Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

2খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬: ক্ষমতাসীন দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মধ্যে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা দলটিও যখন সরকারে যোগ দিয়ে ফেলে, তখন আইনসভায় সরকারের কার্যকর বিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত দশম জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সেই প্রশ্ন উঠেও ছিল।
কিন্তু এইচ এম এরশাদ নেতৃত্বাধীন দলটির নেতারা তখন সংশয় উড়িয়ে বলেছিলেন, মন্ত্রিত্ব নিলেও সংসদে তারা সরকারের ‘গঠনমূলক’ সমালোচনায় কোনো ছাড় দেবেন না।
নানা নাটকীয়তার মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়া রওশন এরশাদ বলেছিলেন, “মন্ত্রী আছে ঠিকই, তবে বিরোধী দলের ভূমিকা সঠিকভাবেই পালন করতে চাই।”
দুই বছর পর এখন অন্তর্ন্দ্বন্দ্বে বেসামাল জাতীয় পার্টির নিজেদের ভেতরেই প্রশ্ন উঠছে, তারা আসলে বিরোধী দল কি না?
২৯ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের দুই বছর পূর্তির ১০ দিন আগে দলটির চেয়ারম্যান এরশাদ নিজেই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “আমরা বিরোধী দলে আছি, না সরকারি দলে আছি, সেটা দেশের মানুষ বুঝতে পারছে না।”
জাতীয় পার্টির এই ভূমিকা নিয়ে মত জানতে চাইলে সংসদীয় রাজনীতির গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, দলটিকেই স্পষ্ট করতে হবে তাদের অবস্থান কী?
“জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি যেমন সরকারের অংশ, জাতীয় পার্টিও তাই। এ সংসদে বিরোধী দল বলে কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। জাতীয় পার্টি যদি বিরোধী দল হয়, তাহলে ওয়ার্কার্স পার্টি আর জাসদ কেন নয়?” বলেন তিনি।
ছোটভাই জি এম কাদেরের সঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ফাইল ছবি। বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। এরপর ভোট শেষে ৩৫০ আসনের সংসদে এখন আওয়ামী লীগের আসন সংখ্যা ২৭৬।
আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাতটি, জাসদের ছয়টি, তরীকত ফেডারেশনের দুটি আসন রয়েছে সংসদে।
জাতীয় পার্টি ৪০, জাতীয় পার্টি (জেপি) দুটি এবং বিএনএফের একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র সদস্যরা ১৬টি আসনে জয়ী হন, যার প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা।
সংসদ বসার আগেই গঠিত সরকারে ১৪ দলীয় জোটের বাইরে থাকা দল জাতীয় পার্টি ও জেপি যোগ দেয়। সরকারে যোগ না দেওয়া বিএনএফ দলটি আওয়ামী লীগের ‘ষড়যন্ত্রে’ গঠিত বলে বিএনপির অভিযোগ।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট না হওয়ায় নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্প্রতি বলেন, ‘সো কল্ড’ এই সংসদে জনসমস্যা নিয়ে কোনো আলোচনাই হয় না।
সংসদে সাবেক এই বিরোধী দলের সমালোচনায় সরকারি দলের সঙ্গে বর্তমান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতাদেরও সুর মেলাতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে বিরোধী দল হিসেবে সমালোচনার মুখে থাকা জাতীয় পার্টি বরাবরই সমর্থন পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। বিরোধী দলকে নিয়ে সন্তুষ্টির প্রকাশ নানা সময়ে ঘটিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
দশম সংসদের দুই বছর পূর্তির দুই দিন আগেও তিনি সংসদে বলেছেন, “সংসদে এখন একটা পরিবর্তন এসেছে। বিরোধী দল সরকারের সমালোচনা করছে; পাশাপাশি ভালো কাজ করলে তার প্রশংসাও করছে। বর্তমান সংসদ সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।”
বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের প্রধান রওশন এরশাদ বলেছিলেন, তারা ফাইল ছোড়া আর অধিবেশন বর্জনে বিশ্বাসী নয়।
