Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

37খোলা বাজার২৪, সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : চট্টগ্রাম নগরে মিটার ছাড়া রাস্তায় নামার অপরাধে আজ সোমবার সকাল থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত এক হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। আজ থেকেই নগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে চলাচল নিশ্চিত করার অভিযান শুরু হয়। নির্দেশ অমান্যকারী অটোরিকশার বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন স্থানে এসব মামলা দেওয়া হয়।
মিটারে চলাচল নিয়ে পুরোনো অটোরিকশার বিরুদ্ধে যখন ধরপাকড় চলছে তখন নতুন নম্বরবিহীন অটোরিকশাগুলো দিব্যি নগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উচ্চ আদালত থেকে আদেশ নিয়ে ‘এএফআর’ লিখে নগরে পাঁচ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেগুলো আটক করা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
এদিকে আজ সকাল থেকে নগরে অটোরিকশা অন্যান্য দিনের চেয়ে কম দেখা গেছে। নগরের বিভিন্ন মোড়ে পুরোনো অটোরিকশাগুলো দাঁড় করিয়ে মিটার এবং মিটারের কাগজ পরীক্ষা করতে দেখা গেছে।
নগরের ষোলোশহর দুই নম্বর গেট মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা দুপুর ১২টার দিকে মিটার না থাকায় কয়েকটি অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা দেন। মো. মোবারক নামে এক অটোরিকশা চালক ওই স্থানে বলেন, ‘আজ থেকে মিটারে চলাচল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু আমার গাড়িতে মিটার নেই। তাই মামলা খেয়েছি।’
মিটার না থাকলেও যদি মিটার লাগানোর আবেদন করার কাগজটি থাকে সে ক্ষেত্রে মামলা দেওয়া হচ্ছে না। সোমবার থেকে তিন দিন অর্থাৎ বুধবার পর্যন্ত আবেদনপত্র দেখালে মামলা দেওয়া হবে না বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ-উল হাসান।
মাসুদ-উল হাসান বলেন, ‘মিটারে চলাচলের বাধ্যবাধকতার প্রথম দিনে সোমবার আমরা বেলা দেড়টা পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মামলা দিয়েছি। নগরের ১০টি স্থানে আমরা চেকপোস্ট বসিয়ে এই অভিযান শুরু করেছি। যারা মিটার লাগানোর আবেদনপত্র দেখিয়েছে তাদের আজ থেকে তিন দিন ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে। অর্ধেকেরও বেশি অটোরিকশায় মিটার লেগেছে।’ অভিযানের কারণে দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন অটোরিকশা মিটার লাগানোর তোড়জোড় শুরু করে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিটারবিহীন কিছু কিছু অটোরিকশা পুলিশকে ফাঁকি দিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো এড়িয়ে চলেছে। তবে মিটার চালু থাকলেও সোমবারও অনেক অটোরিকশা মিটারের পরিবর্তে যাত্রীর সঙ্গে চুক্তিতে গন্তব্যে যাতায়াত করেছে বলে অভিযোগ। নিউ মার্কেট থেকে আগ্রাবাদ যাওয়ার জন্য এক যাত্রী অটোরিকশা দরদাম করতে ছিলেন। অটোরিকশা চালকও মিটার থাকা সত্ত্বেও চুক্তিতে ৮০টাকায় ওই ভাড়া নেন। নাম জানতে চাইলে ওই চালক বলেন, ভাই নাম দিয়ে আপনি আমারে মামলা খাওয়াবেন। যাত্রী যেভাবে চায় সেভাবেই আমরা যাচ্ছি।
মিটারে চলাচলের বাধ্যবাধকতার কারণে সোমবার নগরে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল কিছুটা কম ছিল। আজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ায় এই সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে। বেলা একটায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অটোরিকশা খুঁজতে দেখা গেছে। নগরের চট্টগ্রাম সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে একটি অটোরিকশা আসতেই সেটি ভাড়া নেওয়ার জন্য কয়েকজনকে একসঙ্গে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যায়। আসাদুজ্জামান নামের এক অভিভাবক বলেন, আমি মাদারবাড়ি যাব পরীক্ষার্থী ছেলেকে নিয়ে। কিন্তু অটোরিকশা পাচ্ছি না।
অভিযানের সময় নম্বরবিহীন অটোরিকশাগুলোকে দিব্যি চলতে দেখা গেছে। উপকমিশনার মাসুদ-উল হাসান বলেন, ওগুলো নিবন্ধনহীন। আমরা তাদের মিটার লাগাতে বলিনি। আদালতের আদেশে তারা চলছে। দুই-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে রায় হবে। আদালত তাদের বিপক্ষে রায় দিলে আমরা জব্দ করব।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগরে পুরোনো নিবন্ধনযুক্ত ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিল। তার মধ্যে এখন সাত হাজারের কিছু বেশি রাস্তায় রয়েছে। পাশাপাশি নতুন নম্বরবিহীন অটোরিকশা চলছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার।
উল্লেখ্য, ঢাকা ও চট্টগ্রামে একসঙ্গে মিটারে অটোরিকশা চলাচল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও চট্টগ্রামে মিটার সংযোজন বা মেরামতের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় দুই দফায় তিন মাস সময় বাড়িয়েছে।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরে এবার আটটি কোম্পানিকে মিটার কেলিব্রেশন, মেরামত ও সংযোজনের জন্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানি অনেক আগে থেকে মিটারের কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। অনেকে এটা না মেনে সময়মতো মিটার সংযোজন করেনি।