Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

34খোলা বাজার২৪,শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি ২০১৬: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে জিতলেও শেষ দুই ম্যাচের ব্যর্থতায় টি-টোয়েন্টি সিরিজে ড্র করল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। শুক্রবার শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ১৮ রানে হারিয়েছে অতিথিরা।
হ্যামিল্টন মাসাকাদজার রেকর্ড ইনিংসে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৮০ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। এক ওভার বাকি থাকতেই ১৬২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় রান তাড়ার শুরুতেই। প্রথম ৩ ওভারেই নেই ৪ উইকেট! পরের ব্যাটসম্যানরা চেষ্টা করেছেন সাধ্যমত। তাতে জয়ের আশাও জেগেছিল খানিকটা। কিন্তু শুরুর সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
নিজের প্রথম বলেই দারুণ এক বাউন্ডারিতে শুরু করেছিলেন সৌম্য সরকার। পরের ওভারের প্রথম বলেই নেভিল মাডজিভাকে ওড়ালেন লং অনের ওপর দিয়ে। কিন্তু পরের বলেই আউট বাজে এক বলে (১১)। মাডজিভার ওই ওভারেই ডাউন দ্য উইকেট এসে স্লোয়ার বলকে ইয়র্কার বানিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড তামিম ইকবাল (১)।
জোড়া ধাক্কার পিঠে আসে আরেকটি জোড়া ধাক্কা। সিরিজে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান (১) লং অনে ক্যাচ দেন টেন্ডাই চিসোরো ফুলটসে। পাঁচে নেমে প্রথম বলে চার মেরেছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তর সইলো না তারও। পরের বলেই এমন শট খেললেন যেন ম্যাচ জিততে প্রয়োজন ছিল ১ বলে ৬ রান! স্লগ সুইপ করার চেষ্টায় বোল্ড।
বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছে তখন বিব্রতকর হার। চারে নামা ইমরুলকে নিয়ে প্রতিআক্রমণের শুরু মাহমুদউল্লাহর। ১৪ বলে ১৮ করে ইমরুল ফেরেন সিকান্দার রাজার শর্ট বলে ছক্কা মারতে গিয়ে। এরপরই বাংলাদেশ পায় ম্যাচে নিজেদের সেরা জুটি।
দারুণ সব শটে টি-টোয়েন্টি দলে নিজের জায়গা নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলোকে দূরে ঠেলতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। সিনিয়র ব্যাটসম্যানকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন নুরুল হাসান। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের জুটি ৩৯ বলে ৫৭ রানের। ১৫ রান করে নুরুল আউট হয়েছেন ফুল টসে!
আটে নেমে মাশরাফির দুটির ছক্কা আবারও রোমাঞ্চ ফেরায় ম্যাচে। ৫ ওভারে ৫০ রানের সমীকরণটাকে তখন সম্ভব মনে হচ্ছিলো। কিন্তু চিসোরোকে স্লগ করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহর (৪১ বলে ৫৬) বিদায়ে কার্যত শেষ হয় বাংলাদেশের আশা। খানিক পর ছক্কা মারার চেষ্টায় বিদায় মাশরাফিরও (১২ বলে ২২)।
শেষের দিকে আবু হায়দার (১৪), আরাফাত সানিরা (১০) খানিকটা বিনোদন দিয়েছেন দর্শকদের। তাতে কেবল কমেছে ব্যবধান।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৩৪ রানে ৪ উইকেট নেন নেভিল মাডজিভা। চিসোরোর ১৭ রানে ৩ উইকেট তার সেরা বোলিং। দুটি নিয়েছেন সিকান্দার রাজা।
জয়টা বাংলাদেশের জন্য ম্যাচের প্রথম ভাগেই কঠিন করে দিয়েছিলেন মাসাকাদজা। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সিরিজের প্রথম ম্যাচে ছুঁয়েছিলেন নিজেরই রেকর্ড। শেষ ম্যাচে ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকেও। গড়লেন টি-টোয়েন্টিতে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের নতুন রেকর্ড, ৫৮ বলে অপরাজিত ৯৩! জিম্বাবুয়ে করে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৮০ রান।
বাংলাদেশের শুরুটা যদিও ছিল আশা জাগানিয়া। জিম্বাবুয়ের উদ্বোধনী জুটিকে এবার জমে উঠতে দেননি মাশরাফি। বাংলাদেশ অধিনায়কের একটু বাড়তি লাফানো বলে কাভারে সাকিবের হাতে ধরা পড়েন ভুসি সিবান্দা (৪)।
বাংলাদেশের উইকেট-আনন্দ অবশ্য খুব দ্রুতই ভুলিয়ে দেন মাসাকাদজা। দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন রিচমন্ড মুতুম্বামিও। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৬ বলে ৮০ রানের জুটি গড়েন দুজন।
ওই দুজন দারুণ ব্যাটিং করেছেন তো বটেই। সঙ্গে যোগ হয়েছিল বাংলাদেশের বোলারদের বাজে বোলিং আর ফিল্ডারদের উদারতাও। আবু হায়দারের বলে ১০ রানে শর্ট ফাইন লেগে মুতুম্বামির সহজ ক্যাচ ফেলেন তাসকিন।
মাসাকাদজা আউট হতে পারতেন দুবার। ৩২ রানে কাভারে ক্যাচ তুলে দিলেও সময়মত বলের নিচে যেতে পারেননি সাকিব। ৩৪ রানে ক্যাচ দিয়েছিলেন ডিপ স্কয়ার লেগে। কিন্তু বলের কাছে যেতে পারেননি মাশরাফি।
শেষ পর্যন্ত মুতুম্বামির বিদায়ে ভেঙেছে এই জুটি। স্টাম্প ছেড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন আবু হায়দারের দারুণ এক ইয়র্কারে (২৫ বলে ৩২)। তবে সে স্বস্তি উড়ে যেতে সময় লাগেনি। ম্যালকম ওয়ালারের সঙ্গে মাসাকাদজার জুটি তাণ্ডব চালায় আরও বেশি। ৫ ওভারে ৬১ রানের জটি গড়েন দুজন। ৩ ছক্কায় ১৮ বলে ৩৬ করা ওয়ালারকে গতিময় এক দুর্দান্ত ইয়র্কারে ফেরান তাসকিন।
শেষ দিকে সিকান্দার রাজা (২) ও এল্টন চিগুম্বুরা ঝড় তুলতে পারেননি। তবে একাই দলকে টেনেছেন মাসাকাদজা। শেষ ওভারেও মেরেছেন ছক্কা। শেষ পর্যন্ত ৮ চার ও ৫ ছক্কায় অপরাজিত ৯৩!
বাংলাদেশের মাশরাফি, তাসকিন, আবু হায়দার ও সাকিব নিয়েছেন একটি করে উইকেট। পিটুনি হজম করেছেন সবাই। সিরিজে প্রথমবার মাঠে নেমে ৩ ওভারে ২৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য আরাফাত সানি।
বোলারদের ব্যর্থতা পরে পুষিয়ে দিতে পারেননি ব্যাটসম্যানরাও। ছুটির দিনে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে দর্শক ছিল উপচে পড়া। ৯-১০ হাজার ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেছেন যত দর্শক, দাঁড়িয়ে দেখেছেন মনে হয় আরও বেশি! দলের হারে সেই দর্শকেরা মাঠ ছেড়েছেন হতাশায়।
সিরিজটাও আরেকবার বুঝিয়ে দিল, টি-টোয়েন্টির ভাষা পড়তে আরও অনেক তপস্যা করতে হবে বাংলাদেশকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১৮০/৪ (সিবান্দা ৪, মাসাকাদজা ৯৩*, মুতুম্বামি ৩২, ওয়ালার ৩৬, রাজা ২, চিগুম্বুরা ৫*; তাসকিন ১/৩২, হায়দার ১/৩৩, সাকিব ১/৩৫, মাশরাফি ১/৪০)
বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১৬২ (তামিম ১, সৌম্য ১১, সাব্বির ১, ইমরুল ১৮, সাকিব ৪, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, নুরুল ১৫, মাশরাফি ২২, হায়দার ১৪, আরাফাত ১০, তাসকিন ১*; মাডজিভা ৪/৩৪, চিসোরো ৩/১৭, রাজা ২/৩১, জঙ্গুয়ে ১/৩৫)