নবম সংসদে বিরোধী দলের আসনে থাকা বিএনপির অধিকাংশ সময়ই কেটেছে আইনসভার বাইরে। দশম সংসদে এই চিত্রের পরিবর্তন এসেছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণেও ধরা পড়েছে।
বর্জনের পাশাপাশি গড় কোরাম সঙ্কট তুলনামূলকভাবে কমার মতো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও সংসদের প্রত্যাশিত কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করে সংস্থাটি, যাতে একমত অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকও।
গত এক বছরে কাজী ফিরোজ রশীদ কিছু ইস্যু নিয়ে সংসদে সরকারের সমালোচনা করলেও জাতীয় পার্টির অন্য সদস্যদের সরব হতে দেখা যায়নি। শুধু বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং বিমানের চেয়ারম্যানের অপসারণ নিয়ে দুই বার ওয়াক আউট করা ছাড়া।
বরং জোট শরিক দল জাসদের একাত্তর-পরবর্তী ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা সংসদে সরব হলে তখন জাতীয় পার্টির সদস্যদের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গেই সুর মেলাতে দেখা গেছে।
আবার বিরোধী দলকে নিয়ে টিআইবির মন্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনাও জোরালো করেছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
সরকারি ও বিরোধী দল উভয়ই একযোগে সমালোচনা করেছে বিএনপির। টিআইবির এক হিসাবে দেখা গেছে, সংসদে না থাকা বিএনপির কথা ৭ হাজার বার এসেছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে বিএনপির সাবেক নেতা রুস্তম আলী ফরাজী জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গিয়ে আবার সরকারি-বিরোধী উভয় শিবিরের বাক-আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
দ্বৈত এই ভূমিকার অস্পষ্টতা কাটানোর আওয়াজ জাতীয় পার্টির ভেতরে উঠলেও তাতে অনেকটা জল ঢেলে দিয়ে দশম সংসদের দুই বছর পূর্তির আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে রওশন জানিয়েছেন, তারা সরকারেই থাকছেন।
তথ্য কণিকা
>> দশম জাতীয় সংসদের শুরু থেকে অষ্টম অধিবেশন পর্যন্ত মোট ১৬৮ কার্যদিবস অধিবেশন বসেছে।
>> এর মধ্যে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪৩ দিন উপস্থিত ছিলেন বলে সংসদ সচিবালয়ের তথ্য। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন সংসদে এসেছেন ৯৬ দিন।
>> নবম সংসদে মোট কার্যদিবস ছিল ৪১৮, যা বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে রেকর্ড। ওই সংসদে বিরোধী দলের বর্জন ছিল রেকর্ড পরিমাণ। বিএনপি ৩৪২ দিনই অনুপস্থিত ছিল। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ওই সংসদে এসেছিলেন ১০ দিন।
>> দশম সংসদের অষ্টম অধিবেশন পর্যন্ত মোট ৪৮টি বিল পাস হয়েছে।
>> বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিসহ অন্যান্য কমিটিগুলো গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩৫টি বৈঠক করেছে।
>> কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রতিমাসে একবার বৈঠকে বসার কথা থাকলেও অনেক কমিটি তা করেনি। সবচেয়ে কম একটি বৈঠক করেছে পিটিশন কমিটি। স্পিকারে শিরীন শারমিন চৌধুরী নেতৃত্বাধীন এই কমিটি গত বছরের ১৪ মে একটি বৈঠক করে।
>> অনুমিত হিসাব কমিটি এবং বেসরকারি সদস্যদের বিল সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত কমিটি ৩টি করে বৈঠক করেছে।
>> বিশেষ অধিকার ও কার্যপ্রণালি বিধি সম্পর্কিত কমিটি একটিও বৈঠক করেনি।
>> মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটিগুলোর মধ্যে কম বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এর সভাপতি হলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তারা বৈঠক করেছে ৭টি।
>> সবচেয়ে বেশি ৪০টি বৈঠক করেছে সরকারি হিসাব কমিটি। এই কমিটির সভাপতি হলেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর।