খোলা বাজার২৪, সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী, সহায়তাকারী এমনকি তাদের সন্তানেরাও বাংলাদেশের নাগরিক হতে অযোগ্য হবেন। এমন বিধান রেখে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
খসড়াটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য আজকের নিয়মিত বৈঠকের কার্যসূচিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে আলোচ্য আইন কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে এখানে জন্মগ্রহণকারীদের জন্ম সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক বলে বিবেচনা করা হয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে আইন কার্যকর হওয়া পর্যন্ত সময়ে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ কেউ করলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। এ বিবেচনায় যদি এ সময়ের মধ্যে কেউ মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে সে ক্ষেত্রেও আইনটি প্রযোজ্য হবে।
এ দিকে গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানান, মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
আইনের খসড়ায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আনুগত্য প্রকাশ করলে, বিদেশি রাষ্ট্রের কোনো বাহিনীতে যোগদান করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে বা অন্য কোনোভাবে উক্ত বাহিনীকে সহায়তা করলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক থাকতে বা হতে পারবেন না। এছাড়া কেউ বিদেশি কোনো সামরিক বা আধাসামরিক বাহিনী বা অন্য কোনো বিশেষ বাহিনীতে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে বা বাংলাদেশের অস্তিত্ব অস্বীকার ও দেশ বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে তাদের সন্তানেরাও বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার অযোগ্য হবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, আইনটি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন বা কোনো বিদেশি বাহিনীকে বাংলাদেশবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্রের সহায়তা করেছেন, তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হবে। এমনকি তাদের সন্তানরাও নাগরিক হতে পারবেন না। এটি আইন পাস হলে বিধি দ্বারাই স্পষ্ট করা হবে।
বাংলাদেশে নাগরিকত্ব প্রদান, নাগরিকত্ব বাতিলসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ (টেম্পোরারি প্রভিশনস) অর্ডার, ১৯৭২’ বলবৎ রয়েছে। এ-সংক্রান্ত মূল আইন হচ্ছে ‘দ্য সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট, ১৯৫১’। বহিরাগমন, নাগরিকত্ব অর্জন, সংরক্ষণ, পরিত্যাগ, অবসান ইত্যাদি বিষয়ের সমাধান দেওয়া এ দুটি আইনে সম্ভব হচ্ছে না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি আইন একীভূত করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা প্রবাসীদের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান রেখে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন করা হচ্ছে। সংসদ সদস্য, সাংবিধানিক পদধারী এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্তরাও দ্বৈত নাগরিক হতে পারবেন না। মিথ্য তথ্য দিয়ে নাগরিক হলে তা বাতিলসহ মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অভিবাসীদেরও নাগরিক করার ক্ষেত্র রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে নাগরিকত্ব প্রদান, নাগরিকত্ব বাতিলসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় সুস্পষ্ট করার জন্য ‘দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ (টেম্পোরারি প্রভিশনস) অর্ডার ১৯৭২ বলবৎ রয়েছে। ‘দ্য সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৫১’-এর অধীনে ওই আদেশ জারি করা হয়। বহিরাগমন, নাগরিকত্ব অর্জন, সংরক্ষণ, পরিত্যাগ, অবসান ইত্যাদি বিষয়ের সমাধান দেয়া এই দুই আইনে পরিষ্কার নয়। তাই দুই আইন একীভূত করে ‘বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন ২০১৬-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।