Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ : তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে ছবিযুক্ত সতর্কবাণীর ঝোঁক বিশ্বজুড়ে বাড়লেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার এক আইনজীবী।
এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে তামাক কোম্পানিগুলোর ‘হাস্যকর যুক্তি’ অগ্রাহ্য করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কানাডিয়ান ক্যান্সার সোসাইটির সিনিয়র পলিসি এনালিস্ট রব কানিংহাম বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণে ছবিযুক্ত সতর্কতা বাণীর কার্যকারিতা পরীক্ষিত, এজন্যই কোম্পানিগুলো এর বিরোধিতা করে। এটা যদি কাজ না করত, তাহলে তারা (তামাক কোম্পানি) এর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে নামত না।”
২০০১ সালে কানাডার পার্লামেন্ট যখন প্রথমবার সিগারেটের প্যাকেটে এ ধরনের সতর্কতা বাণী বাধ্যতামূলক করেছিল, কানিংহাম তখন শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তখনকার স্মৃতিচারণ করে এ আইনজীবী বলেন, তখনও তামাক কোম্পানিগুলো ‘সিগারেটের প্যাকেটে রঙিন ছবি ছাপানো অসম্ভব’ বলে অজুহাত দেখাচ্ছিল।
“কিন্তু যখন পার্লামেন্টে আইনটি পাস হল, তখন সেই অসম্ভব সম্ভবে পরিণত হল। এটা আসলে ছিল একটি হাস্যকর অজুহাত। কোম্পানিগুলো প্রায় সব দেশেই এ ধরনের অজুহাত হাজির করে,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন কানিংহাম।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর স্পিকারদের এক সম্মেলনে বক্তব্য দিতে শুক্রবার ঢাকায় আসেন কানিংহাম। শনিবার শুরু হওয়া এ সম্মেলনে ‘তামাকজাত দ্রব্যের প্রচার নিয়ন্ত্রণে’ বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে।
এসডিজি’র ১৬৯টি ‘টার্গেটের’ মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ একটি, যার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো ‘ছোঁয়াচে নয় এমন রোগ’ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্পিকারদের এই সম্মেলনকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে কানিংহাম বলেন, এর মাধ্যমে দেশগুলোর পার্লামেন্ট তামাক নিয়ন্ত্রণে ‘বিশেষ ভূমিকা’ রাখতে পারবে।
প্যাকেটের গায়ে ছবিযুক্ত সতর্কবাণী তামাক নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে ‘সহজ উপায়’ উল্লেখ করে এ আইনজীবী বাংলাদেশের মতো নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোতে স্বাস্থ্য শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে এ ধরনের প্রচারের গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন।
“এই সতর্কবাণী প্রতিদিন প্রতিটি ধূমপায়ীর কাছে পৌঁছে যায়। ফলে কী কী ক্ষতি হতে পারে, তা নিরক্ষর লোকও বুঝতে পারবে।”
বিশ্বের অন্তত ৮০টি দেশে তামাকজাত দ্রব্য ও সিগারেটের প্যাকেটে ধূমপানের ফলে মানবদেহের কী কী ক্ষতি হতে পারে, সে সম্বলিত ছবি দেওয়া সতর্কবাণী মুদ্রণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এসব দেশের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডও আছে।
তামাক ও সিগারেটের প্যাকেটে ছবিযুক্ত সতর্কতা বাণী মুদ্রণে বাংলাদেশও তামাক কোম্পানিগুলোকে চলতি বছরের ১৯ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে।
তবে তামাক কোম্পানিগুলো ওই নির্দেশনাকে ‘বাধাগ্রস্ত’ করারও চেষ্টা করছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কোম্পানিগুলোর দেওয়া একটি চিঠির অনুলিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসে পৌঁছেছে, যেখানে প্যাকেটের নিচে ‘কম মনোযোগ পাবে’ এমন অংশে ছবি সম্বলিত সতর্কবাণী প্রচারের তদবির করা হয়েছে।
তামাক কোম্পানিগুলোর পক্ষে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদের পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্যাকেটের উপরের অংশে ছবি ছাপা হলে ট্যাক্সের টিকেটের (ব্যান্ডরোল) কারণে তা ঢেকে যেতে পারে।
বর্তমান আইনে প্যাকেটের সামনে-পেছনে উভয় দিকের উপরের অংশে এমনভাবে ছবি দেওয়া সতর্কবাণী প্রচারের বিধান রয়েছে যেন ট্যাক্সের ডাকটিকেটও তা ঢাকতে না পারে।
কানিংহাম বলেন, এই বিধান বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই আছে এবং সেসব দেশেও টিকেট অক্ষুণœ রেখেই ছবিযুক্ত সতর্কবাণীর প্যাকেট চলছে।
তামাক কোম্পানির এসব কু-তর্ক অগ্রাহ্য করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “ইউরোপের সিগারেট কোম্পানিগুলোই বাংলাদেশে আছে। তারা যদি ইউরোপের আইন মানতে পারে, তাহলে বাংলাদেশেও পারবে।”
সম্প্রতি এক নির্দেশনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন চলতি বছরের ২০ মে’র মধ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সিগারেটের প্যাকেটে থাকা সতর্কবাণী প্যাকেটের ৬৫ শতাংশজুড়ে রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে।
প্রতিবছর বিশ্বে তামাক আসক্ত ৫৭ হাজার লোক মারা যায় বলে ধারণা করা হয়। কেবল বাংলাদেশেই তামাক সংক্রান্ত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ বলে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে।
আসক্তের এই সংখ্যা কমাতে ছবিযুক্ত সতর্কবাণী কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কানিংহাম বলেন, “অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, প্যাকেটের ৫০ শতাংশ জুড়ে থাকা চিত্র তামাক নিয়ন্ত্রণে এক বিরাট অগ্রগতি নিয়ে এসেছে।”
২০০৪ সালে সিঙ্গাপুরে এ আইন কার্যকরের পর ধূমপায়ীর সংখ্যা ২৮ শতাংশ নেমে আসার কথা জানান তিনি। পূর্ব আফ্রিকার দরিদ্র দেশ জিবুতিও ২০০৯ সাল থেকে প্যাকেটে ছবি দেওয়া সতর্কবাণী কার্যকর করেছে বলে তিনি জানান।
“সব দেশ পারলে বাংলাদেশও পারবে,” বলেন কানাডার এই আইনজীবী।