Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

2খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : বাবুল মাতবর যখন আগুনে পুড়ছিলেন, মিরপুরের শাহ আলী থানার তিন কর্মকর্তা তখন ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন। কিন্তু তাঁরা বাবুলকে উদ্ধারে এগিয়ে যাননি। ইচ্ছা করলে তাঁরা বাবুলকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারতেন।
শাহ আলী থানার ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ এনে প্রতিবেদন দিচ্ছে বাবুল হত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটি আজ এই প্রতিবেদন জমা দেবে।
অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তারা হলেন শাহ আলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মমিনুর রহমান খান, এসআই নিয়াজউদ্দিন মোল্লা ও এএসআই দেবেন্দ্র নাথ। ইতিপূর্বে এই তিন কর্মকর্তাসহ থানার পাঁচ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শাহীন মণ্ডলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাসুদ আহমদ খান গতকাল শনিবার বলেন, তদন্ত শেষে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। রোববার তিনি মিরপুর বিভাগের উপকমিশনারের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেবেন।
পুলিশের উপস্থিতিতে চা-দোকানি বাবুলকে মারধর ও কেরোসিনের চুলার ওপর ফেলে দিয়ে দগ্ধ করার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার পুলিশ দুটি কমিটি গঠন করে। মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাসুদ আহমদ খানকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরের উপকমিশনার (শৃঙ্খলা) টুটুল চক্রবর্তীকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়।
মিরপুর বিভাগের তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, গত বুধবার রাতে শাহ আলী থানার পুলিশের সোর্সরা মিরপুর ১ নম্বরের চিড়িয়াখানা লেকের পাড়ে কিংশুক সমবায় সমিতির পাশে চা-দোকানি বাবুল মাতবরের (৫০) কাছে যান। তখন কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সোর্স দেলোয়ারের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় বাবুল কেরোসিন তেলের জ্বলন্ত চুলার ওপর পড়ে যান। এতে বাবুলের সারা শরীর পুড়ে যায়। ঘটনাস্থলের অদূরে থাকা শাহ আলী থানার এসআই মমিনুর রহমান, এসআই নিয়াজউদ্দিন মোল্লা ও এএসআই দেবেন্দ্র নাথ উপস্থিত ছিলেন। তারা ইচ্ছা করলে এগিয়ে গিয়ে বাবুলকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। এ ক্ষেত্রে তারা কর্তব্য পালনে অবহেলা ও গাফিলতি করেছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাবুলের স্ত্রী লাকি বেগম শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছিলেন, গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে চাঁদা না দেওয়ায় পুলিশের সোর্স দেলোয়ার লাথি মেরে বাবুলকে জ্বলন্ত চূলায় ফেলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে বাবুলের সারা গায়ে আগুন ধরে যায়। চার পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন। বাবুল মাটিতে গড়াগড়ি করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তিনি বালতিতে থাকা পানি দিয়ে স্বামীর শরীরের আগুন নেভাতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও কাজ হয়নি। পরে তিনি হাঁকডাক করে মানুষকে ডাকছিলেন। এই পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা চলে যান। সারা শরীর পুড়ে যাওয়া বাবুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করার পর বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া একটার দিকে তিনি মারা যান।
ডিএমপি সদর দপ্তরের করা অন্য কমিটির তদন্ত চলছে। জানতে চাইলে কমিটির প্রধান টুটুল চক্রবর্তী বলেন, এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা না বলার ক্ষেত্রে নিষেধ আছে। তাই তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না।
অবশ্য ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. মারুফ হোসেন সরদার গতকাল বিকেলে বলেন, ডিএমপি সদর দপ্তরের গঠিত কমিটির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
বাবুলের ছেলে রাজু আহমেদ গতকাল বলেন, তাঁর বাবাকে নিষ্ঠুরভাবে পুড়িয়ে মারা পুলিশের বিরুদ্ধে থানা মামলা না নেওয়ায় তাঁরা আদালতে মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তদন্ত কমিটি তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেছে, দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এর আগে পুলিশ বাবুলের মেয়ে রোকসানাকে বাদী করে নয়-দশজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা নিয়েছিল। ওই মামলা নিয়ে তাঁদের আপত্তি আছে। তদন্ত কমিটি বলেছে, প্রয়োজনে ওই মামলায় দোষী পুলিশদের আসামি করা হবে। তাই আপাতত তাঁরা আদালতে আর মামলা করেননি।
আগামীকাল সোমবার বাদ জোহর মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের এইচ ব্লকের গুদারাঘাটের কিংশুক বস্তির বাসায় বাবুলের জন্য দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেছে পরিবার।