খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : পৃথিবীতে হাজারো রকমের রহস্য লুকিয়ে আছে। কোন কোন রহস্যের কাছে মানুষ পৌছাতে পেরেছে আবার অনেক রহস্য এখনো হয়তো অজানাই রয়ে গেছে। সম্প্রতি বিবিসি সারাবিশ্বের পাঁচটি রহস্যঘেরা এমন ভুতুড়ে জায়গার নাম উল্লেখ করেছে। যেখানে যাওয়ার জন্য আগ্রহ হতে পারে তবে না যাওয়াই ভালো।
কধহশধষকঙ্কাল লেক (রুপকুন্ড লেক), ভারত
১৯৪২ সালের ঘটনা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই মাইল উঁচু হিমালয় পর্বত শৃঙ্গের ভারতের অংশের রূপকু-ে ব্রিটিশ গার্ডরা ঠা-ায় জমে যাওয়া একটি হ্রদের সন্ধান পান।
অতিরিক্ত ঠা-া এই হ্রদের আশেপাশে যা পাওয়া গেল, সেটি দেখে গার্ডদেরই ভয়ে জমে যাওয়ার অবস্থা। হ্রদটির আশেপাশে শত শত মানুষের কঙ্কাল ছড়িয়ে-ছিটিয়েছিল।
গ্রীষ্ম আসার সাথে সাথে দেখা গেল আরো ভয়াবহ দৃশ্য। বরফ গলছে, আর ভেসে উঠছে বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষের কঙ্কালগুলো। আর সেগুলো এসে জমা হতে লাগলো হ্রদের তীরে।
২০০৪ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিবের একদল বিজ্ঞানী সবকিছু পরীক্ষা করে একটি অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন। শতশত তীর্থযাত্রী এক ভয়াবহ শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে মারা গিয়েছিলেন। শিলাবৃষ্টি সাধারণত প্রাণঘাতী হয় না। কিন্তু সেদিনের শিলাগুলোর আকার হয়তো অনেক বড় ছিল। যাত্রীদের কাছে কোনো ছাউনি ছিল না। ফলে তারা করুণ মৃত্যুর মুখোমুখি হন। প্রায় ১২০০ বছর আগের সেই ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আজো রূপকুন্ডের কঙ্কাল হ্রদের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে শত শত কঙ্কাল।
এখনো রুপকুন্ড লেকের কাছে গেলে পর্যটকদের গা শিউরে ওঠে। জায়গাটি এখনো দুর্গম। রুপকুন্ড দেখতে গিয়ে তুষার ঝড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবছরই মানুষকে জীবন দিতে হয়।
ঝধভবৎসাপের দ্বীপ, ইহা দ্যা কুইমাডা, ব্রাজিল
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ ব্রাজিল, দেখার মত অনেক কিছুই রয়েছে। কিন্তু ভুলেও কেউ একটা জায়গায় যান না। সেটা হচ্ছে ব্রাজিলের সাপ দ্বীপে। কারণ হচ্ছে, সাও পাওলো থেকে ৩৩ কিঃমিঃ দূরবর্তী সাগরে অবস্থিত এই দ্বীপ বিষাক্তসাপে ভর্তি। দ্বীপটিতে বাস করে কমপক্ষে ৪ হাজার বিষাক্ত বথরোপস ইনসুলারিস সাপ। এই সাপের আরেক নাম গোল্ডেন ল্যান্সহেড অর্থাৎ ‘সোনালি বর্ষামুখো’ সাপ। সাগরপৃষ্ঠের উ”চতা বৃদ্ধির ফলে ব্রাজিলের মূল ভূখ-ের সাথে দ্বীপটিবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে এই প্রজাতির সাপ সেখানে আটকা পড়ে যায়।
গোল্ডেন ল্যান্সহেড নামের প্রজাতির সাপের বংশবৃদ্ধির হারওখুব বেশি। একটি সাপ একবারেই বা”চার জন্ম দিতে পারে প্রায় ৫০টি। সাপগুলোর প্রধান খাবার উড়ে আসা সামুদ্রিক পাখি। উড়তে উড়তে ক্লান্ত পাখিদেরই খেয়ে বেঁচে আছে তারা।
জরিপে দেখা গেছে এই দ্বীপের প্রত্যেক বর্গমিটারে এইসাপ রয়েছে অন্তত একটি করে। সাপের কামড়ে মানব দেহে একসাথে অনেকগুলো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তার মধ্যে কিডনি অকেজো হওয়া, মাংস কোষের পচন, মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ, পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণের মত মরণঘাতী ব্যাপার রয়েছে।
ঐ দ্বীপে মনুষ্য বসতি নেই, পর্যটকদেরও যাওয়া নিষিদ্ধ। শুধু গবেষণার জন্য অনুমতি নিয়ে যেতে পারেন বিজ্ঞানীরা।
ঊফঁৎইদুর রাজ্য, কার্নি মাতা মন্দির, ভারত
আপনি যদি কার্নি মাতার নাম আগে শুনে না থাকেন, যদি না জেনে থাকেন সেই ইঁদুর-মন্দিরের কথা-তাহলে কোন এক সুন্দর সকালে ভারতের রাজস্থানে বিকানের থেকে ৩০ কিঃমিঃ দক্ষিণে ছোট শহর দেশনোকে গিয়ে আপনি একটা মন্দির দেখবেন-সোনালী আর শ্বেতপাথরে গড়া আরো একটা মোঘল স্থাপত্যের মন্দির থেকে আপনি একে পার্থক্য করতে পারবেন না।
তবে এরপর আপনি যা দেখবেন তা হয়ত আপনার দুঃস্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাবে। ২০,০০০ইঁদুরের এক বিশাল বাহিনী আপনাকে স্বাগত জানাবে সেই মন্দিরে। কার্নি মাতার ইঁদুর-মন্দিরে। এ হচ্ছে বিশ্বের এক মাত্র মন্দির যেখানে পূজার অর্ঘ্য দেয়া ইঁদুরের উদ্দেশ্যে।
ভারতের কর্নি মাতা মন্দির ধর্মীয় এবংদর্শনীয় জায়গাগুলোর মধ্যে একটা। এই মন্দিরের সাথে একইসাথে জড়িয়ে আছে অজস্রমানুষের ভক্তি এবং বিতৃষ্ণা। তার কারণ, মন্দিরটি বোঝাই হয়ে আছে হাজার হাজার বিশালকায় কালো ইঁদুরে।
ঘধৎড়শপৃথিবীর নরক, তুর্কমেনিস্তান
নরক দেখতে কেমন হবে? পৃথিবীতেই হয়তো তার একটি উদাহরণ আছে। তুর্কেমেনিস্তানের কারাকাউম মরুভুমিতে। ৪৫ বছর ধরে মরুভূমির মধ্যে বিশালাকার এলাকা জ্বলছে।
১৯৭১ সালে একদল রুশ বিজ্ঞানী গ্যাসের খনি মনে করে ড্রিলিং মেশিন দিয়ে খনন কাজ শুরু করে মরুভূমির মাঝখানের একটি জায়গায়। বিজ্ঞানীদের কর্মকা-ে ঐ জায়গা পরিণত হয় একটাশুন্যগর্ভে এবং সমস্ত মেশিনপত্র ও ক্যাম্প গিয়ে পড়ে ঐ গর্তে। বিজ্ঞানীরা বিষাক্ত মিথেন গ্যাস ছড়ানোর ভয়ে ওইখানে আগুন ধরিয়েছিলেন। তাতে করে ঐ গর্তের মুখ পরিণত হয় আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে। তাতে যে আগুনের শিখা লকলকিয়ে উঠেছিল সেটা ছিল নারকীয়। বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন ঐ জলন্ত নরকের মুখ হয়তো কয়েকসপ্তাহের মধ্যে নিভে যাবে। কিন্তু নেভে নি।
বর্তমানে ৭০ মিটার চওড়া এবং ৩০ মিটার গভীর এই জলন্ত আগুনের মুখ এতোই তীব্র ভাবে জ্বলে যে স্থানীয়রা এটার নাম দিয়েছেন ‘নরকের দরজা’। দেখে মনে হবে এই অনন্ত আগুন যেন কখনোই থামবে না। কিন্তুতাতে করে দর্শনার্থীদের ভিড় মোটেও কমেনি। তারা সবাই তীব্র উৎসাহে একবারদেখতে চান পৃথিবীতে বাস্তব নরকের এই দরজা।
ঠঁঃঁৎবভূতুড়ে পুতুল দ্বীপ, মেক্সিকো
গবীরপড়-উড়ষষমেক্সিকোর ইসলা ডে লাস মুনেকাস দ্বীপের বাগান ভর্তি হয়ে আছে ঝুলন্ত বীভৎস দুঃস্বপ্নে। এই দুঃস্বপ্নের সূচনা হয়েছিলএক দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনায়। স্থানীয় লোককাহিনী মতে, বেশ কয়েক দশক আগে মেক্সিকোর নিকটবর্তী শচিমিলচো খালে একটি অল্পবয়স্ক মেয়ে ডুবে মরে গিয়েছিল। তার এই অপরিণত মৃত্যুর পরে, প্রচুর পুতুল ভেসে উঠতে শুরু করলো খালের পার্শ্ববর্তী একটি দ্বীপের পাড়ে। দ্বীপের তত্ত্বাবধায়ক ডন জুলিয়ান সান্তানাবেরেরা ডুবে যাওয়া মেয়েটিকে বাঁচাতে না পারার কারণে তীব্র অনুশোচনায় ভুগতে শুরু করলেন। তিনি ভেসে ওঠা পুতুলগুলোকে ঝুলিয়ে রাখতে শুরু করলেন দ্বীপের গাছের ডালপালায়। ‘দ্যা আইল্যান্ড অব ডল’ বা পুতুল দ্বীপ এখন উৎসর্গ করাহয়েছে সেই ডুবে যাওয়া মেয়েটির হারানো আত্মার উৎসর্গে।
পরবর্তী বছরগুলোতে দ্বীপের গাছগুলো ভরে উঠেছে শত শত ভেসে ওঠা পুতুলের টুকরো টাকরা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং ছিন্নমস্তকে। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, এই পুতুলগুলোতে ভর করে আছে মৃত মেয়েটির আত্মা। অনেকে আবার শুনেছেন এদের চাপা ফিসফিসানি আর হাহাকারের শব্দ। এতে করেদর্শকরা চুম্বকের মত আকৃষ্ট হয়েছে দ্বীপের প্রতি। যেন তারা সবাই শুনতে চায়সেই ছোট মেয়েটির ডুবন্ত প্রাণের আর্তি।
হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় করে এই পুতুল দ্বীপে। অনেকে সাথে করে নিয়ে আসে তাদের নিজেদের পুতুল। সেই করুণ সৃতি স্মরণ করে দ্বীপের গাছে ঝুলিয়ে রেখে যায় তাদের প্রিয় পুতুল।