খোলা বাজার২৪,মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬: নরসিংদীথেকে তোফাজ্জল হোসেন: অধিক মোনাফার আশায় নরসিংদীর ৬টি উপজেলায় চিনি মেশানো ভেজাল গুর তৈরির হিড়িক পড়েছে। জেলার নরসিংদী সদর, রায়পুরা, পলাশ, বেলাব, শিবপুর ও মনোহরদী উপজেলায় উৎপাদিত সু-মিষ্টি আখের গুড়ের সুনাম থাকায় দেদার আখের গুড় তৈরী করা হচ্ছে চিনি মিশিয়ে। এক শ্রেণীর মোনাফা লোভি গুড় ব্যবসায়ীরা চিনি ও হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় তৈরী করে বাজারজাত করছে। আর এসব গুড় ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকদফা এসব গুড় তৈরীর কারখানায় মোবাইল কোর্ট হানা দিলেও বন্ধ হয়নি ভেজাল গুড় তৈরী। সর্বশেষ গতকাল রবিবার জেলার মনোহরদী উপজেলার হাতিরদিয়া গ্রামে ভেজাল বিরোধী অভিযানে প্রায় ৪০ মন গুড় ও ৩০ বস্তা চিনি, ১০ বস্তা গমের আটা, ১০ কেজি চুন ও রং সহ আব্দুল হালিম নামে এক গুড় ব্যবসায়ীকে আটক করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। উদ্ধার করা গুড় ও উপকরণ স্থানীয় নদীতে ফেলে ধ্বংস করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম হওয়ায় গুড়ে চিনি মেশাচ্ছে গুড় ব্যবসায়ীরা। ভোর বেলা বাড়ীর ভিতরে কড়াইয়ে চিনির রস জাল করে লালচে বর্ণের হলেই রং মিশিয়ে ঢেলে কড়াইয়ে তার পর একটু জাল দিলেই চিনি গলিয়ে রসের সংগে মিশে তৈরী হচ্ছে গুড়। বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম ৪১ টাকা। আর গুড় বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা। গুড়ে চিনি মিশিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি গুড়ে পাচ্ছে অন্তত ২০ টাকা বেশী। নরসিংদী বাজারের জনৈক গুড় ব্যবসায়ী বলেন, চিনির রস লালচে বর্ণেল হলেই এতে বিভিন্ন উপকরন মিশিয়ে দেয়া হয়। সেগুলো গলে গেলে হাইড্রোজ, ফিটকারিতে রস গারু হয়ে গুড়ের রং হয় উজ্জল। চিনি, হাইড্রোজ, ফিটকারী মিশ্রিত গুড় দেখতে চকমকে ও অনেক সুন্দর লাগে। সে কারনে বাজারে এর চাহিদাও অনেক বেশী। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিটি গুড় ব্যবসায়ী একইভাবে গুড় তৈরী করছেন। জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে আমদানী হওয়া গুড়ের ৯৮ ভাগই চিনি মিশ্রিত গুড়। প্রকৃত আখের গুড় পাওয়া কঠিন। যদিও কোন দোকানে পাওয়া যায় তাও প্রতিকেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। নরসিংদী বাজারের জনৈক আড়ৎদার সুধির চন্দ্র জানান, বর্তমান হাটবাজারে আমদানী গুড়ের অধিকাংশই চিনি মিশ্রিত এবং ভেজাল। আমরা কেনার সময় টের পেলেও কিছু করা থাকে না। কারন চিনি মিশ্রিত ব্যতিত স্বচ্ছ গুড় পাওয়া এখন দুস্কর।
নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা. পুতুল রায় জানান, চিনি ও অন্যান্য উপকরন মিশিয়ে জাল করে একত্রিত করলে সেটি বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আর এ চিনি মিশ্রিত ভেজার গুড় দিয়ে কোন খাদ্য দ্রব্য তৈরী করে খেলে মানব দেহের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, স¤প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভেজাল বিরোধি অভিযান চালিয়ে বেশকিছু অবৈধ মালামল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজনকে আটক করে জেল জরিমানা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।