খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ : ঢ়ুঢাকার কল্যাণপুরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জমি থেকে বস্তি উচ্ছেদের ওপর হাই কোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আপিল বিভাগেও বহাল রয়েছে।
এ বিষয়ে হাই কোর্ট যে রুল দিয়েছিল, চার সপ্তাহের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করারও নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেয়।
হাই কোর্টে এ বিষয়ে রুলের ওপর শুনানি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে।
হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মালিকানায় থাকা প্রায় ৫০ একর ওই জমির মধ্যে ১৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বস্তি।
বেশ কয়েক বছর আগে একবার আগুন লাগায় এর নাম হয়ে যায় পোড়া বস্তি। সেখানে কয়েক হাজার ঘরে অন্তত ২০ হাজার মানুষ এতোদিন বসবাস করে আসছিলেন বলে স্থানীয়দের তথ্য।
২০০৩ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ওই জমি থেকে বস্তি উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে আদালতের স্থগিতাদেশ আসে। এরপর আরও দুই দফর সেই উদ্যোগ নেওয়া হলেও আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ কয়েকটি বেসরকারি সংগঠনের চেষ্টায় তা আটকে যায়।
সর্বশেষ চলতি বছর ২১ জানুয়ারি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ওই জমিতে আবারও উচ্ছেদ অভিযানে গেলে বস্তিবাসীর সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে বাধা উপেক্ষা করেই পুলিশের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন গণপূর্তের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
অন্যদিকে ওই উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা চেয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রলায়ের চিঠির অনুলিপি নিয়ে আদালতে যায় আসক। উচ্ছেদ চলার মধ্যেই বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চ তাতে নিষেধাজ্ঞা ও রুল জারি করে।
অবশ্য ততোক্ষণে বস্তির প্রায় এক-চতুর্থাংশ উচ্ছেদ হয়ে গেছে; ভাঙা হয়েছে প্রায় ২০০ ঘর।
এরপর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই বস্তির অন্য মাথায় বেলতলী মাঠ এলাকার আট নম্বর বস্তিতে আগুন লাগলে শতাধিক ঘর পুড়ে যায়।
ওই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে ‘সরকারি দলের লোকদের’ দিকে আঙুল তোলেন বস্তির বাসিন্দারা।
এরপর গত ২৪ জানুয়ারি হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে গেলে বিচারক বিষয়টি শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এর ধারাবাহিকতায় রোববার তা আপিল বেঞ্চে আসে।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল আমাতুল করীম।
আর রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে ২১০ জনের একটি তালিকা দিয়ে বলেন, ওই ‘অবৈধ বস্তিতে’ বসবাস করতেন ১৬ জন। বাকিরা সবাই সেখানে ব্যবসা খুলে বসেছিল।
অন্যদিকে ব্যারিস্টার আমীর বলেন, “আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ২০ হাজার লোক সেখানে বসবাস করে আসছিল।”
আদেশের পর ব্যারিস্টার আমীর বলেন, “হাই কোর্ট যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তা বলবৎ থাকবে। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।