Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

57খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৬ : জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুই মাস আগে গ্রেপ্তারের পর ফেরত পাঠানো ২৬ বাংলাদেশি নিজের দেশের সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনায় ছিলেন বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুর।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ওই ২৬ জন ‘জঙ্গি মতাদর্শে বিশ্বাসী একটি গোপন পাঠচক্রের’ সদস্য ছিলেন। আল কায়েদা নেতা আনোয়ার আল-আওলাকির মতো ব্যক্তিদের প্রচার করা মতাদর্শের ‘চর্চা’ করতেন তারা। আল-কায়েদা এবং ইরাক-সিরিয়ার উগ্রপন্থি দল আইএস-এর সশস্ত্র জিহাদের মতাদর্শেও তাদের ‘সমর্থন’ ছিল।
এর বাইরে আরও একজন বাংলাদেশিকে সিঙ্গাপুরে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি ওই চক্রের সদস্য না হলেও ‘জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন’ বলে সিঙ্গাপুরের ভাষ্য।
বাকি ২৬ জনের মতো তার কাছ থেকেও জিহাদি বই ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করার কথা জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের বিবৃতির একটি অনুলিপি সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমস প্রকাশ করেছে।
সিঙ্গাপুরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে থাকা ওই ২৭ জনকে গত ১৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। সবার কাজের অনুমতি বাতিল করে ২৬ জনকে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশে।
তাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সিঙ্গাপুর সরকারে পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করা হয় বলেও চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক খবরে বলা হয়।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি বাকি একজন অন্যদের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে ‘অবৈধভাবে’ সিঙ্গাপুর ত্যাগ করার চেষ্টা করেছিলেন জানিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাজা শেষে তাকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এরই মধ্যে গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তরার এক বাসা থেকে ওই ২৬ জনকে ‘আটক’ করে পুলিশ। পরে উত্তরা পূর্ব থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে ১৪ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের কারাগারে পাঠানোর জন্য আদালতে তোলা হলে ২৭ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বিষয়টি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আসে। তবে ঠিক কী কারণে কবে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তা বুধবার সিঙ্গাপুর সরকারের বিবৃতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত স্পষ্ট ছিল না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মারুফ হোসেন সরদার বুধবার বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের পর ১৪ জনকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাদের বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে।”
বাকিদের ক্ষেত্রে অভিযোগের তেমন কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ওই ১৪ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের মোস্তফা নামের একটি মার্কেটের কাছে এক মসজিদে সপ্তাহে একদিন তারা একত্রিত হতেন এবং বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা করতেন। সেখানে জিহাদি বক্তব্য প্রচার করে এবং ভিডিও দেখিয়ে অন্যদের জঙ্গি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতেন তারা।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উগ্রপন্থি ইসলামী দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ‘ক্ষোভ’ ছিল গ্রেপ্তার ওই বাংলাদেশিদের। এ কারণে দেশে ফিরে ‘সরকারের বিরুদ্ধে সংশস্ত্র জিহাদ’ শুরু করতেও উৎসাহ দেওয়া হতো ওই দলের সদস্যদের।
“জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতা আছে বলে ধারণা করা হয়- এমন বাংলাদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহযোগিতাও তারা দিয়েছেন।”
সিঙ্গাপুর সরকার বলছে, এই বাংলাদেশিরা নিজেদের মধ্যে জিহাদি বই ও ভিডিওসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিনিময় করতেন এবং দল বাড়াতে সতর্কতার সঙ্গে অন্য বাংলাদেশিদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতেন।
“এদের মধ্যে কয়েকজন ধর্মের নামে সশস্ত্র জিহাদ সমর্থন করার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। কয়েকজন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে জিহাদে যোগ দেওয়ার কথাও তারা ভেবেছিলেন। আর কয়েকজন বলেছেন, বিভিন্ন স্থানে শিয়া মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে নৃশংস হামলার ঘটনা তারা সমর্থন করেন, কারণ শিয়ারা ভিন্ন মতাবলম্বী।”
এই বাংলাদেশিদের কাছ থেকে জিহাদি বই ছাড়াও এমন কিছু ভিডিও পাওয়ার কথা সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ বলছে, যেখানে জঙ্গি আস্তানায় শিশুদের অস্ত্র চালনা এবং খালি হাতে লড়াইয়ের প্রশিক্ষণ দিতে দেখা যায়।
এছাড়া কীভাবে ধারালো অন্ত্র ব্যবহার করে নিঃশব্দে হত্যা করতে হয় তার নির্দেশনা দিয়ে হাতে আঁকা ছবিও তাদের কাছে পাওয়া গেছে। এসব ছবি ও ভিডিও সিঙ্গাপুরের গণমাধ্যমগুলো বুধবার প্রকাশ করেছে।
“তদন্তে দেখা গেছে, এই গ্রুপের কয়েকজন সদস্য বিদেশে গিয়ে সহিংসতা চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন। সিঙ্গাপুরে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
সেই ২৭ জন
বাংলাদেশের কারাগারে থাকা ১৪ জন হলেন- কুমিল্লার গোলাম জিলানী (২৬), মাহমুদুল হাসান (৩০) ও নুরুল আমিন (২৬), টাঙ্গাইলের আবদুল আলীম (৩৩), আমিনুর (৩১) ও শাহ আলম (২৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাফর ইকবাল (২৭), কুড়িগ্রামের আলম মাহবুব (৩৪), মুন্সীগঞ্জের মোহাম্মদ জসিম (৩৩), চুয়াডাঙ্গার আবদুল আলী (৪০), ঢাকার সাইফুল ইসলাম (৩৬), চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডলার পারভেজ (৩৫), পাবনার আশরাফ আলী (২৭) ও ঝিনাইদহের আকরাম হোসেন (২৭)।
বাকি ১৩ জন হলেন- খুরশীদ আলম (২৭), মোফাজ্জল হক (২৯), মো. ফারুক হোসেন (৩০), মো. সজীব হোসেন (২৫), শেখ খোরশেদ আলী জুয়েল (৩৯), আল মামুন (২৭), মো. রেজাউল করিম (২৯), মো. আমজাদ হোসেন (৩৪), মো. ফয়েজ উদ্দিন (৩২), সরদার পলাশ (৩৩), সুজন শাহ আলম (৩৫), সুমন মো. জাকারিয়া হোসেন (২৫), রেজাউল হোসাইন (৪০)।
জঙ্গিবাদী ও তাদের সমর্থনকারীদের বিষয়ে সিঙ্গাপুর সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “বিদেশিরা আমাদের অতিথি। কিন্তু তারা যেন এই সুযোগ নিয়ে সিঙ্গাপুরকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে নিজের দেশের রাজনৈতিক এজেন্ডা আমদানি বা বাস্তবায়নের চেষ্টা না করেন।
“একইভাবে বিদেশি ধর্মীয় বক্তা, যাদের মতবাদ স্থানীয়দের মধ্যে অবিশ্বাস, বৈরীতা বা ঘৃণা উসকে দিতে পারে, এবং যাদের বক্তব্য সিঙ্গাপুরের ঐক্যের পরিপন্থি, তাদের এ দেশে স্বাগত জানানো হবে না।