খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬: আইন অনুযায়ী সিএনজিচালিত অটোরিকশা শহরাঞ্চলের মধ্যে কম-বেশি যে কোনো দূরত্বে মিটারে যেতে বাধ্য। তবে সাম্প্রতিক ভাড়া বৃদ্ধির পরেও সিএনজি চালকরা মিটারে যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অনিয়ম দূর করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বি আরটিএ) অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, তারা সম্প্রতি ৫০০টি সিএনজি অটোরিকশা পরখ করে দেখেছে, এগুলোর মধ্যে ৭৮ শতাংশই এখন মিটারে চলছে না। অথচ নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ার পর প্রথম এক সপ্তাহে অটোরিকশা পরখ করে সংগঠনটি দেখেছিল, ৭৫ শতাংশই মিটারে চলছে।
অবশ্য বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এই ব্যবস্থা অপ্রতুল বলেই জানিয়েছে। তারা বলছে, মিটারের মাধ্যমে ভাড়া নেওয়ার বিষয়টিকে তোয়াক্কাই করছেন না অটোরিকশার চালকেরা। বি আরটিএ জানিয়েছে, প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বি আরটিএ।
বি আরটিএর এনফোর্সমেন্ট দপ্তরের পরিচালক বিজয়ভূষণ পাল বলেন, মিটারে না যাওয়া ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে না চাওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৫ জানুয়ারি বি আরটিএর এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত ২৮টি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ডাম্পিংয়ে (ভাগাড়ে) পাঠান। একই সঙ্গে ১৯ জন চালককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। পরের দিন ২৬ জানুয়ারি ২৬টি অটোরিকশা ডাম্পিং করা হয় এবং ৩২ জন চালককে দণ্ড দেওয়া হয়। এটি শুধু দুই দিনের হিসাব। প্রতিটি যানবাহনের অনিয়ম ধরার জন্য বি আরটিএ প্রতিদিনই পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। প্রতিদিনই চালকদের জরিমানাসহ অটোরিকশা ডাম্পিং করা হচ্ছে।
বি আরটিএর এই বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেটা দৃশ্যমান নয়। যখন অতিরিক্ত বাস ভাড়ার নৈরাজ্য নিয়ে মিডিয়া তৎপর ছিল, তখন বি আরটিএও তৎপর ছিল। মিডিয়া থেমে যাওয়ার পর বি আরটিএও থেমে গেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকাশার ব্যাপারেও তা-ই ঘটছে। তারা বলছে, ব্যবস্থা নিচ্ছে, কিন্তু তা দৃশ্যমান নয়। এবং তাদের কার্যক্রম কোনো প্রভাবও ফেলছে না। এতে চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা বেড়েই চলছে।
এ বিষয়ে বি আরটিএর সচিব মুহাম্মাদ শওকত আলী বলেন, অটোরিকশাগুলো যেকোনো দূরত্বে, যেকোনো গন্তব্যে মিটারে যেতে বাধ্য। যদি না যায়, তবে বি আরটিএ কর্তৃপক্ষ, বি আরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত অথবা দায়িত্বরত ট্রাফিককে জানানো হয়, সেই চালকের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া কেউ চাইলে বি আরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে লিখিতভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগও দাখিল করতে পারে।
নিয়ম ভঙ্গকারী সিএনজির বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নেবেন-
ট্রাফিক পুলিশে অভিযোগ
সিএনজি অটোরিকশার বিরুদ্ধে নির্ধারিত মিটারে ও নির্ধারিত গন্তব্যে না যেতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টের কাছে অভিযোগ করা যায়। এক্ষেত্রে ট্রাফিক সার্জেন্ট অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে সংশ্লিষ্ট অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন বা প্রয়োজনে রেকার লাগিয়ে ডাম্পিং ইয়ার্ডে নিয়ে যেতে পারেন বা আটক করতে পারেন। এক্ষেত্রে অটোরিকশার জরিমানা হতে পারে ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রেকারের বিল উঠতে পারে আরও ১২০০ টাকা।
এ বিষয়ে মহাখালী এলাকায় দায়িত্ব পালনরত সার্জেন্ট রাসেল জানান, সিএনজি অটোরিকশার বিরুদ্ধে যাত্রীদের কোনো অভিযোগ পেলে তারা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেন। কিন্তু প্রায়ই যাত্রীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। এক্ষেত্রে যাত্রীরা যদি সহযোগিতা করেন এবং তারা মিটারে যাচ্ছেন কি না, তা সঠিকভাবে জানান তাহলে পুলিশের পক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।
এক্ষেত্রে বহু সিএনজি চালকই মিটারের ওপর কিছু বাড়তি ভাড়া দাবি করেন। এক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি কোনোভাবে যেন মেনে নেওয়া না হয় সেজন্য সচেষ্ট থাকা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক সিএনজি চালক আবার বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি সার্জেন্টের কাছে গোপন রাখার অনুরোধ করেন। যদিও সংশ্লিষ্টদের মত, চালকের এ অনুরোধে কর্নপাত করা উচিত নয়, বরং একটু সাহস করে পুলিশের কাছে অভিযোগটি করে দেওয়া উচিত।
বি আরটিএতে অভিযোগ
সিএনজি অটোরিকশা বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছে অভিযোগ ছাড়াও বি আরটিএতে অভিযোগ করা যায়। এক্ষেত্রে বি আরটিএ অফিসে যাওয়ার কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে। তবে এতে সিএনজির রুট পারমিট বাতিলসহ শাস্তির মাত্রা বেশি হতে পারে। বি আরটিএতে যেভাবে অভিযোগ করবেন-
১. অটোরিকশার নম্বর লিখে ফেলুন। সম্ভব হলে নাম্বার প্লেটসহ বাহনটির একটি ছবি তুলে রাখুন।
২. বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির হটলাইন নম্বরে অভিযোগ করুন। নম্বরগুলো হলো-৯১১৩১৩৩, ৫৮১৫৪৭০১, ৯১১৫৫৪৪, ৯০০৭৫৭৪ (অফিস চলাকালে)। এক্ষেত্রে আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার ও ঘটনার বিবরণ জানিয়ে অভিযোগ গ্রহণকারীকে সহযোগিতা করতে হবে। এছাড়া, অটোরিকশাটির নম্বরটি জানাতে ভুলবেন না।
৩. আপনার অভিযোগের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বি আরটিএ চিঠি মারফত আপনাকে একটি নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণে তাদের অফিসে (বি আরটিএ, এলেনবাড়ি, তেজগাঁও, পুরাতন বিমানবন্দর সড়ক,ঢাকা-১২১৫) এসে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হবে। একই সময় অভিযুক্ত চালক ও অটোরিকশাটির মালিককেও উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৃতীয় ধাপটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বি আরটিএ’র একজন কর্মকর্তা জানান, প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ পান তারা। তবে সেগুলো প্রমাণের জন্য অভিযোগকারীকে যখন অফিসে আসতে অনুরোধ করা হয় তখন তাদের কোনও সাড়া না পাওয়া যাওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে যান। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাড়তি ভাড়া ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে না যাওয়ার এ সমস্যাটি দূর করতে হলে এ বিষয়ে যাত্রীদের সচেতন হওয়া জরুরি। একটু ঝামেলা হলেও সঠিক কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট সিএনজি অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা যাত্রীদের পরবর্তীতে সঠিক ভাড়ায় ভ্রমণ নিশ্চিত করবে।