Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

9খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: বিএনপি আগামী দিনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্র¯‘তি নিচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে কাউন্সিল করছে। দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করছে। ভেতরে ভেতরে সরকারকে দিয়ে আগাম নির্বাচন করানোরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিদেশিদের দিয়েও চাপ দেওয়ানোর চেষ্টা করছে। তাদের বিশ্বাস সরকার আগাম একটি নির্বাচন দিবে। আর সেটা না হলেও এবং ২০১৯ সালের আগে সরকার কোনো নির্বাচন না করলেও তারাও চাইছে ২০১৯ সালের নির্বাচন নির্দলীয় সরকার কিংবা সর্বদলীয় সরকারের অধিনে হবে। আর তা না হলেও অন্তত বর্তমান সরকারের অধিনে হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে। কোনভাবেই তারা আগামী নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিবে না। তবে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বিএনপি নিদর্লীয় সরকারের দাবি করেই যাবে। সরকারের উপর চাপও তৈরি করার চেষ্টা করছে। এখনও কোন চেষ্টাই কাজে আসছে না। কারণ সরকার অনঢ় অবস্থানে রয়েছে, বিএনপি যতই দাবি করুক সরকার তা কোনভাবেই করবে না। সেই জন্য বিকল্পও হিসাবে বিএনপি নানা হিসাব নিকাশ করছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানের কাছে খবর রয়েছে, আগামী নির্বাচনের আগেই সরকার তাদেরকে কোন না কোন মামলায় সাজা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে। সেটা হলে তাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রাখবে। সেইক্ষেত্রে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হলে তাদেরকে ছাড়াই আসতে হবে। কিন্তু এই ধরনের পরিস্থিতি হলে ওই সময়ে কে দলের ও নির্বাচনের এই সব দায়িত্ব পালন করবেন সেটা নিয়ে দুইজনের মধ্যেই চিন্তা ভাবনা রয়েছে। দলের কোনো কোনো নেতা মনে করেন এই জন্য যোগ্য উত্তরসূরী হতে পারেন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান। তাকে এখন থেকেই তৈরি করা দরকার। সেই হিসাবে কেউ কেউ বিষয়টি খালেদা জিয়ার সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ট এক বিএনপি নেতা বলেন, তাদের দ্ইুজনকে সরকার নির্বাচনের বাইরে রাখার সব ষড়যন্ত্র করছে। আরো অনেক যোগ্য নেতাকে নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা করা হবে। আবার বিএনপি ভেঙ্গে একটি অংশকেও নির্বাচনে নেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। এখন থেকেই সেই সব পরিকল্পনা সফল করছে সরকার। তবে বিএনপিও বসে নেই তেমন হলে কি করতে হবে সেটাও ঠিক করেছেন খালেদা জিয়া। সেই হিসাবে তিনি তারেক রহমানকেই নিজের বিকল্প ভাবছেন। কিন্তু তারেক রহমানও ঝুঁকির মুখে রয়েছে। বিদেশে থাকলেও তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার জন্য যত রকম কৌশলই আছে সবই করবে সরকার। এমনকি দেশে এনে কারাবন্দীও করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সেই রকম হলে কি হবে এটা নিয়েও তারা দুইজনই চিন্তা করছেন।
ওই নেতা বলেন, আইনীভাবে আমরা লড়াই করে যাবো। শেষ পর্যন্ত কি হবে সেটাতো আর বলতে পারবো না। ন্যায় বিচার পাবো, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারি না। তবে এটা সময়ই বলে দিবে। তেমনি কিছু হলে তাদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে জোবায়দা রহমানকে রাজনীতিতে দেখা যেতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসনও চান তার বৌমাকে আগামী দিনের জন্য রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে। তবে তারেক রহমান এই ব্যাপারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঐক্যমত নন। তিনি মনে করেন,জোবায়দা রহমানের রাজনীতিতে না আসাই ঠিক হবে। কারণ রাজনীতিতে যত সমস্যা, যত সব কাঁদা ছুড়াছুড়ি হয়,একপক্ষ আরেক পক্ষকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলাবলি করে সেটা তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাছাড়াও সে অনেক ভদ্র ও নম্র স্বাভাবের। সাহসী কিন্তু বিনয়ী। রাজনীতিতে আসলে অনেক সমস্যা হবে। আওয়ামী লীগ যেগুলো করছে সেগুলো তার পক্ষে সামাল দেওয়াও কঠিন হবে। তাছাড়াও জোবায়দা রাজনীতিতে আসলে তাদের মেয়ে জাইমা রহমানের জন্যও সমস্যা হবে। কারণ জাইমা বিদেশে তখন একা হয়ে যাবে। কিন্তু তারা কেউ জাইমাকে বিদেশে একা রাখতে রাজি নন। জোবায়দা দেশে আসলে ও রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হলে তাকেও সরকার কারাবন্দী করার উদ্যোগ নিতে পারে।
