খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: শুধু চোর, ডাকাত, বোমা-বারুদের গন্ধ শোঁকাতেই ওস্তাদ কুকুরেরা? মোটেও না। অন্তত কোনও কোনও কুকুর প্রমাণ করে দিচ্ছে, অন্য কাজেও তারা কতটা দড়। এমনকী গন্ধ শুঁকে ক্যান্সার শনাক্তকরণের মতো জটিল কাজও করে ফেলতে পারে তারা। যেমন বিরল এই ক্ষমতা আছে লুসির। এযাবৎ মারণরোগ শনাক্তকরণে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক সে।
ল্যাব্রেডর রিট্রিভার ও আইরিস ওয়াটার স্প্যানিয়েল- এই দুই প্রজাতির সংকর লুসি। সারমেয়কুলের চলতি ঘ্রাণশক্তির পরীক্ষায় ভাল ফল করতে পারেনি লুসি। অন্য যে গন্ধে সে প্রভুর পথ হারিয়ে ফেলত। তখনই তাকে অন্যরকম কাজে লাগানোর কথা মাথায় আসে তার মালিকের। ঘ্রাণেই ক্যান্সার শনাক্তকরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাকে। তাও এক আধ বছর নয়, টানা সাত বছর ধরে। আর প্রশিক্ষণ শেষে লুসি হয়ে ওঠে এই কাজে প্রায় বিশেষজ্ঞের সমান। এমনকী ল্যবরেটরির পরীক্ষা থেকেও বেশি পারফেকশন দেখা যায় লুসির কাজে। অন্তত ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সে সঠিকভাবে ক্যান্সার চিনতে পেরেছে। ‘মেডিক্যাল ডিটেশন ডগ’ নামে এক ব্রিটিশ সংস্থার হয়ে সে এখন ক্যান্সার চেনার কাজ করে চলেছে। তার মতো আছে আরও সাতটি কুকুর। সংস্থার সিইও ক্ল্যারি গেস্টেরও ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। আর সে ক্যানসার চিনতে পেরেছিল তাঁর পোষা ল্যাব্রেডর ডেইজি।
কুকুরদের ঘ্রাণশক্তি প্রবল কেননা মানুষের যেখানে ঘ্রাণ নেওয়ার কোশের সংখ্যা ৫ মিলিয়ন, সেখানে কুকুরের এই কোশের সংখ্যা ৩০০ মিলিয়ন। এছাড়া কুকুরের একটি দ্বিতীয় ঘ্রাণেন্দ্রিয় থাকে, যাকে বলা হয় জ্যাকবসন অর্গ্যান। এই দুয়ের সম্মিলনেই কুকুরদের ক্ষেত্রে ক্যান্সার শনাক্তকরণ সহজ হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কুকুরদের এই বিরল ক্ষমতা মানুষ প্রথমে বুঝতে পারেনি। ১৯৮৯ সালে তাদের এই পরিচয় পাওয়া যায়, যখন লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালের জনৈক ডাক্তার এটির সন্ধান পান। এক মহিলার থেকে তিনি জানেন যে, তাঁর পায়ের আঁচিলের গন্ধ শুঁকে তাঁর পোষ্য অন্যরকম আচরণ করতে শুরু করে। পরীক্ষা করতে গিয়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে ওই মহিলার। সেই থেকে কুকুরদের এই ক্ষমতার কথা জানা যায়।
শুধু দেশরক্ষা বা নাশকতা রোধে বোমা-বারুদ শনাক্তকরণ নয়, শরীরের মারণরোগ চিনতেও এখন বিশেষজ্ঞদের মতো কাজ করছে সারমেয়রা।