Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

53খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : একটি রেল স্টেশন, তার পাশে একটি বাজার- ৩৭ বছর আগের এই আবছা স্মৃতিটুকু সম্বল করে নিজের শিকড় খুঁজতে নেদারল্যান্ডস থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন সুলতানা ফন দে লেস্ত। সাথে নিয়ে এসেছেন তার স্বামী পেশায় ডিজাইনার ইয়োরিস ইয়াকবস ও ১০ বছর বয়সী ছেলে নোয়াহ আবেদ নাবিলা ইয়াকবসকেও। সুলতানা স্থানীয়দের সহায়তায় নিজের জন্মস্থান ও হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পাবেন বলে আশাবাদী।
১৯৭৯ সালের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডসের একটি আর্ন্তজাতিক সংস্থার কাছে চট্টগ্রামের দোহাজারীর বাসিন্দা রহিমা খাতুন তার চার বছর বয়সী নাতনি সুলতানাকে দত্তক দেওয়ার জন্য হস্তান্তর করেন। এরপরই নেদারল্যান্ডের শহর আইন্দোহ্যফেনের এক নিঃসন্তান দম্পতি দত্তক নেয় তাকে। তার নতুন নাম হয় সুলতানা ফন দে লেস্ত, তাকে ওই এলাকার সকলেই সুতানা নামেই চেনে।
নেদারল্যান্ডসের সংস্থাটির কাছে হস্তান্তরের হলফনামার একটি অনুলিপি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন শিকড় খুঁজতে আসা পরিণত সুলতানা। বর্তমানে পেশায় স্কুল শিক্ষক সুলতানা বলেন, “আমি আমার পরিবার সম্পর্কে জানি না। শুধু জানি বাংলাদেশ থেকে আমাকে দত্তক হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ৩৭ বছর আমার সাথে বাংলাদেশের কোনো যোগাযোগ নেই। “আমি আমাকে, আমার শিকড় জানতেই বাংলাদেশে এসেছি। আমার স্বামী আমাকে এ বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছেন।”
সুলতানাকে বাংলাদেশে তার পরিচয় জানার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে স্লোব বাংলাদেশ নামে ঢাকার একটি উন্নয়ন সংস্থা। তাদের সহযোগিতা নিয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন সুলতানা।
স্লোবের সাবেক কর্মকর্তা ইসমাইল শরিফ বলেন, “১৯৭৯ সালে চার বছর বয়সী সুলতানাকে তার দাদি রহিমা খাতুন যথাযথভাবে লালন পালনের জন্য ‘নেদারল্যান্ডস ইন্টার কান্ট্রি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ঢাকা’র নিকট দত্তকের জন্য হস্তান্তর করে।’’
পরবর্তীতে সংস্থাটির মাধ্যমে সুলতানাকে নেদারল্যান্ডসের একটি পরিবার দত্তক নেয় এবং সেখানেই বড় হয়ে ওঠেন। ইসমাইল শরিফ বলেন, “সুলতানার হস্তান্তরের একটি হলফনামার ইংরেজি অনুলিপি ছাড়া আর কোনো ডকুমেন্ট তার কাছে নেই, যেটি ধরে তার পরিবারের কাছাকাছি যাওয়া যাবে।’’
ওই হলফনামাতে লেখা আছে- সুলতানার জন্ম ১৯৭৫ সালের ৮ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম জেলার তৎকালীন পটিয়া উপজেলার দোহাজারীতে (বর্তমানে চন্দনাইশ উপজেলার অর্ন্তগত)।
এতে দাদি হিসেবে রহিমা খাতুন সুলতানার ভরণপোষণ চালাতে না পারা এবং তার বাবা-মা উভয়ই মারা যাওয়ার কারণ দেখিয়ে দত্তকের জন্য ‘হস্তান্তর’র কথা উল্লেখ রয়েছে। এতে রহিমা খাতুনের স্বামীর নাম উল্লেখ রয়েছে মৃত কদম আলী।
সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, “পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা হবে কি না- নিশ্চিত না হলেও আমি আশাবাদী। আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো স্মৃতিই আমার স্মরণে নেই।”
নেদারল্যান্ডসে স্বামী-সন্তান নিয়ে তার জীবন কেমন চলছে জানতে চাইলে সুলতানার উত্তর, ‍“আমি খুব সুখী তাদের নিয়ে। আমার পরিবারের সকল সদস্যই জানে- আমি বাংলাদেশ থেকে দত্তক হিসেবে এসেছি। এ নিয়ে কোনো সমস্যাও নেই।”
ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নেদারল্যান্ডসে প্রাইমারি স্কুল টিচার হিসেবে কাজ করছি। তের বছর আগে পরিচয় পেশায় ডিজাইনার ইয়োরিস ইয়াকবসের সাথে, সেখান থেকেই প্রেম এবং আট বছর আগে আমরা বিয়ে করি।”
স্বামী-সন্তান দুজনই তাকে তার পরিচয় জানার ক্ষেত্রে উৎসাহ দিয়েছেন উল্লেখ করে সুলতানা বলেন, “তারাও আমার সাথে বাংলাদেশে এসেছেন এবং আমার জন্মস্থান দেখতে যাবেন।”
শিকড়ের খোঁজে আসা সুলতানা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার পর বলেন, “আমার শিশু বয়সের কোনো স্মৃতিই মনে নেই। শুধু জানতাম বাংলাদেশ থেকে আমাকে দত্তক হিসেবে আনা হয়েছে।
“একটি রেল স্টেশন, তার পাশে একটি বাজার আছে এবং সেখানে কোনো কিছু হচ্ছিল তেমন একটা স্মৃতিই শুধু আমার মনে আছে।”
সুলতানা বলেন, “তাকে দত্তক নেওয়া বাবার নাম ক্রিস এবং মায়ের নাম থেয়া। এস কামাল নামে তাদের আরেক দত্তক নেওয়া সন্তান রয়েছে। তাকেও বাংলাদেশ থেকে আনা হয়েছিল। আপন ভাই-বোনের মতো বড় হয়েছি।”
একই পরিবারে তারা সুখী পরিবেশের মধ্যে বড়ো হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “বড় হবার সময়ে কখনোই মনে হয় নি বা বুঝতে পারিনি আমি দত্তক সন্তান।”
জন্মভূমির প্রতি একটা গভীর টান অনুভব করেন উল্লেখ করে এই নারী আরও বলেন, “সে কারণেই নেদারল্যান্ডস থেকে বাংলাদেশে আসা।
“নিজের শিকড়, পরিবারের সদস্যদের খুঁজে না পেলেও জন্মভূমির টানে আবারও বাংলাদেশে আসবেন এবং খুঁজে ফিরবেন নিজেকে,” বলেন সুলতানা।
স্লোব বাংলাদেশের সাবেক কর্মকর্তা ইসমাইল শরিফ বলেন, সুলতানার জন্ম পরিচয় এবং পরিবারের সদস্যদের খুঁজতে চন্দনাইশের স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি।
তিনি সুলতানার পরিবারের পরিচয় জানার ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার সুলতানা, তার স্বামী-সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারীতে যাবেন, খুঁজবেন তার জন্মস্থান, পরিবারের সদস্যদের। গত সোমবার নেদারল্যান্ডস থেকে আসা সুলতানা আগামী ১১ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবেন।