Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
news1

খোলা বাজার২৪, রবিবার, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬:নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি জেঁকে বসেছে দেশের ব্যাংকিং খাতে। পরিস্থিতি আওতার বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজে দেখতে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনও ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি খতিয়ে দেখছে। মূলত দেশে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর র কঠোর নজরদারি না থাকার কারণেই বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের ঘটনা বেড়ে চলেছে। সুশাসনের অভাবে অধিকাংশ ব্যাংক জড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন অনিয়মে। ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধানে অনেক ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা আমলে নিচ্ছে না অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক। বরং ব্যাংকগুলো নিজেদের খেয়ালখুশি মতোই কার্যক্রম চালাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ বিতরণ, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, চেক জালিয়াতি, মানিলন্ডারিং, অর্থ পাচার, অন্য ব্যাংকের খেলাপি ক্রয়, সিআইবি রিপোর্ট ও গ্রাহকের আবেদনের আগেই ঋণ অনুমোদন, শাখায় হিসাব খোলার আগেই ঋণ অনুমোদন, একই পরিবারভুক্ত একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন, শাখার বিরূপ মন্তব্য সত্ত্বেও ঋণ অনুমোদন, ঋণখেলাপির নামে ঋণ অনুমোদনের ঘটনা ব্যাংকিং খাতে নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকগুলো কর্পোরেট গ্রাহকের অনুকূলে ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই শাখা ব্যবস্থাপকরা ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে ঋণপত্র স্থাপন করেছেন। অনেক সময় নন ফান্ডেড ঋণ (ডেফার্ড এলসি ও সাইট এলসি) সুবিধা দেয়া হচ্ছে কোন ধরনের সহায়ক জামানত ছাড়াই। এসব অনিয়মের সাথে অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা, বিশেষ করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালকরা অনিয়মের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। ফলে এসব ব্যাংকের একাধিক শাখায় নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানীয় ঋণপত্র (এলসি) খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। আর এসব অনিয়ম ও অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অনিয়মের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
সূত্র জানায়, দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে এ খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়ে গেলেও আইনি সীমাবদ্ধতায় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও গোষ্ঠিগত প্রভাবে এক ধরনের অরাজকতা বিরাজ করছে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেই। ব্যাংক ঋণ না পেয়ে একদিকে যেমন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে সংকুচিত হয়ে পড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। আর দেশে কর্মরত ব্যাংকগুলোর নজর শুধুমাত্র অধিক মুনাফার দিকে। রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক ব্যাংকই ব্যাংকিং বিধিমালার তোয়াক্কা করছে না। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাকেও তারা আমলে নিচ্ছে না। এ পরিস্থিতি দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনি সংকেত। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না হলে এ ধরনের ঘটনা ব্যাংকিং খাতে অব্যাহতই থাকবে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, ব্যবস্থাপনার মান, তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শিথিলতা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে মূল ধারার ব্যাংকিংয়ে তেমন নজর দিচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতে চলছে লুটপাটের মচ্ছব। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ব্যাংকগুলো বেনামি ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিচ্ছে। এসব ঋণ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোর যে শাখাতেই তদন্ত হচ্ছে সেখানেই বেরিয়ে আসছে বড় বড় অনিয়মের ঘটনা। ইতিমধ্যে দেশজুড়ে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক অনিয়ম নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ব্যাংকি খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক জনবলের অভাবে সরকারি ব্যাংকগুলো ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এখনো ব্যাপক হারে পরিদর্শন করতে পারছে না।
এদিকে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরিস্থিতি বিশ্লেষণে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক দফা সভা করেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার বন্ধ করতে সব লেনদেন ও সরকারি বিল অনলাইনে গ্রহণের ব্যবস্থা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সক্রিয় হওয়ার কারণে ব্যাংকিং খাতের নানা দুর্নীতি ধরা পড়ছে। নতুন করে কোথাও অনিয়ম-দুর্নীতি হলে সেগুলো ধরা পড়বে এবং তার শাস্তিও পেতে হবে। দুর্নীতির ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অনিয়ম নিয়ে দুদকের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।