Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

22খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে দলটির নেতাকর্মীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছিলেন, কালের পরিক্রমায় সে দলটিই এখন ধুঁকছে চতুর্মুখি চাপে। অর্থনৈতিক, সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক চাপে অসাড় জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর এত বড় বিপর্যয়ে এর আগে কখনো পড়েনি। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো দলটি সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পৌর নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেনি। ফলে শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব সঙ্কটের পাশপাশি তৃণমূলেও দলটির অবস্থা তথৈবচ।
সূত্র মতে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে বিল উত্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি অধিবেশনে এ নিয়ে সাংসদদের অনেকে ইতোমধ্যে বক্তৃতাও দিয়েছেন।
জামায়াতের বর্তমান ধকলের মূলে রয়েছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দলটির বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকা। ওই অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাঁচটি রায়ে দলটিকে ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন (অপরাধী সংগঠন) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এ অবস্থায় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দলটিকে দ্রুত নিষিদ্ধ করার সুযোগ আছে বলে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে রায় দেন। উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে, যদিও সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে দলটি। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। সেই থেকে জামায়াত দলীয় প্রতীক ছাড়াও দলগতভাবে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমরা চাই জনগণের ইচ্ছানুযায়ী যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হোক। যত দ্রুত জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল হবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ইতোমধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লার। আরো অন্তত এক ডজন নেতা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন। যদিও দণ্ডপ্রাপ্তদের সবাই সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।
মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল শুনানি চলছে দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামীর। এছাড়া আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছেন মীর কাশেম আলী, এ টি এম আজহার, আব্দুস সোবহানসহ অন্যরা।
অন্যদিকে দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত দলের নেতৃত্ব ভেঙে পড়াসহ অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন দলটি।
এদিকে জামায়াতের মূলভিত্তি হিসেবে পরিচিত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামায়াতপন্থি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু হয়েছে।
অস্তিত্ব সঙ্কটে থাকা জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে দলটি এখন চরম নেতৃত্ব সঙ্কটে ভুগছে। কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায় সবখানেই এ সঙ্কট তীব্র। নির্দেশনা পাওয়ার মতো কোনো উল্লেখযোগ্য নেতা খুঁজে পাচ্ছেন না দলের কর্মীরা।
দলটির আমির, নায়েবে আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাই বর্তমানে কারাগারে। আর জেলের বাইরে যেসব নেতা রয়েছেন তারাও নানা মামলায় জড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জামায়াত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বর্তমানে জামায়াতের ২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মাত্র দুজন সদস্য প্রকাশ্যে থাকলেও তারা দলীয় কর্মকাণ্ডে আশানুরূপ সক্রিয় নন। আর ধারাবাহিকভাবে প্রবীণ নেতাদের পদ শূন্য হওয়ার ফলে কমান্ড দেয়ার মতো কেউ থাকছে না।
পাশাপাশি ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত জামায়াতের মগবাজার কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে সব মহানগর, জেলা উপজেলা পর্যায়ে প্রায় সব কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। এ অবস্থায় পুলিশ এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হামলা-মামলার ভয়ে ঘরে-বাইরে কোথাও সভা-সমাবেশ করতে পারছে না দলটি। গোপনে ঘরোয়া সভা করতে গিয়েও বারবার ধরা পড়ছেন দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী ও সমর্থক।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর এক নেতা বলেন, দলের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে প্রবীণ নেতাদের পদ শূন্য হওয়ায় নেতৃত্ব সংকট তৈরি হয়েছে। তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাম্প্রতি কাছে দলের নেতৃত্ব সঙ্কট মানতে রাজি হননি।