসেম জানান, সেচ মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ার কারনে প্রকল্প পরিচালকের অনুমোদিত ঠিকাদারদের মাধ্যমে প্রথম ধাপের কাজ শেষ করেছি। ঠিকাদারদের বিল বরাদ্ধ পাওয়ার পর পরিশোধ করা হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়া ঠিকাদার নিয়োগ করেছেন কিভাবে ? জানতে চাইলে তিনি জানান,আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকায় ঠিকাদার প্রক্রিয়া কাজ সম্পন্ন করেছে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন। আপনারা তার সাথে কথা বলেন।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন জানান, আমরা ঠিকাদারের তালিকা পাঠিয়েছিলাম প্রকল্প পরিচালকের নিকট। তিনি তালিকা দেখে ঠিকাদার বাছাই করেছেন। ঠিকাদার বাছাই করার এখতিয়ার আমার নেই। বাছাই করেছেন প্রকল্প পরিচালক।
আশুগঞ্জ – পলাশ সেচ প্রকল্প পরিচালক ও বি-বাড়ীয়া বিএডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান জানান, প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু সেচ মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ার কারনে বরাদ্ধ পাওয়ার আগেই আমরা স্থানীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে প্রথম ধাপের কাজ শেষ করেছি। বরাদ্ধ পাওয়ার পর বিল পরিশোধ করবো। ঠিকাদার বাছাই করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি নরসিংদীর কোন ঠিকাদারকে চিনি না। নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার মোল্লা আমাকে তালিকা পাঠিয়েছে আমি শুধু অনুমোদন দিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নরসিংদীর স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদার জানান, নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার মোল্লা নরসিংদীতে যোগদানের পর নিয়মিত অফিসে আসেনা। সরকারী গাড়ী শুধু উনার পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেন। সপ্তাহে একদিন অফিসে এসে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন। নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়মিতভাবে না পেয়ে নানারকম ভোগান্তির শিকার হন সেচ গ্রাহকরা।
নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার মোল্লা, সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসেম,উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন এবং বি-বাড়ীয়া বিএডিসির হিসাব রক্ষক আনোয়ার হোসেন ও প্রকল্প পরিচালক ওবায়দুর রহমান ঠিকাদারদের সাথে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ের রফা-দফা করেছেন। আর সে কারনেই বরাদ্ধ পাওয়ার আগেই প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে ফেলেছেন। প্রকল্পে বরাদ্ধ প্রায় ২১ কোটি টাকার অর্ধেক টাকা হরিলুট করার জন্যই কর্মকর্তারা টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়া পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। যার প্রমাণ দেখতে পাওয়া যাবে প্রথম ধাপের কাজ পরিদর্শন করলে। কারন প্রথম ধাপে ২০ শতাংশ কাজও করা হয়নি। অথচ প্রথম ধাপের কাজ শেষ ঘোষণা করে সেচের পানি ছেড়ে দিয়েছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলীর অনিয়মিত অফিসে আসা ও সহকারী প্রকৌশলীর অসুস্থতার সুযোগে চতুর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন ঠিকাদারদের সাথে গোপন চুক্তি করে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিভিন্ন প্রকল্প থেকে সরকারী টাকা হরিলুট করে বিএডিসি’র বি-বাড়ীয়া অঞ্চলের হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন,সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসেম,উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন নিজ নিজ শহরে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন। সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সঠিক তদন্ত করলেই সরকারী টাকা হরিলুটের সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে।