খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : ১ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়েছে আইপিএলের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। কাল দুপুরে বিসিবি একাডেমি ভবনে বাংলাদেশ দলের এই বাঁহাতি পেসারের সঙ্গে কথা হলো আইপিএল, তাঁর চোট ও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে-
* পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলতে পারলেন না চোটের কারণে। এবার আরও বড় সুযোগ, খেলতে যাবেন আইপিএলে। আইপিএলে দামটা কি আরও বেশি পেতে পারতেন?
মুস্তাফিজুর রহমান: আমি আসলে এসব ভালো বুঝি না।
* আইপিএলে দল পাওয়ার ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?
মুস্তাফিজ: আত্মবিশ্বাসী বলতেৃজুনে ভারত সিরিজে ভালো করায় ওদের নজরে এসেছিলাম। সে কারণেই হয়তো ভেবেছিলামৃ
* ওই সিরিজের পর থেকেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আপনাকে ভীষণ গুরুত্ব দিচ্ছে।
মুস্তাফিজ: ওদের মিডিয়া আমাকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছে, তা তো বলতে পারব না।
* কেন, ভারত সিরিজে দুর্দান্ত বোলিংয়ের জন্য!
মুস্তাফিজ: (হাসি) হবে হয়তো!
* শুনেছেন নিশ্চয়ই, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অভিষিক্ত ভারতীয় বাঁহাতি পেসার বারিন্দর স্রানকে দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে ভারতের ‘মুস্তাফিজ’!
মুস্তাফিজ: আইপিএলে স্রান আর আমি তো একই দলে।
* তাঁর সঙ্গে একই দলে খেলতে কেমন লাগবে?
মুস্তাফিজ: সময় হোক, তার পর বলা যাবে। কিছু হওয়ার আগে তো ভেবে লাভ নেই।
* সম্প্রতি কাঁধের চোটে পড়েছেন। চোট নিয়ে মনে হচ্ছে চিন্তিতৃ
মুস্তাফিজ: এখন বেশ ভালো আছি। জোরে বোলিং করলে ব্যথা লাগে না। তবে আমার বলগুলো (বিশেষ করে কাটার) করলে ব্যথা অনুভব হয়। আর বোলিং করলাম মাত্র কয়দিন। এখন বুঝতে পারছি না সামনে কী হবে। তবে আত্মবিশ্বাস আছে যে চোট কাটিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু পুরোপুরি ফিট থাকা আর চোটের চিন্তা নিয়ে খেলার মধ্যে পার্থক্য তো থাকেই। এতটুকু বলতে পারি, এখন অবস্থা ভালো। দোয়া করবেন ওপরওয়ালা যেন এশিয়া কাপ-বিশ্বকাপের আগে আরও ভালো করে দেন।
* আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার পর এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতা হলো।
মুস্তাফিজ: প্রথম ব্যথা অনুভূত হয়েছিল জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে। এর পর বিপিএল খেললাম। তবে বেশি সমস্যা হলো জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। ওই সময় খুব একটা বোলিং করিনি। কোচকে বলার পর একপর্যায়ে তিনি আমাকে বিশ্রাম দিলেন।
* আপনার বেশির ভাগ সাফল্য পুরোনো বলে। নতুন বলে ভালো করার জন্য কী করছেন?
মুস্তাফিজ: চেষ্টা করছি নতুন বলে ভালো করার। ধরুন, নতুন বলে ভালো কিছু করতে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে ওভারপ্রতি ১০-এর ওপরে রান দিলাম, তাতে লাভ হলো কী!
* আপনি তো উইকেটশিকারি বোলার। টি-টোয়েন্টিতে কি উইকেট শিকারের দিকে বেশি নজর থাকে?
মুস্তাফিজ: না। টি-টোয়েন্টিতে উইকেট পাওয়ার চেয়ে রান চেক দেওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার লক্ষ্য থাকে যত সম্ভব রান কম দেওয়া।
* অল্প সময়ে অনেক অর্জন আপনার। কোন জীবনটা বেশি উপভোগ্য মনে হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার আগে নাকি পরের?
মুস্তাফিজ: একেক জীবন একেক রকম। আমার কাছে দুই জীবনই উপভোগ্য। বাড়িতে গেলে আগের জীবনে ফিরে যাই। আর ঢাকায় ফিরলে ফিরে আসি বর্তমান জীবনে।
* এখন তো টিভি পর্দায় সরব উপস্থিতি আপনার! এরই মধ্যে বিজ্ঞাপন করেছেন বেশ কয়েকটি। ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে কতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন?
মুস্তাফিজ: আসলে সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করি খেলায়। তবে বিজ্ঞাপন করলে সেখানে তো কিছু করতেই হয়। স্বচ্ছন্দ বোধ না করলেও কিছু না-কিছু করতে হয়। বিজ্ঞাপন হোক আর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি, যেকোনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই অস্বস্তি বোধ করি। তবে দুটির পার্থক্য হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের ক্যামেরার সামনে মজা-টজা করা যায়। সাংবাদিকদের সামনে সেটা করা যায় না। কেমন যেন ভয় লাগে! এটা শুধু আমার নয়, সব খেলোয়াড়ের লাগে।
* অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে আসা যাক। গত যুব বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। ওই বিশ্বকাপে খেলা আপনার পাঁচ সতীর্থ বর্তমান দলটিতে খেলছেন। সেই দলটির কথা নিশ্চয়ই মনে পড়ে?
মুস্তাফিজ: সেই সময়টা আর ওদের কথা তো মনে পড়েই। ওরা যখন এখানে (একাডেমি ভবনে) থাকে, ওদের সঙ্গই আমি বেশি পাই। জাতীয় দলের সতীর্থদের চেয়ে ওদের সঙ্গে বেশি সময় কাটে।
* বাংলাদেশ দলে মাশরাফি বিন মুর্তজার অধীনে খেলছেন আর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজের অধীনে। দুই অধিনায়কের মধ্যে কী পার্থক্য দেখেন?
মুস্তাফিজ: দুজন যার যার জায়গায় সফল। মাশরাফি ভাই জাতীয় দলে আর মিরাজ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে। দুজন যার যার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করে যাচ্ছে। তবে মিরাজ আমার ভালো বন্ধু। ও জাতীয় দলে এলে অনেক ভালো লাগবে।
* এবার যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শিরোপা জেতার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
মুস্তাফিজ: এখনই বলতে পারছি না। আগে থেকে কিছু বলাও ঠিক নয়। তবে বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে, খেলতে থাকুক। দেখা যাক কী হয়।
* ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু জানতে চাই। খেলা না থাকলে সাধারণত কী করেন?
মুস্তাফিজ: ঢাকায় যেখানে থাকি (বিসিবির একাডেমি ভবন), সেখানেই সময় কাটে। যাওয়ার তো খুব একটা জায়গা নেই এখানে। আর বাড়িতে গেলে নানা জায়গায় ঘুরি। ভাই-বন্ধুদের নিয়ে সময় দারুণ কেটে যায়।
* সবচেয়ে ভালো লাগে কোন সময়?
মুস্তাফিজ: উইকেট পাওয়ার পর আর বাড়িতে যাওয়ার সময়। দুটি দুই রকম ভালো লাগা।
* সম্প্রতি আইসিসি বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশে জায়গা পেয়েছেন, এর পর পিএসএলে ও আইপিএলে দল পেয়েছেন। এর মধ্যে কোন খবরটা বেশি আনন্দ দিয়েছে?
মুস্তাফিজ: সবগুলোই সমান আনন্দ দিয়েছে। কোনোটাই ছোট করে দেখতে চাই না।