Tue. Jul 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

7খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রোববার ওড়িশার পারাদীপে বৃহৎ একটি তেল শোধনাগারের উদ্বোধন করেছেন, যেখানকার উৎপাদনের একটা বড় অংশ বাংলাদেশে রফতানির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী চৌধুরী নিজেও ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, এবং ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনায় ভারত থেকে বাংলাদেশে আবার পেট্রোরিয়ামজাত পণ্য রফতানি শুরু করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলি বাংলাদেশে শুধু রফতানিই করবে না, সেখানে একটি পুরোদস্তুর ‘বিপণন অবকাঠামো’ গড়ে তুলবে বলেও জানা যাচ্ছে।
ওড়িশার বন্দর-শহর পারাদীপে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের যে বিরাট তেল শোধনাগারের উদ্বোধন করেছেন, ভারতের পেট্রোলিয়াম খাতে এত বড় মাপের লগ্নি সাম্প্রতিক কালের মধ্যে হয়নি।
প্রায় ৩৫ হাজার কোটি রুপি খরচ করে তৈরি এই প্রকল্পে প্রতি বছর তৈরি করা যাবে ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পেট্রোপণ্য।
কিন্তু পূর্ব ভারতে বঙ্গোপসাগরের তীরে এই শোধনাগারটির মোট যা উৎপাদন, দেশের ভেতরের চাহিদা মিটিয়েও তার অনেকটা উদ্বৃত্ত থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। আর সে জন্যই কাছের দেশ বাংলাদেশে এর একটা বড় অংশ রফতানি করতে চাইছে ভারত।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী চৌধুরীকে পারাদীপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুধু সে জন্যই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল – প্রধানমন্ত্রী মোদিও তাকে মঞ্চে বিশেষভাবে সম্ভাষণ জানিয়েছেন।
এই অনুষ্ঠানের আগেই অবশ্য ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন মি চৌধুরী। সেই বৈঠকে প্রধান সরাসরি জানান, ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম বা হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের মতো ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থাগুলো বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম খাতে লগ্নি করতে ও একটা মার্কেটিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়তে ভীষণ উৎসাহী।
আর এই সহযোগিতার সূত্রপাত হতে পারে পারাদীপে উৎপাদিত পরিশোধিত তেল সমুদ্রপথে বাংলাদেশে রফতানির মধ্যে দিয়ে।ওই বৈঠকের বিষয়ে ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াই কে বাওয়েজা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলার বদলে বলা ভাল জ্বালানি খাতে দুই দেশের সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
‘পারাদীপ থেকে তেল রফতানিই শুধু নয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এলপিজি রফতানির জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার বা ট্রানজিটের সুবিধাও চাওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংস্থাগুলি যে বাংলাদেশে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান করতে চায়, শোধনাগারের সম্প্রসারণ ঘটাতে চায় জানানো হয়েছে সেটাও’, বলছিলেন ওই মুখপাত্র।
এই বৈঠকের পর তৌফিক ইলাহী চৌধুরীও ভুবনেশ্বরে সাংবাদিকদের বলেছেন, জ্বালানি খাতে দুই দেশের সহযোগিতায় তারা কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে চান।
বস্তুত এই পরিকল্পনা দিনের আলো দেখলে ভারত থেকে বাংলাদেশে শুধু পেট্রোপণ্যই যাবে না, সে দেশের রাস্তায় হয়তো অচিরেই দেখা যাবে ইন্ডিয়ান অয়েল বা ভারত পেট্রোলিয়ামের পেট্রল পাম্প।
ভারত আরও মনে করছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তুলনায় কাছের পারাদীপ থেকে তেল আমদানি করলে বাংলাদেশের খরচও কম পড়বে।
নরেন্দ্র মোদি রবিবার পারাদীপের উৎপাদন ক্ষমতার বিশদ বিবরণ দিয়ে দাবি করেছেন – তেল রফতানির ক্ষেত্রে বিদেশের ওপর ভারতের যে নির্ভরশীলতা, তা অনেকটাই কমাতে সাহায্য করবে এই শোধনাগার।
আর শুধু তাই নয়, নেপালকে বাদ দিলে বিদেশে প্রথমবারের মতো ভারতের পরিশোধিত তেল রফতানিরও সূচনা হতে পারে এই পারাদীপ থেকে – যে পেট্রোপণ্যের গন্তব্য হবে বাংলাদেশ।সুত্র:বিবিসি।