Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

21খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : ভর্তির নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার এক মাস পরও প্রভাবশালীদের তদবির ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর এ অবৈধ ভর্তি বাণিজ্যে সহযোগিতা করছে প্রতিষ্ঠানটিতে গড়ে ওঠা এক শ্রেণির দালাল চক্র। দেড় থেকে তিন লাখ টাকায় ভর্তির ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে রোববার তলব করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধান ও প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির ভর্তি লটারিতে এবং অন্যান্য শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি এ ধরনের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। আসল ভর্তি শেষ হওয়ার এক মাস পর এ ভর্তি পুরোপুরি তদবির ও টাকার বিনিময়ে হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্য ও শিক্ষকও জড়িত।
প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করেছেন তারা। প্রতিষ্ঠানের মূল ক্যাম্পাস মতিঝিল শাখায় তিন লাখ, বনশ্রী শাখায় ১ লাখ ৭০ হাজার ও মুগদা শাখায় দেড় লাখ টাকার বিনিময় ভর্তি রশিদ সরবরাহ করা হচ্ছে।
বনশ্রী শাখার প্রধান শিক্ষকদের দফতরের পিয়ন মান্নানের সঙ্গে ভর্তির জন্য যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমাকে কাজ (ভর্তি কাজ) দিলে হান্ড্রেড পার্সেন্ট (শতভাগ) কনফার্ম (নিশ্চিত) হবে। তবে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা লাগবে। আমি দেয়া মাত্রই ভর্তি কনফার্ম হয়ে যাবে। এখন ২০ হাজার টাকা দিবেন বাকি টাকা ভর্তির রসিদ দেয়ার সময় দিলেই হবে। আমার কাজে কোনো মিস নাই।”
টাকা কম দেয়ার কথা বললে তিনি বলেন, “কম দিলে কাজ হতেও পারে নাও হতে পারে। ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিলে গ্যারান্টি দিয়ে ভর্তি করিয়ে দেব। আপনি মনে করতে পারেন- সব টাকা আমি পাব, আসলে আমাকে হাজার পাঁচেক টাকা দেবে।”
কিভাবে ভর্তি করাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রিন্সিপাল না কমিটির চেয়ারম্যানকে দিয়ে করাই তা আপনার জানার দরকার নেই। আপনার কাজ হওয়ার বিষয়। কাজ প্রায় শেষ, যদি করাতে চান আজই টাকা দিতে হবে। এক সপ্তাহ আগে দিলে দেড় লাখ দিলেও হতো।”
শুধু মান্নানই নয়। প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির কোনো কোনো সদস্যের অফিস বা বাসা থেকে ভর্তির টাকা জমা দেয়ার রশিদ বিতরণ করা হচ্ছে। এমনকি শিক্ষকরাও ভর্তির রশিদ দিচ্ছেন। অনুসন্ধানের এমনটাই জানা গেছে।
রোববার মতিঝিলের মূল ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, অভিভাবকরা দু-একজন করে স্কুলে ঢুকছেন, আর ভর্তির রশিদ নিয়ে বেরিয়ে আসছেন। তাদেরই একজন ফিরোজ নামের এক অভিভাবক বেশ উল্লাস প্রকাশ করে ভর্তি রশিদের জন্য অপেক্ষমান অভিভাবকদের দেখাচ্ছেন।
কত টাকায় ভর্তি রশিদ পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আপনার সন্তানকে ভর্তি করাতে চাইলে পিয়নদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তারা সব ম্যানেজ করে দেবে।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভর্তি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে (ধারা-৫)। শূন্য আসন সংখ্যা উল্লেখ করে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে (ধারা-৭-এর ঘ)।
নীতিমালা অনুযায়ী গত বছরের ১৮ নভেম্বর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে চলতি শিক্ষাবর্ষে তিন ক্যাম্পাসে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৪০টি আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। এসব আসনের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে লটারি এবং অন্য শ্রেণিতে পরীক্ষা নিয়ে ভর্তির কাজ শেষ করা হয়েছে। এক মাস ধরে এসব শিক্ষার্থীরা ক্লাসও করছে।
এদিকে নীতিমালা উপেক্ষা করে এখন আবার নতুন করে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করায় অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক এই ভর্তিকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়েছেন। এমনকি অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করায় লেখাপড়ার মান নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
কয়েকজন অভিভাবক দাবি করেন, এখন বিজ্ঞপ্তির বাইরেও আরো ২ হাজারের বেশি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির কথা শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কতজনকে অতিরিক্ত ভর্তি করা হবে তা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও জানেন না।
গভর্নিং বডির একাধিক সদস্য জানান, বছরের শুরুতে ভর্তিকালে নতুন ভবনের কাজ চলছিল। ওই ভবনের কাজ শেষ হওয়ায় এখন কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। সে কারণেই ভর্তি করা হচ্ছে। সরকার ও রাজনৈতিক বিভিন্ন পর্যায় থেকে তদবিরের কারণে এ ভর্তি করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা। মূলত নীতিমালা লঙ্ঘন করে এ ভর্তির কাজে গভর্নিং বডির একাধিক সদস্য ভূমিকা রাখছেন বলে অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক অভিযোগ করেছেন।
তবে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. শাহানা আক্তারের অফিস কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিলে তাও বন্ধ পাওয়া যায়।