সূত্র জানায়, তারেক রহমান চান, জোবায়দা রহমান তার পেশার পাশাপাশি মেয়ের জন্য সময় দিবেন। আর তাদের পাশে থেকে তার তীক্ষè ও মেধাদীপ্ত পরামর্শ দিবেন। যেটা এখনও মাঝে মাঝে তিনি সেই কাজটা করছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় থেকে তারেক রহমানকে নানা বিষয়ে তিনি সহায়তা দিয়ে আসছেন। মাঝে মাঝেও পরামর্শও দেন। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে তারেক রহমান কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে তিনি অনেক কিছুই নিজে সামাল দিয়েছেন। এরপর তার শাশুড়ী খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকেই সব ঘরে বাইরে সব সামলে নিতে হয়েছে। ওই সময়ে আইনী লড়াইয়ের বিষয়গুলোও দেখেছেন। তবে রাজনীতি না থাকায় তখন তাকে রাজনীতির মাঠে নামতে হয়নি।
ওই সময়ে তাকে স্বামী ও কন্যাকে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়। এরপর থেকে সেখানেই আছেন। দেশে আসেননি একবারও। তারেক রহমান দেশে আসতে পারবেন না সরকারের তরফ থেকে এমন কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও, গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থাকায় তার ফেরা মাত্র গ্রেপ্তার করা হবে সেই আশঙ্কায় তারা কেউ আসেননি। তিনি দেশে না আসলেও সেখান থেকে রাজনীতি করছেন তারেক রহমান। লন্ডনে তারেক রহমানের চিকিৎসা ও সংসারের সব কিছুই সামলে নিয়ে জোবায়দা। তারেক রহমানকে আবারও সুস্থ করে রাজনীতিতে ফিরিয়ে এনেছেন। পুরোদমে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন তারেক রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসন যখন গত বছর লন্ডনে গেছেন। ওই সময়ে সব সময়ের জন্য পাশে থেকেছেন জোবায়দা রহমান। রাজনৈতিক কর্মসূচীগুলোতে শাশুড়ী ও স্বামীর সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়েও থেকেছেন। ওই সব অনুষ্ঠানোর মাধ্যমে এটা স্পষ্ট ছিল খালেদা ও তারেক এই দুই জনকে সরকার কোন কারণে কারাবন্দী করলে, মাইনাস করার চেষ্টায় সফল হলে দলের হাল ধরার জন্য পরবর্তী কান্ডারী হতে পারেন জোবায়দা রহমান।
এদিকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ট ও লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় যাতায়াত রয়েছে এবং জোবায়দা রহমানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ রয়েছে এমন একজন বিএনপি নেতা বলেন, জোবায়দা রহমান বিচক্ষণ, তীক্ষè বুদ্ধি সম্পন্ন। রাজনীতিতে সরাসরি না থাকলেও রাজনৈতিক পরিবারের পুত্র বধু ও রাজনৈতিক নেতার স্ত্রী হওয়ার সুবাদে অনেক কিছুর সঙ্গে পরিচিতি। অনেক কিছুই জানেন ও বোঝেন। তিনি রাজনীতির সুসময়ের পাশাপাশি কঠিন সময়ও দেখেছেন। সেই পরিস্থিতিও একা মোকাবেলা করেছেন। তার সাহস অসীম। তবে তিনি ধীর ও সুস্থির। সেই হিসাবে রাজনীতিতে আসলে ভাল করবেন। তবে জোবায়দা রহমান রাজনীতিতে আগ্রহী নন। তিনি ব্যস্ত থাকতে চান তার পেশা, তার সংসার, স্বামী, শাশুড়ী, আতœীয় স্বজনদের নিয়ে এবং জনসেবা করেই। সেই জন্য তার রাজনীতিতে আসার কথা বার বার ভাবা হলেও সম্ভাবনা কম। আর সেটা একমাত্র তখই সম্ভব হবে যখন ম্যাডাম তার উপর দায়িত্ব অর্পণ করবেন। সেই রকম কিছু হলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না।
সূত্র জানায়, তারেক রহমানের উত্তরসূরী হিসাবে সরকার ও আওয়ামী লীগ জোবায়দা রহমানকে গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করে। কারণ তারাও এটা জানে যে ওই দুইজন মাইনাস হলেও জোবায়দা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেন। আর এই কারণে তার নামেও দুদকের মামলা রয়েছে। তিনি রাজনীতিতে আসলে তার বিরুদ্ধে দুদকের যে মামলা রয়েছে সেটাও সক্রিয় করা হবে। তখন তার বিরুদ্ধেও মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হবে।