খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ : ছোট মুখটির মধ্যেই অসংখ্য জখম চিহ্ন। কোথাও চামড়া খসে পড়েছে। কোথাও কালো হয়ে ফুলে আছে। কোথাও আবার দাগদগে ঘাঁ। মাথার তকেও ছোপ ছোপ আঘাতচিহ্ন। মেয়েটির মুখ দেখেই গা যেন শিউরে ওঠে।
রবিবার রাজধানীর রামপুরার একটি বাড়ি থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হতভাগীর নাম মুন্নী আক্তার। বয়স ১৩-১৪ বছর। যে বাসায় মুন্নীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে, সেখানে চার বছর ধরে গহকর্মীর কাজ করছিল সে। আলামত দেখে পুলিশের ধারণা, দিনের পর দিন নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে গৃহকর্তী নাজমুন নাহারকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুন নাহার দাবি করেছেন, এক সপ্তাহ আগে কাজ করার সময় আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয় মুন্নী। এরপর ধুকে সে মারা গেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মুন্নীর শরীরে পোড়া ঘাঁ ছাড়াও পুরনো জখম চিহ্ন আছে এবং তাকে কোনো হাসপাতালে না নেওয়া হয়নি। এসব কারণে নাজমুন নাহারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
রামপুরা থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রবিবার বিকালে বনশ্রী ৪ নম্বর রোডের ৩৫ নম্বর বাসা থেকে মুন্নীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, মুন্নীর শরীরে আগুনে পোড়াসহ জখমের অনেক চিহ্ন রয়েছে। কোনো কারণে তাকে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে বলে ধারণা করছি। এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী নাজমুন নাহারকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান আরো জানান, মুন্নী গত চার বছর ধরে ওই বাসায় কাজ করছিল। গৃহকর্তী নাজমুন নাহার একজন গৃহিনী। তার স্বামী সৌদি আরব থাকেন। তাদের দুই সন্তান। মেয়ে আইডিয়াল স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে এবং ছেলে একই স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে।
জানা গেছে, মুন্নীর বাবার নাম আনোয়ার হোসেন। তাদের বাড়ি নোয়াখালীর চরজব্বারের সুবর্ণচর এলাকায়। রবিবার রাতে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্নীর লাশ ঢামেক মর্গে রাখা হয়। সেখানে তার কোনো স্বজন এখনো এসে পৌঁছায়নি।
রামপুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘গৃহকর্তীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি দাবি করেছেন- সাত-আটদিন আগে কাজ করার সময় মুন্নী আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়েছে।তবে এতো দগ্ধ মেয়েটিকে কোনো হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। তা ছাড়া মুন্নীর শরীরে পুরো আঘাতের চিহ্নও আছে বলে মনে হচ্ছে। ময়নাতদেন্তর রিপোর্ট পেলে এ ব্যাপারে বলা যাবে। পাশাপাশি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’