Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

44খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ : রাজধানীর পরিবাগে পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে সুনাম কুড়ানো শিশু স্কুলটি নিয়ে এখন শুরু হয়েছে বাণিজ্য। বেশ কয়েকটি ফান্ডের টাকা নিয়ে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। আর এই সুযোগে ‘হাসি মুখ’নাম দিয়ে শিশু স্কুলটি নিজের কব্জায় নিয়েছেন নূসরাত একা নামের এক প্রভাবশালী নারী।
অভিযোগ উঠেছে সরকার দলীয় মন্ত্রী-এমপি ও ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে শিশু স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতাকে বের করে দিয়েছেন তিনি। নিজের অনুদানে শিশু স্কুল ‘হাসি মুখ’ চলছে বলে নূসরত একা দাবি করলেও এতো টাকা কোন উৎস থেকে আসছে এটা নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ। পথশিশুদের এই স্কুল ‘প্রথম সূর্য’ নামে যাত্রা শুরু করলেও কেন এখন তার নাম পরিবর্তন করে ‘হাসি মুখ’ রাখা হয়েছে এটা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে।
স্কুলটির সংশ্লিষ্ট একটি ঘনিষ্ট সূত্র বলছে, এই স্কুল পরিচালনা নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা করে আসছিলেন নূসরত একা। স্কুলটি পরিচালনার জন্য গঠিত ভলেন্টিয়ার (স্বেচ্ছাসেবক) কমিটিতে আসার জন্যও নানা কৌশল নিয়েছিলেন। এরই অংশ হিসেবে এখন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় এক বছর আগে নিজেই এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে নাম পরিবর্তন করে হাসি মুখ রাখেন। এরপর প্রথম সূর্য স্কুলের অনুদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানা অভিযোগ দিতে থাকেন। পরে বাধ্য হয়ে প্রথম সূর্য স্কুল থেকে সরে আসেন প্রতিষ্ঠাতা নাসির উদ্দিন বিশ্বাস রুবেল।
জানতে চাইলে রুবেল বলেন, “পথশিশুদের জন্য আমরা ‘প্রথম সূর্য’ প্রতিষ্ঠা করি। এটার পিছনে জাপানি এবং বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের অবদান রয়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ অনুদানেই এটি চলতো। হঠাৎ করে ২০১৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে নূসরত একা আমাদের স্কুলে সহায়তা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিজয় দিবসে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন। এরপর উনি স্কুলটি নিজের হাতে নিতে ভলেন্টিয়ারদের সাথে নিজের হাতে নেওয়ার অপকৌশল শুরু করেন।”
পথশিশুদের নিয়ে ‘প্রথম সূর্য’ থেকে ‘হাসি মুখ’ নাম পরিবর্তন এবং এটা নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিশুদের মাঝে বিনা পয়সায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে প্রথম সূর্য বেশ সুনাম অর্জন করে। প্রথম সূর্য নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। এটার ওপর তথ্যচিত্র তৈরি করেছে এটিএন নিউজ। এছাড়া বিটিভিতে তিন সিরিজের নিউজ, ডেইলি স্টার, প্রথম আলো এবং ইত্তেফাকসহ গোটা দশেক পত্রিকায় বিশেষ সংবাদ বের হয়েছে। প্রথম সূর্য স্কুলটির নামে একটি অনুদান মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিয়েছে বলেও জানা গেছে। একই সাথে জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘তাগুচি কন্সট্রাকশন কোম্পানি’ এই পথশিশুদের নিরাপদে শিক্ষা ও বসবাস নিশ্চিত করতে একটি সেফ হোম পরিচালনা করার অনুদানও দিয়েছে।
বিষয়টি সত্য জানিয়ে নাসির উদ্দিন বিশ্বাস রুবেল বলেন, ‘প্রথম সূর্য স্কুলে অনুদানের পাশাপাশি জাপানি অনুদানে উত্তরায় একটি সেন্টার হোম চলছে। এখন সেখানে ২৩ জন শিশু রয়েছে। এই অনুদান নিয়ে বছর খানেক আগে একটি কমিটি করার প্রস্তাব আসে। এরপর ওই কমিটির স্থায়ী সদস্য হতে চাপ দেন বর্তমানে ‘হাসি মুখ’ নামে চলমান স্কুলটির বেশ কয়েকজন ভলেন্টিয়ার। যারা এখন নূসরত একার সাথে কাজ করছে। সে সময় প্রথম সূর্য স্কুলের চেয়ারম্যান ওয়াহিদা শিরীন পপি এর বিরোধিতা করেন। পরে তারা ক্ষেপে গিয়ে একার সঙ্গে মিলে প্রথম সূর্য স্কুলের দখল নেয়।”
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে নিজেকে ‘হাসি মুখ’ পথশিশু স্কুলে একজন ডোনার বলে পরিচয় দেন নূসরত একা। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল। রুবেল স্কুলের ভলেন্টিয়ারদের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় সে নিজে থেকেই এখান থেকে সরে পড়েছেন। সৎ কাজের জন্য এ স্কুলের পিছনে আমি নিজে প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা দিই। এটা নিয়ে অনেকেই নানা গুজব তুলছে। আসলে আপনি আমার সাথে বসলে সত্য জানতে পারবেন।”
বিষয়টি নিয়ে আরো ভালো করে জানার জন্য নিজের চাচা সাহাবুদ্দিন চুন্নু নামে এক ব্যক্তির সাথে সবাই মিলে বসে আলোচনা করার আহ্বান জানান একা। এরপর তিনি এও বলেন, কিছু দিন ধরে বেশ কিছু ক্যাডার নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার সাথে দুর্ব্যবহার করছে। বিষয়টি নিয়ে আপনাদের সাথে বসলে ভালো হবে। আর এটা নিয়ে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।